ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

বাড়ির উঠোন চিরে সীমান্ত পিলার, ভাগ করেছে ভাইদের সংসার  

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯
বাড়ির উঠোন চিরে সীমান্ত পিলার, ভাগ করেছে ভাইদের সংসার   বাড়ির উঠোনে সীমান্ত পিলার-ছবি-বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): ২শ’ বছরের বৃটিশ শাসনের পর অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু ইংরেজরা ভারত ছেড়ে যাওয়ার আগে অবিভক্ত ভারতকে ভারত এবং পাকিস্তান নামে আলাদা দুই দেশে ভাগ করে যায়। এই দেশ ভাগ শুধু মানচিত্রের উপর এক দাগ নয়, এটি এক গভীর ক্ষত যা পরিবারকে বিভক্ত করেছে, এক হৃদয়কে দুই ভাগে ভাগ করেছে। স্বাধীনতার ৭২ বছর পরও যা এখনও তাজা। 

এই ক্ষত চিহ্নের জীবন্ত ছবি এখনও দেখা যায় ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার কলমচৌড়া থানার অন্তর্গত নগর গ্রামে। এই গ্রামের একটি বাড়ির উঠোনের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমানা।

 দুই ভাইয়ের ঘরসহ সম্পত্তি চলে গিয়েছে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে আর বাকি দুই ভাইয়ের ঘর পড়েছে ভারতীয় ভূখণ্ডে। আর বাড়ির উঠোনের উপর দাঁড়িয়ে আছে সীমান্তের জিরো পয়েন্টের পিলার।  

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পৌঁছানো গেল সীমান্তের জিরো পয়েন্টের বাসিন্দাদের বাড়িতে। একদিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহল চলছে অন্যদিকে দূরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের টহল চলছে। তার মধ্যেই চলছে দৈনন্দিন কাজ।

এই বাড়ির ভারতীয় অংশের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসান উল্লা (১৮) বাংলানিউজকে জানান, দুই চাচার ঘরসহ সম্পত্তি বাংলাদেশের দিকে চলে গেছে। একই বাড়ির মানুষ হওয়া সত্বেও তারা এখন বাংলাদেশের নাগরিক। অন্যদিকে তাদের ঘর ও সম্পত্তি ভারতীয় অংশে হওয়ায় তারা ভারতীয় নাগরিক।  

সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বাড়ি হওয়ায় জীবনে আছে নানা সমস্যা। এমনিতে বাড়ির ভারত ও বাংলাদেশ অংশের লোকজন একে-অন্যের ঘরে অনায়াসে যাওয়া-আসা করতে পারলেও সীমান্তের জিরো পয়েন্ট ছেড়ে মূল ভূখণ্ডে আসতে গেলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র দেখাতে হয়।  

একইভাবে পরিবারের বাংলাদেশের দিকে থাকা সদস্যদেরও বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে হলে বিজিবি সদস্যদের অনুমতি নিতে হয়। বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের অনুমতি নিতে হয়। নিয়ম-কানুনের বেড়াজালের কারণে অন্য জায়গায় থাকা আত্মীয় পরিজনরা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে না।  

এসব নিয়ম-কানুনের কারণে যারা আর্থিকভাবে একটু স্বচ্ছল তারা সীমান্তঘেঁষা এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বাড়ি তৈরি করেছেন। আর এর স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছে জিরো পয়েন্টের আশপাশে পড়ে থাকা ফাঁকা বাড়ি।

এই এলাকারই বাসিন্দা আবুল হোসেন (৫০) বাংলানিউজকে জানান, বিভাজন শুধু বাড়িকেই ভাগ করেনি ভাগ করেছে জমিজমা, সম্পত্তি, পুকুর এমনকি মসজিদও।

তিনি জানান, আগে পুরো এলাকাটির নাম ছিলো নগর গ্রাম। এখনও ভারতীয় অংশের নাম নগর গ্রাম এবং বাংলাদেশের অংশের নাম হায়দ্রাবাদ। প্রায় ২শ’ বছরের পুরাতন মসজিদ বিভাজনকারীদের কলমের দাগে চলে যায় পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ বর্তমানের বাংলাদেশে। আগে সেখানে সমগ্র গ্রামের মানুষ নামাজ আদায় করতে গেলেও এখন ভারতীয়রা আর যান না।  

তার নিজের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি সীমান্তের জিরো পয়েন্টে থাকলেও এখন এই বাড়ি ছেড়ে সীমান্ত থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বাড়ি তৈরি করে চলে গিয়েছেন। যারা যেতে পারেননি তারা রয়ে গিয়েছেন সীমান্তের জিরো পয়েন্টে। তবে তাদের একদিন পূর্বপূরুষের ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে। কারণ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সবদিকে কাঁটাতারের বেড়া হয়ে গিয়েছে, এক সময় এই অংশেও কাঁটাতারের বেড়া হবে। তখন তাদের চলে যেতেই হবে উভয় দেশের সীমান্তনীতি মেনে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
এসসিএন/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।