ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

ত্রিপুরায় আনারস চাষের ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্ট পদ্ধতি উদ্ভাবন

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২০
ত্রিপুরায় আনারস চাষের ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্ট পদ্ধতি উদ্ভাবন আইসিএআর ত্রিপুরা সেন্টার অপেক্ষাকৃত বড় আকারের এবং দীর্ঘদিন পচনরোধী আনারস চাষের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে।

আগরতলা (ত্রিপুরা): ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর এগ্রিকালচার রিসার্চ (আইসিএআর) ত্রিপুরা সেন্টার অপেক্ষাকৃত বড় আকারের এবং দীর্ঘদিন পচনরোধী আনারস চাষের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্ট পাইনাপেল প্রোডাকশন টেকনোলজি’।

আগরতলার পার্শ্ববর্তী লেম্বুছড়া এলাকায় অবস্থিত আইসিএআর ত্রিপুরা সেন্টারের উদ্যান শাখার গবেষকরা আনারস চাষের এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। উদ্যান শাখার সিনিয়র গবেষক ড. বিশ্বজীৎ দাস প্রথমবারের মত এবিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তিনি জানান, মূলত দু’টি বিষয় চিন্তা করে তারা চাষের এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এগুলো হচ্ছে- ত্রিপুরা রাজ্যে আনারস চাষ হয়ে আসছে প্রথাগত পদ্ধতিতে। এর ফলে আনারস উৎপাদনের পরিমাণ তুলনামূলক যেমন কম হয়, তেমনই আনারসের আকারও অপেক্ষাকৃত ছোট হয় এবং দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ত্রিপুরার কুইন প্রজাতির আনারস ভৌগলিক পরিচিতি সনদ (জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ) পেয়েছে। ফলে বিশ্বজুড়ে ত্রিপুরায় উৎপাদিত কুইন আনারসের চাহিদা তৈরি হচ্ছে। ত্রিপুরা সরকার ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশেও তা রপ্তানি করছে। দূর দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হলো পচনশীলতা। তাই আনারস বাগান থেকে তোলার পর যাতে তাড়াতাড়ি নষ্ট না হয় এ বিষয়টি চিন্তা করা হয়েছে।

ড. বিশ্বজীৎ দাস আরও জানান, ত্রিপুরায় প্রথাগত ভাবে আনারস চাষ করা হচ্ছে। ফলে এলোমেলোভাবে চারা জন্ম নেয়। একসময় বাগানের সঠিক পরিচর্যা করা সম্ভব হয় না এবং উৎপাদন কম হয়। কুইন আনারস গড়ে ছয়শ’ গ্রাম ওজনের হয় এবং কিউই আনারস সাতশ’ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ওজনের হয়। কিন্তু ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্ট পদ্ধতিতে চাষ করলে কুইন আনারস এক কেজি থেকে ১২শ’ গ্রাম এবং কিউই আনারস দেড় কেজি এমনকি দুই কেজি ওজনের পর্যন্ত হচ্ছে। ফলে প্রথাগত পদ্ধতির তুলনায় সমপরিমাণ জমিতে দ্বিগুণ বা তার বেশি লাভবান হবেন চাষিরা।

আইসিএআর ত্রিপুরা সেন্টার অপেক্ষাকৃত বড় আকারের এবং দীর্ঘদিন পচনরোধী আনারস চাষের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্ট পাইনাপেল প্রোডাকশন টেকনোলজিতে চাষিরা অর্গানিক অথবা রাসায়নিক উভয় পদ্ধতিতে চাষ করতে পারবেন। যদি কোনো চাষি অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করতে চান তবে জমি তৈরি থেকে শুরু করে ফল তোলা পর্যন্ত জৈব সার ও বাইলাই নাশক ব্যবহার করবেন। একইভাবে রাসায়নিক পদ্ধতিতেও চাষ সম্ভব। নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে গাছ লাগানোর ফলে বৃদ্ধি ও বিকাশ সঠিক হয়। তাই ফলনও ভালো হয়। চাষিরা বাগানে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে গাছে খাবার দিতে পারেন। তাছাড়া শুকনো মৌসুমে গাছে পানিও তরল সার দিলে ফলন ভালো হয়।

তিনি জানান, আনারস বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হচ্ছে ফলের পচন। ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্ট পাইনাপেল প্রোডাকসনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আনারসের দ্রুত পচন রোধ করা। এভাবে চাষে আনারসের সেলের গঠন মজবুত হয় এবং বেশিদিন গুণমান বজায় থাকে। ফলে ত্রিপুরা রাজ্যে থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গুণমান বজা রেখে আনারস রপ্তানি সম্ভব।

ত্রিপুরা সরকারের কৃষি দফতরের অন্তর্গত উদ্যান এবং ভূমি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা এ চাষের পদ্ধতি দেখে গেছেন। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আইসিএআর এবং ত্রিপুরা সরকারের কৃষি দফতরের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এরপর দফতর থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২০
এসসিএন/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।