চলনবিল (সিংড়া), বিল হালতি, নাটোর থেকে ফিরে: বিলে চরা হাঁসের ডিম- মাংসের খ্যাতি দেশজুড়ে। বর্ষার পানি আর শীতের ধান- দু’য়ে মিলে সোনায় সোহাগা হয়ে ওঠে বিলাঞ্চলের হাঁস।
সেই ডিম-মাংসের হিসাব কষে এ অঞ্চলের অনেক খামারি হয়েছেন লাখপতি। ক’দিনের চলনবিলাঞ্চল পরিভ্রমণে বিল, পুকুর, খাল, বসতবাড়ি সবখানেই দেখা মিলেছে হাঁসের। বিল হালতির খোলাবাড়িয়া, একডালা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে ঝাঁক ঝাঁক হাঁস। রাজহাঁস, ক্যাম্পবেল হাঁস, পাতিহাঁসের পাশাপাশি রয়েছে চীনা হাঁসও।
গ্রামের হাঁসগুলোর এখন বিল-পুকুরের খাবারের পাশাপাশি খেতে দেওয়া হচ্ছে তোলা খাবার। সকাল হতেই বাড়ির সামান্য খাবার খেয়ে পুকুরজুড়ে ছোট ছোট ঢেউ তুলে শামুকের খোঁজে নেমে পড়ছে তারা। পেট পুরলে খেলছে জলকেলি অথবা পাড়ে বসে নিচ্ছে অলস বিশ্রাম। তবে চলনবিলের সাতপুকুরিয়া গিয়ে দেখা মিললো ভিন্ন চিত্র।
বালুয়া বাসুয়া থেকে রওয়ানা করে চলনবিল সিংড়া অংশের বুক চিরে যাওয়া রাস্তা ধরে যেতে চোখ আটকে গেলো হঠাৎ। একঝাঁক হাঁস বিলের কুনির ঘোলা পানি আরও ঘোলা করে চরছে। কচুরিপানা ঠেলে পানিতে গলা ডুবিয়ে এক ছন্দে খাবারের সন্ধান করছিলো তারা। ভ্যান থেকে নেমে পাশে যেতেই লাঠি হাতে কাছে এলেন আসাদুল নামে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি।
কথা বলে জানা গেলো তিনিই হাঁসগুলোর মালিক। বিলে খাওয়াতে এনেছেন। দলে রয়েছে ১৭৫টি হাঁস। সবগুলো গলা লম্বা ক্যাম্পবেল।
হাঁস পালন সম্পর্কে জানতে চাইলে আসাদুল বলেন, ১৭৫ডা হাঁস আ’ছে আমার। পতিদিন ১২৫-৩০ডার মুতোন ডিম আসে। পতিডা ডিম বিক্কিরি হয় ৮-৯ টাকাত। আর এ হাঁসগুলান ঠিকমুতো খাবার পা’লে টানা চার-পাঁচ মাস ডিম দেয়।
তবে এক দেড় বছরের বেশি হাঁসগুলো রাখেন না তিনি। বছর ঘুরতেই কেনেন নতুন হাঁস। এতে ডিম পাওয়া যায় বেশি। আগের হাঁসগুলো বিক্রি করে দেন।
বিলে চরানো সম্পর্কে তিনি বলেন, বোর্ষা থে’কে শীতের শেষ পর্যন্ত মুনে করেন হাঁসেক বাসাত রা’কে খাবার দিবার হয়। তকন কুনো খরচ নাই। বিলের মাচ, শামুক, পোকা খায়। আর শীতে ধানখেতে পড়া ধান খায়ে থাকে। তকন ডিমও বেশি দেয়, হাঁসের স্বাস্তও ভালো হয়।
বছরের আয়-রোজগার সম্পর্কে জানতে চাইলে আসাদুল বলেন, পতি মৌসুমে ২শ’ হাঁস পালবার পারলে সব খরচ বাদ দি’য়ে মাসে মুনে করেন ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ থাকে। অ্যা’র মদ্যে বোর্ষা থেকে শীত পর্যন্ত ইনকাম বেশি থাকে। অন্য সুময় কিছুটা টান যায়।
সারা বছর ডিম বিক্রি করে লাভ তো করেনই, আর হাঁসগুলো বিক্রি করেও পান ৪০-৫০ হাজার টাকা।
আসাদুলের মতো আরও অনেক খামারিকে এভাবে স্বাবলম্বী করেছে চলনবিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
এসএস/এএ/এটি/জেডএম
** হালতি বিলে দাগ কেটে ক্রিকেট, ধুমছে খেলা (ভিডিওসহ)
** ভাসমান স্কুলে হাতেখড়ি, দ্বীপস্কুলে পড়াশোনা
** দত্তপাড়ার মিষ্টি পান ঠোঁট রাঙাচ্ছে সৌদিতে
** একফসলি জমিতেই ভাত-কাপড়
** লাল ইটের দ্বীপগ্রাম (ভিডিওসহ)
** চলনবিলের শুটকিতে নারীর হাতের জাদু
** ‘পাকিস্তানিরাও সালাম দিতে বাধ্য হতো’
** মহিষের পিঠে নাটোর!
** চাঁপাইয়ের কালাই রুটিতে বুঁদ নাটোর
** উষ্ণতম লালপুরে শীতে কাবু পশু-পাখিও!
** পানি নেই মিনি কক্সবাজারে!
** টিনের চালে বৃষ্টি নুপুর (অডিওসহ)
** চলনবিলের রোদচকচকে মাছ শিকার (ভিডিওসহ)
** ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা
** বৃষ্টিতে কনকনে শীত, প্যান্ট-লুঙ্গি একসঙ্গে!
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট
** ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ)
** শহীদ সাগরে আজও রক্তের চোরা স্রোত
** ‘অলৌকিক’ কুয়া, বট ও নারিকেল গাছের গল্প
** মানবতার ভাববিশ্বে পরিভ্রমণ
** সুধীরের সন্দেশ-ছানার জিলাপির টানে
** নতুন বইয়ে নতুন উদ্যম