ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

উত্তর-পূর্ব ভারত প্লাস্টিকমুক্ত করার প্রচারণায় শিবাঙ্গী

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৯
উত্তর-পূর্ব ভারত প্লাস্টিকমুক্ত করার প্রচারণায় শিবাঙ্গী

আগরতলা (ত্রিপুরা): সবুজে ঘেরা উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য। এই রাজ্যগুলোতে বসবাস করা মানুষদের নিয়ে দেশের মূল ভূখণ্ডের মানুষের নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। সে ধারণা দূর করতে এবং এই অঞ্চলকে প্লাস্টিকের দূষণ থেকে রক্ষা করতে রাজ্যগুলোতে ঘুরে ঘুরে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছেন পাঞ্জাব রাজ্যের মেয়ে শিবাঙ্গী।

প্লাস্টিকের জঞ্জালে একদিকে যেমন ঢেকে যাচ্ছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট, তেমনি অপরদিকে সেই প্লাস্টিক-ই গভীর সমুদ্রের তলদেশে জমে পানিতে মিশে যাচ্ছে। ঘন সবুজের বন, নদী-নালা ও পাহাড়-পর্বতে ঘেরা এবং নানা জীব-বৈচিত্রে ভরা উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য।

সেই সঙ্গে রয়েছে নানা বেশভূষা ও জীবন শৈলী নিয়ে বেঁচে থাকা আলাদা জাতিগোষ্ঠী। এই সব জনজাতির সংস্কৃতি, খাদ্যাভাস, ধর্মাচরণ ও সামাজিক রীতি-নীতিতে রয়েছে নিজস্বতা।

তাই ভারতের মূল ভূখণ্ডে বসবাসকারীদের এই অঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের নিয়ে একদিকে যেমন রয়েছে কৌতুহল, অন্যদিকে রয়েছে অহেতুক ভয়। অনেকের ধারণা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ খুব উগ্র মেজাজের হয়ে থাকেন। আবার অনেকের ভাবনা, তারা অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু এগুলো আসলে ভ্রান্ত ধারণা।

ভারত তথা বিশ্ববাসীর এইসব ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে এবং বিশ্বের অনন্য এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এ অঞ্চলগুলো যাতে প্লাস্টিকের দূষণে নষ্ট না হয়, এ জন্যই এখানকার মানুষদের সচেতন করে তুলতে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের রাজধানী চন্ডিগড় থেকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিবাঙ্গী। গত ৩০ জুন এ উদ্দেশে এসেছেন তিনি। পরিকল্পনা রয়েছে, এক মাস ধরে উত্তর-পূর্ব ভারত ঘুরে দেখে এসব কাজ করবেন।  

পেশায় আইনজীবী শিবাঙ্গী প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা থেকেই প্লাস্টিকমুক্ত বিশ্ব গড়তে চাইছেন। তবে উত্তর-পূর্ব ভারতকেই কেনো বেছে নিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বাংলানিউজকে জানান, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যময় এই অঞ্চলের ভারসাম্য যাতে প্লাস্টিক নষ্ট করতে না পারে এবং এই অঞ্চল সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়- তাই এখানে তার ভ্রমণ।  

ইতোমধ্যে ত্রিপুরাসহ মোট ছয়টি রাজ্য একাই ঘুরেছেন তিনি। বাকি রয়েছে মেঘালয়। এই রাজ্য ঘুরে দেখলেই তার সাত রাজ্য ঘুরে দেখা শেষ হবে। এর জন্য তিনি কোনো বিশেষ গাড়ি বা মোটরবাইক সঙ্গে নেননি। গণযাত্রীবাহী গাড়ি কিংবা মোটরবাইক- যখন যা পাচ্ছেন তাতেই ঘুরছেন।  

এই ছয় রাজ্য ঘুরতে গিয়ে কোথাও তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি উল্লেখ করে শিবাঙ্গী বাংলানিউজকে জানান, শুধু মনিপুর রাজ্যে একটি ঝর্ণা দেখার সময় একদল যুবক তাকে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করেছিল। এছাড়া কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সাহায্য করার মানসিকতা রয়েছে। পাশাপাশি তাদের আতিথেয়তাও দেখার মতো।  

কিভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বচেতনতা সৃষ্টি করছেন? স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করছেন কি? বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, প্রতিটি রাজ্যের পর্যটন স্থানগুলো ঘুরে দেখছেন এবং যেখানেই প্লাস্টিকের আবর্জনা দেখছেন, সেখানেই সাধারণ মানুষদের এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে বলছেন। এছাড়া নাগাল্যান্ড রাজ্যে একটি কলেজে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ‘পরিবেশ রক্ষা’ বিষয়ের ওপর ক্লাসও নিয়েছেন।

উত্তর-পূর্ব ভারত ভ্রমণ শেষে তার পরিকল্পনা কি? এই রাজ্যগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়ে কি কোনো বই লেখার পরিকল্পনা আছে কিনা? বাংলানিউজের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, যেখানেই যাচ্ছেন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশছেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গেই তার বিবরণ দিচ্ছেন। আপাতত ভ্রমণ শেষে নিজের কাজে যোগ দেবেন। এরপর বাকিটা চিন্তা করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৯
এসসিএন/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।