ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

কেমন আছে লালবাগ কেল্লা

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬
কেমন আছে লালবাগ কেল্লা ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: চোখ বরাবর ‘প্রাইভেট পড়াতে চাই’। ডানে ‘টু-লেট, সুইটহার্ট (মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমার পোস্টার)।

বাঁয়ে কাঁধ বাঁকা করলে নজরে পড়বে, ইংরেজি শিখুন, পড়াতে চাই, টিউটর দিচ্ছিসহ অসংখ্য ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন।
lalbag_bg
আর মাথা উঁচু করে তাকালেই মিলবে প্রবেশ ফি সংক্রান্ত দু’টি নোটিশ। এর একটি ইংরেজিতে, অন্যটি বাংলায় লেখা। ইংরেজিটি এক বর্গফুট আর বাংলাটি হবে দেড় বর্গফুট চওড়া। প্রথম দেখলে যে কারোরই মনে হবে, স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রবেশ ফি সংক্রান্ত নোটিশ দু’টি খানিকটা উপরে টানাতে হয়েছে।
 
ছিঁড়ে ফেলার পর দেয়াল আঁকড়ে ধরে থাকা ছেঁড়া অংশগুলো জানান দিচ্ছে, অনেকদিন ধরেই জায়গাটি বিজ্ঞাপনের ডিসপ্লে বোর্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ঐতিহাসিক নান্দনিক নির্মাণ শৈলী ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশের কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আগ্রহের অগ্রভাগে থাকে এর নাম। অনেকে আবার আসেন গবেষণার জন্য। এক সময়ে টাকার গায়েও ঠাঁই হয়েছিল স্থাপনাটির। সেই লালবাগ কেল্লা কেমন আছে। পর্যটন বর্ষ-২০১৬ এর জন্য কতটুকু প্রস্তুত জানতেই বাংলানিউজের এ আয়োজন।
 
টিকিট কাউন্টার যেমন ছেয়ে গেছে ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনে, তেমনি মূল ফটক দখল করে রেখেছে বেশ কিছু হকার। প্রবেশ পথের বামে ৩টি চা ও চিপসের দোকান, ডানে আচার, ঝালমুড়ির পসরা।

মূল ফটক যতই শ্রীহীন হোক, টিকিট কেটে ভেতরে গেলে মন পুলকিত করতে সক্ষম। চারিদিকে অসংখ্য ফুলের বাগান। তাতে শোভা পাচ্ছে দেশি-বিদেশি বাহারি রঙের ফুল। পুরনো স্থাপনাগুলোকে যেভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে তেমনি মুঘলদের ফুলের বাগানের স্টাইলটাও ধরে রাখা হয়েছে এখানে- দর্শনার্থীরা যাতে মুঘল বাগান সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে সে জন্যই এমন প্রচেষ্টা বলে জানালেন সুপারভাইজার মঈন উদ্দিন মণ্ডল।

বাংলানিউজকে তিনি জানান, মুঘলদের বাগানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিলো, তা হচ্ছে ওয়ার্কওয়ের পাশদিয়ে থাকবে স্থায়ী গাছ, আর তারপর থাকবে ফুলের বেডগুলো। আর ভবনগুলো হবে একই সরল রেখার উপর।
 
দরবার হল থেকে সোজা পশ্চিমে অবস্থিত মসজিদ। পূর্ব-পশ্চিমে সরল রেখা অঙ্কন করা হলে দেখা যাবে ঠিক কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পরি বিবির মাজার (শায়েস্তা খাঁ’র কন্যা)। আবার প্রধান ফটক থেকে ব্যারাক পর্যন্ত (উত্তর-দক্ষিণে) সরল রেখা টানলেও ঠিক মাঝামাঝি পড়বে মাজারটি। অর্থাৎ মাজারটি পুরো কেল্লার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত।
 
কেল্লার ভেতরটা পরিপাটি করে সাজানো। ফুলের রঙ বিবর্ণ হতে ধরলেই আলতো করে টুকে নিচ্ছেন মালিরা। আবার বাতাসে ঝরে যাওয়া পাপড়ি হাত দিয়ে খুঁটতে দেখা গেলো অনেককে।
 
