আলো লক্ষ্য করে এগিয়ে দেখা পেলাম মন্টু মিয়ার। তিনি একজন ’আম প্রহরী’।
প্রত্যেকটা গাছে গাছে ঝুলছে আম। সাইজে কোনটি ছোট কোনটি বড়। একদিন বাদে মে মাস শেষ হবে। কিন্তু কোনো গাছের আম এখন ভাঙা শুরু হয়নি।
স্থানীয় প্রশাসন গোপালভোগ আম ভাঙার তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছিল ২৫ মে, ক্ষিরসাপাত ২৮ মে। আম পাকে প্রকৃতির নিয়মে। প্রশাসনের নির্ধারিত সময়সীমা মানতে তো সে বাধ্য নয়। প্রশাসন সময় বেঁধে দিলেও গাছের আম পরিপক্ক না হওয়ায় আম পাড়তে পারছেন না আম বিক্রেতারা।
আম প্রহরী মন্টু মিয়া নিয়ে গেলেন তার ‘টঙঘরে’। তিন দিকে খোলা, উপরে টিনের ছাদ দেওয়া একটি শেডে বসার কিংবা শোয়ার জন্য বাঁশ দিয়ে উঁচু মাচা করা হয়েছে। সাত ফুট বাই আট ফুটের টঙঘর। সেখানে তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। ঝড় বৃষ্টিতে আম প্রহরীদের একমাত্র আশ্রয়স্থল এ টঙঘর। যতো বিপর্যয় আসুক এ টঙঘর ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই।
মন্টু মিয়া জানান, বদু মিয়ার এ আম বাগানটি একশ’ বিঘার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের কাছাকাছি সবচেয়ে বড় বাগান এটি।
মন্টু মিয়া বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে আম পাড়া শেষ হলেই পরবর্তী বছরের জন্য বাগান পরিচর্যা শুরু হয়। জানুয়ারি মাস থেকে নিয়মিত বাগানে স্থায়ী হন। কিন্তু রাত হলে বাসায় চলে যান। আম একটু বড় হলে বাগানে আর রাত্রে বাসায় যাওয়া যায় না। বাগানেই থাকতে হয়। বিশেষ করে এপ্রিল মাস থেকে জুন-জুলাই মাসে আম পাড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বাগানেই থাকতে হয়।
তিনি বলেন, আম চোরের তেমন ভয় না থাকলেও বিপদ আসতে তো আর সময় লাগে না। পুরো বাগানে মাত্র পাঁটি টঙঘরে পাঁচজন পাহারাদার। রাত্রে বাগান পাহারা দেওয়া আর দিনে বাগানের যত্ন নেওয়া তাদের কাজ।
বাগানের ইজারাদার আব্দুল বারি জানান, পাঁচজন পাহারাদারসহ ১২জন লোক বাগানে কাজ করেন। থাকা, খাওয়া, রেস্ট নেওয়া সবই হয় বাগানে। থাকা খাওয়া বাদে প্রতিমাস প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
বারি আরও জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক আম বাগানে পুরুষ পাহারাদার না পাওয়ায় নারী পাহারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা রাত জেগে মালিকের আম পাহারা দেন। আর এভাবেই হাজার মানুষের পরিশ্রমের ফল এক সময় পৌঁছে যায় ভোক্তার হাতে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
এমআই/এএটি