ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

আনারস রফতানিতে আশার আলো দেখছেন ত্রিপুরার চাষিরা

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৯
 আনারস রফতানিতে আশার আলো দেখছেন ত্রিপুরার চাষিরা আনারস কেটে ঝুড়িতে ভরছেন এক চাষি। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরার প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে রাজ্যে আনারস চাষে চাষিদের আগ্রহ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

সম্প্রতি, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে ত্রিপুরা থেকে প্রায় ২৯০ মেট্রিক টন আনারস রফতানি করা হয়েছে। এসব আনারস ভারতের রাজধানী দিল্লি, কলকাতা, গৌহাটিসহ বাংলাদেশেও রফতানি হয়েছে।

ত্রিপুরার কুইন প্রজাতির আনারসের চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে।

উদ্যান বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যের আনারস রফতানি হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। আনারস চাষিদের বাস্তব অবস্থা জানতে রাজ্যের একাধিক জেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলানিউজ প্রতিনিধি।  

রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মোহনভোগ এলাকায় বেশ কিছু আনারসের বাগান আছে। আগরতলা থেকে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার দূরে প্রায় সাত বিঘা জমিতে আনারস চাষ করছেন এরশাদ মিয়া। উত্তরাধিকার সূত্রে এ আনারস বাগান পেয়েছেন তিনি। আনারস কেমন বিক্রি হচ্ছে- এর উত্তরে তিনি বলেন, আনারস বিক্রি করে বেশ লাভ হচ্ছে। এখন আনারস পাইকারেরা বাগান থেকে ৮, ৯, ১০ রুপি করে একেকটি আনারস কিনে নিচ্ছেন। আগে বাজারে নিয়েও ৫ রুপি পাইকারি দরে আনারস বিক্রি কষ্টকর ছিল।  

এখন কেন আনারসের দাম বেড়েছে- এর উত্তরে এরশাদ মিয়া বলেন, গত বছর থেকে সরকার আনারস রফতানিতে নজর দিয়েছে। ফলে রাজ্য থেকে আনারস বাইরে যাচ্ছে, তাই দামও বেড়েছে, আর লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

তিনি বলেন, একসময় আনারস বাগান নিয়ে উৎসাহ কমে যাচ্ছিল, কিন্তু এখন নতুন করে আরও কিছু আনারস বাগান করবো ভাবছি।  

তার বাগান থেকেও এ বছর কিছু আনারস বাংলাদেশে রফতানির জন্য পাইকাররা নিয়ে গেছে বলেও জানান এ চাষি।  

রাজ্যের পশ্চিম জেলার নন্দননগর এলাকায় রয়েছে বহু আনারস বাগান। এ এলাকার চাষি ভিরু সাহা। তিনি বলেন, এখন আনারস চাষ করে ভালোই লাভ হচ্ছে। যদিও আমার বাগান থেকে সরাসরি রফতানির জন্য আনারস কেনা হয়নি। তবে, রাজ্যের সব জায়গাতেই আনারসের চাহিদা বেড়েছে।  

ভিরু সাহা বলেন, আনারসের প্রাকৃতিক মৌসুম বর্ষাকাল হলেও উদ্যান বিভাগের সহায়তায় সারাবছরই এর উৎপাদন হচ্ছে। তবে, আমি বছরে মাত্র দু’বার আনারস চাষ করি। এখন বর্ষার পাশাপাশি শীত মৌসুমেও আনারস চাষ করছি। এ পদ্ধতির নাম স্টেগারিং। এতে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে বছরের যেকোনো সময় ফলন ঘটানো যায়।  

আনারস কেটে ঝুড়িতে ভরছেন এক চাষি।  ছবি: বাংলানিউজ

তার মতে, রাজ্য সরকার যদি এভাবে সব সময় পাশে থাকে, তাহলে একদিন সব আনারস চাষিরই আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে।

তবে সবাই যে সরকারের উদ্যোগে খুশি, এমনটা নয়। কারণ, সব চাষির বাগান থেকে আনারস রফতানি হচ্ছে না।

নন্দননগর এলাকার এমনই এক আনারস চাষি নরেশ চন্দ্র দেব বলেন, আনারস চাষ করে কোনো মতে বেঁচে আছি। সরকার যদি রাজ্যে আনারস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র করে, তবে চাহিদা আরও বাড়বে ও সব চাষি লাভবান হবে।  

তিনি বলেন, আনারসের পাতা থেকে উন্নতমানের সূতা তৈরি হয়। ছোট ভাই বাবুল চন্দ্র দেব মুম্বাই গিয়ে এ সূতা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। কিন্তু, এখানে সে প্রশিক্ষণ কোনো কাজে আসছে না। কারণ, আনরসের পাতা থেকে সূতা তৈরির জন্য বড় বড় মিলের প্রয়োজন, যা এখনও ত্রিপুরায় গড়ে ওঠেনি। আর, আনারসের পাতা অন্য রাজ্যেও রফতানি হচ্ছে না। তাই রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ, যত দ্রুত সম্ভব, আনারস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ও সূতা তৈরির মিল স্থাপন করা হোক।

এ বিষয়ে ত্রিপুরা সরকারের কৃষি দফতরের উদ্যান বিভাগের সহকারী অধিকর্তা ড. দীপক বৈদ্য বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন আনারস রফতানির কথা কেউ ভাবেনি। গত বছর থেকেই এটা শুরু হয়েছে। তাই, সব চাষির কাছ থেকে আনারস কেনা সম্ভব হয়নি। তবে, আগামী দিনে আনারস চাষিদের যে আরও ভালো দিন আসছে, তা নিশ্চিত।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৯
এসসিএন/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।