প্রবেশ পথের প্রথমে ডানে পড়বে গাঁদা ফুলের বেড। চারিদিকে কংক্রিটের ওয়ার্কওয়ে, তার পাশ দিয়ে ঝাউগাছ (যেগুলো সারা বছরই শোভাবর্ধন করে)। মাঠের ঘাঁস এমনভাবে ছাটানো যে দেখলে মনে হবে, যেনো একটু আগে কোন চৌকস নরসুন্দর ছেঁটে দিয়ে গেছে।
 
আর হাইব্রিড গাঁদাগুলোকে নয়নাভিরাম বলা যেতে পারে নি:সন্দেহে। একটু বাদামি রূপ ধারণ করা ফুলগুলো খুঁটে খুঁটে তুলছিলেন একজন মালি। গাঁদা’র বাগান মাড়িয়ে এগিয়ে গেলে সামনে পড়বে পরিবিবির মাজার। দেখতে অনেকটাই তাজমহলের আদলে নির্মিত।
 
মাজারটির চারদিকে দরজা রয়েছে। ঠিক মাঝে রয়েছে শায়েস্তা খাঁ’র মেয়ে পরি বিবির সমাধি। আঠারশ’ শতকের শেষ দিকে যাকে এখানে সামাহিত করা হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, ১৩ বছর বয়সে মারা যান পরি বিবি। এ কারণে মাজারের ছাদে ১৩টি খাঁজ রয়েছে। সমাধিসৌধটিকে কেন্দ্র করে গড়া ঐতিহাসিক স্থাপনাটিতে রয়েছে ৮টি কক্ষ। একটি কক্ষে প্রবেশ করলে সমাধিকে কেন্দ্র করে চক্কর দেওয়া যায়।


দক্ষিণ-পূর্ব কোণের কক্ষটিতে রয়েছে আরও একটি কবর। যেখানে শায়িত রয়েছেন সামশাদ বানু। যিনি শায়েস্তা খাঁ’র পালিত কন্যা বলে জনশ্রুতি রয়েছে। মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও টালির ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায় এখানে- যা উপমহাদেশে আর কোন স্থাপনাতে নেই বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
 
মাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে শোভা পাচ্ছে বিশাল ’সিলভিয়া’র বাগান। লালময় করে তুলেছে মুঘল আমলের এই স্থাপনাকে। সিলভিয়ার লালময়কে দিয়ে লালবাগকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান বাগানের সুপারভাইজার মঈন উদ্দিন মণ্ডল। বলা যায়, পর্যটন বর্ষের জন্যই এই বাড়তি আয়োজন।
 
সিলভিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্বকোণে রয়েছে গোলাপের বিশাল বাগান। আবার বিশাল গোলাপের বাগান বললেও ভুল হয় না। কারণ একেকটি গোলাপ দুই হাতের তালু ছাপিয়ে পড়ে। খোলামেলা জায়গা পেয়ে ফুলগুলো যেনো নিজেকে উজাড় করে মেলে ধরেছে এখানে।
 
গোলাপের পাতার তেজ ও বাহারি রঙের ফুল উপভোগ করার মতো। বাগানটিতে প্রায় পঞ্চাশ রকমের গোলাপ ফুল রয়েছে। আবার একটি গাছেই সর্বোচ্চ দশ রকমের ফুল রয়েছে বলে জানালেন মালি আব্দুর রব। ফুলগুলো যেমন দর্শনার্থীর প্রাণ জুড়াচ্ছে, তেমনি ফুল গাছগুলোরও যত্ন-আত্তির কমতি নেই।
 
মালি আনোয়ার হোসেন দেখাশুনা করেন গোলাপ বাগান। ঝুড়ি হাতে ঘুরে ঘুরে ঝরে পড়া পাপড়িগুলো খুটছিলেন। আবার য়ৌবনহীনা ফুলগুলো আলতো করে কেটে দিচ্ছেলেন। দেখে মনে হচ্ছিলো, তার বুঝি খুবই কষ্ট হচ্ছে গাছগুলোকে ব্যথা দিতে।
 
