রিয়াদ: অবশেষে জেদ্দা থেকে সরানো হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিচালন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সৌদি আরব কান্ট্রি ম্যানেজার আবু তাহেরকে।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) বিমানের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি বলছে, মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) আবু তাহের শেষ অফিস করবেন। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) তিনি জেদ্দা ত্যাগ করবেন।
এর আগে রোববার (১৩ ডিসেম্বর) আবু তাহেরও এক বিদায় অনুষ্ঠানে তিনি নিজেও জেদ্দা ছাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আবু তাহেরের বিরুদ্ধে জিএসএ এলাফ ট্রাভেলসের সঙ্গে যোগসাজসে টিকিট বিক্রি, জ্বালানি তেল বিক্রি, যন্ত্রপাতি কেনা, যাত্রীদের দেওয়া কর ও এক্সেস ব্যাগেজের অর্থ না দেওয়া, ভুয়া বিল ভাউচার ও ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় বিমানের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য এসএম জাকারিয়ার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি জেদ্দা অফিস সরেজমিন তদন্তে কান্ট্রি ম্যানেজার আবু তাহের ও জিএসএ এলাফ এভিয়েশনের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা লোপাট ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পায়।
কিন্তু বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরও চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার আত্মীয় হওয়ায় আবু তাহেরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এলাফ এভিয়েশনের সঙ্গে যোগসাজশে আবু তাহের নামে-বেনামে ভুয়া বিল-ভাউচার করে গত দুই বছরে ৫০ কোটি টাকার বেশি লোপাট করেছেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ম্যানেজমেন্টের অনুমোদন ছাড়াই সৌদি আরবে চিকিৎসা না করিয়ে ব্যাংককে গিয়ে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন।
নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের ঘটনায় বিমানের প্রধান মেডিকেল অফিসারের ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু আবু তাহের কোনো ছাড়পত্র নেননি, এমনকি ছুটি না নিয়ে ব্যাংকক গিয়ে দুই মাসের বেশি অবস্থান করেছেন তিনি।
বিমানের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই তিনি স্থানীয় জিএসএ এলাফ এভিয়েশনের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল নিয়ে ব্যাংকক গেছেন।
এ অভিযোগে বিমানের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদ তার বিল আটকে দিলেও প্রভাব খাটিয়ে এলাফ এভিয়েশনের কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে নেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, জিএসএ এলাফকে বিভিন্ন অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে আবু তাহের প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা মাসোহারা নিতেন।
এলাফের সঙ্গে চুক্তিকালীন সিকিউরিটি মানি হিসেবে বিমানের ফান্ডে ১৫ মিলিয়ন রিয়াল অর্থাৎ ৩০ কোটি টাকা জামানত রাখা হয়েছিল।
বিমান এ টাকা ব্যাংকে এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) করে মাসে গড়ে ৩০ লাখ টাকা আয় করতো। কিন্তু আবু তাহের বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই গোপনে সাবেক এমডির সঙ্গে যোগসাজশে জামানতের টাকা ১৫ মিলিয়ন থেকে ১০ মিলিয়নে নিয়ে আসেন।
এ ঘটনায় বছরে বিমান প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এছাড়া মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে তিনি ২০১৪ সালে হজ শেষে মক্কা ও মদিনায় হাজিদের মালামাল সংগ্রহের জন্য একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেন।
এ সময় ট্রাক প্রতি ভাড়া হিসেবে ১৬০০ সৌদি রিয়াল করে বিল দিয়েছেন তিনি। এ খাতে বিমান প্রায় ৫ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে বলে সূত্র জানায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
এমএ