ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

টিলায় সবজিচাষের বিশেষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করলো আইসিএআর

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২১
টিলায় সবজিচাষের বিশেষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করলো আইসিএআর লাউয়ের মাচা। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা: দ্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার রিসার্চ (আইসিএআর) ত্রিপুরা সেন্টারের উদ্যান বিভাগ সবজি চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভেজিটেবল বেইজড মাল্টিস্টোরেড ক্রপিং সিস্টেম’।



ত্রিপুরা রাজ্যের বেশির ভাগ অংশে টিলাভূমি। এই জমির মাটির রঙ লাল হয়, উর্বরতাও তুলনামূলকভাবে কম হয়। অপেক্ষাকৃত কম উর্বর এই মাটিতেও যাতে সবজিচাষ করা যায়। এর জন্য ভারত সরকারের আইসিএআরের ত্রিপুরা সেন্টারের উদ্যান বিভাগ গবেষণামূলকভাবে কাজ করছে।  এই বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিস্ট ড. বিশ্বজিৎ দাস বাংলানিউজকে বলেন, রাজ্যের বেশির ভাগ অংশ টিলার জমিতে সবজিচাষ প্রায় হয় না বলেই চলে। এই জমিকে কি করে কাজে লাগানো যায়। তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা সবজিচাষের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবিত করেছেন। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভেজিটেবল বেইজড মাল্টিস্টোরেড ক্রপিং সিস্টেম’। এই পদ্ধতিতে টিলার পাশের ঢালু জমিকে ধাপে ধাপে কেটে নেওয়া হয়। ধাপগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সবজির বীজ রোপণ হয়। এক একটি ধাপেও আবার সবজির ভিন্নতা ও বাড়ানোর বৈশিষ্ট অনুসারে একাধিক ফসল চাষ করা হচ্ছে। যেমন জমির ওপর বাঁশের মাচা করে এর মধ্যে শীতের মৌসুমে লাউ ও শিম চাষ করা হয়। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে এই মাচাতে ঝিঙ্গে ও কাকরোল চাষ করা হয়। লতানো সবজির মাচার উচ্চতা এমনভাবে রাখা হয় যাতে মাচার নিচের জমিতেও সূর্য্যের আলো ভালোভাবে ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছতে পারে। এজন্য প্রায় ছয় ফিট উঁচুতে মাচা তৈরি করা হয়। মাচার নিচে পর্যাপ্ত পরিমানে সূযালোক পৌঁছানোয় আলু, মটরশুটি, বিন, ধনেপাতা, কাচা লঙ্কাসহ অন্যান্য সবজি চাষ করা সম্ভব হয়। কিন্তু সাধারণত দেখা যায় চাষিরা তেমন উঁচু করে মাচা তৈরি করেন না। মাচার নিচে বিশাল পরিমাণ জমি পতিত থাকে। ফলে কৃষকদের আয় কম হয়। কিন্তু এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে খুব সহজেই চাষিদের আয় দ্বিগুণের বেশি হয়। এছাড়াও টিলা জমির মাটি কাটার পরও পাশের দিকে যে আরো সামান্য একটু ঢালু জমি থাকে তাতে শসা, তরমুজের মত ফল চাষ করেও আয় করা সম্ভব।  

ড. বিশ্বজিৎ দাস আরও জানান, তারা গত তিন বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতিতে সবজিচাষ করেছেন এবং সফল হয়েছেন। তাই তারা আগামীদিনে রাজ্যের চাষিরা বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের চাষিরা যাতে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে অধিক লাভবান হন।  

ভারত সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ত্রিপুরার কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্যোগ বিশেষ ভূমিকা রাখবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

আগরতলার পার্শ্ববর্তী লেম্বুছড়া এলাকার আইসিএআর ত্রিপুরা সেন্টারের সবজি উৎপাদনের ‘ভেজিটেবল বেইজড মাল্টিস্টোরেড ক্রপিং সিস্টেম’ প্লটের দেখা গেলো মাচার ওপর একদিকে শীতের সবজি যেমন শিম, লাউ প্রচুর পরিমাণে ফলবে, এমনকি গ্রীষ্মকালীন সবজি চালকুমড়া ইতোমধ্যে চাষ শুরু হয়ে গেছে এবং ধরছে। পাশাপাশি ঝিঙ্গা ও কাকরোল বেড়ে উঠছে। মাচার নিজে জমিতে মটরশুটি, বিনসহ অন্যান্য সবজির ফলন হচ্ছে। সেসঙ্গে পাশের ঢালে শসা ও তরমুজ গাছ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২১
এসসিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।