জেদ্দা থেকে: বাংলাদেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমৃদ্ধি ও লভ্যাংশে অংশীদার হতে সৌদি বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (৫ জুন) স্থানীয় সময় সকালে জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে কোটি মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন আনার আশাবাদ ব্যক্ত করে সৌদি বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমাদের দেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমৃদ্ধি এবং লভ্যাংশের অংশীদার হতে সৌদি বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানাচ্ছি’।
বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘সবচেয়ে উদার’ বিনিয়োগ নীতির দেশ উল্লেখ করে উদীয়মান শিল্প খাত বস্ত্র, চামড়া শিল্প, পাট, সিরামিক, পেট্রো-কেমিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যালস, শিপ বিল্ডিং, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিকস, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও সমুদ্র সম্পদসহ বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আইন করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা প্রদান, ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর রেয়াত, অনিয়ন্ত্রিত প্রত্যাহার নীতি এবং লভ্যাংশ ও পুঁজি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
এসময় বাংলাদেশে তরুণ, পরিশ্রমী এবং তুলনামূলক স্বল্প বেতনে প্রশিক্ষিত জনশক্তি পাওয়া, স্বল্প খরচে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশ সুবিধাসহ বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দেশের বিভিন্নস্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একাধিক হাইটেক পার্ক নির্মাণ এবং এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ-এর বিষয়ে জানানো হয় ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ এখন যন্ত্রনির্ভর, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বৈচিত্র্য এবং মূল্য সংযোজনের দেশে পরিণত হচ্ছে, যোগ করেন শেষ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি ও এ সংশ্লিষ্ট শিল্পও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সফটওয়ার ও আইটি সার্ভিসে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম গন্তব্য, বাংলাদেশে তৈরি হাজারো অ্যাপ্লিকেশন আইওএস এবং অ্যানড্রয়েড ফোনে যাচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার তরুণ আইটি গ্র্যাজুয়েটস এই সেক্টরে যোগ দিচ্ছে। ক্রয় ক্ষমতার সক্ষমতার (পিপিপি) দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আমাদের অর্থনীতি বর্তমান বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির একটি।
“গোল্ডম্যান স্যাক্স বাংলাদেশকে ‘নেক্সট ইলাভেন’ এবং জে পি মরগ্যান ‘ইমার্জিং ফাইভ’ অর্থনীতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে নেওয়ার পরে আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশের উপরে, রফতানি আয় বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রেমিটেন্স দ্বিগুণ হয়ে এখন ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদাশিক মুদ্রার রির্জাভ ২৯ বিলিয়ন ডলার”।
জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ’র ভাইস চেয়ারম্যান মাজেন ব্যাটার্জি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির উপর জোর দিয়ে বলেন, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বাড়ানো দরকার। এটা মূলত প্রাইভেট সেক্টরে।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ব্যবসার যে আকার, এটা যথেষ্ট না। এটা বাড়াতে হবে। এজন্য দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে, সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
বিনিয়োগের সম্ভবনা খুঁজে দেখতে জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ (জেসিসিআই) থেকে ব্যবসায়ীদের একটা টিম গঠন করে বাংলাদেশে পাঠানোর কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে প্রকৌশলী, স্থপতির মতো দক্ষ মানবসম্পদ রফতনির লক্ষ্যে সৌদি আরবভিত্তিক বাওয়ানি গ্রুপ এবং বাংলাদেশের সেনা কল্যাণ সংস্থার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এতে সই করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও বাওয়ানি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক ফাকের এ আল-শাওয়াফ।
আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমেদসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৬/ আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা.
এমইউএম/এটি