আব্দুর রব বললেন, নিজের সন্তানের মতো দেখি গাছগুলোকে। কাটতে তো একটু কষ্ট হয়ই। কাটার সময় ঝাঁকুনি খেলে অন্যফুলের পাপড়ি ঝরে যেতে পারে। সে কারণে খুব সাবধানে কাটতে হয়।

দক্ষিণাংশে সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর বিদ্যমান। প্রাচীরটির সঙ্গে এক সময় গলাগলি ছিল বুড়িগঙ্গার। সীমানা প্রাচীরে থাকা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তারই সাক্ষ্য বহন করছে। শিল্পীর তুলিতে আঁকা কেল্লার পেইনটিং সেই বিশ্বাস দৃঢ় ভিতের উপর স্থাপন করে। এখন আর বুড়িগঙ্গার সঙ্গে মিতালী নেই। কেল্লাকে ফেলে অনেক দূরে সরে গেছে অভিমানী বুড়িগঙ্গা। আর সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।
 
সীমানা প্রাচীরের সঙ্গে রয়েছে দু’টি গোপন সুড়ঙ্গ। পূর্ব-দক্ষিণ কোণে সুড়ঙ্গটি নিচে নেমে গেছে। এই সুড়ঙ্গ যে এক সময় অনেক দূর বিস্তৃত ছিল তা অনুমাণ করা যায় খুব সহজেই। জনশ্রুতি রয়েছে, এই সুড়ঙ্গটি দিযে বুড়িগঙ্গায় যাওয়া যেতো। জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য গোপন এই সুড়ঙ্গটি তৈরি করেছিলেন শায়েস্তা খাঁ। কিন্তু মাটি চাপা পড়ে গেছে সেই পথটি। ২০০৩ সালে একবার খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও থেমে গেছে সেই প্রক্রিয়া।
 
দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ রয়েছে বুড়িগঙ্গা ঘেঁষা প্রাচীরের ঠিক মাঝামাঝি পয়েন্টে। এখানেই রয়েছে একটি আন্ডার গ্রাউন্ড ওয়াচ টাওয়ার যা উপর থেকে দৃশ্যমান নয়। ভেতরে অনেকটা বাঙ্কার টাইপের। এখান থেকে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যবেক্ষণ করা হতো।

সুড়ঙ্গগুলো আর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত নেই। সব সময়েই তালাবন্ধ থাকে। লালবাগ কেল্লার কাস্টডিয়ান সুলতানা জাকিয়া বেদৌরা জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সুড়ঙ্গ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে দর্শনার্থীরা দেখতে চাইলে খুলে দেখানো হয়। যদিও তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারলেন না দর্শনার্থীরা। তাদের অভিযোগ, অনুরোধে সাড়া মেলে না কর্তৃপক্ষের।

পূর্ব দিকে মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে একটি বিশাল পুকুর। পানি শূন্য খাঁ খাঁ করছে পুকুরটি। দেখতে অনেকটা গলফ মাঠের মতো। পুকুরের সান বাঁধানো ঘাট থেকে কংক্রিটের পথ গিয়ে মিশেছে দ্বিতল বিশিষ্ট দরবার হল ও হাম্মামখানায়- যা এখন মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রবেশ পথ রয়েছে পূর্ব দিকে। এই মিউজিয়ামে রয়েছে, আঠারো শতকে মুঘলদের ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্র, বর্শামূল, বর্শাফলক, লোহারজালের বর্ম, ছোরা ও খাপ, লোহার জালের গাত্রবর্ম। দ্বিতীয় কক্ষটিতে রয়েছে, ঢাল-তরবারি, সুরাহী উপকরণ, সৈনিকদের পোশাক, তীর ধনুক। রয়েছে পারকাশন লক বন্দুক। যেগুলো লম্বায় প্রায় পাঁচ ফুটের মতো। ফিল্ট লক পিস্তল, সীসার তৈরি গুলি, পারস্যের তৈরি বাসনপত্র, কামানের গুলি। রয়েছে ফারসি ভাষায় মুদ্রিত গ্রন্থ।
 
মিউজিয়ামের পশ্চিম অংশে রয়েছে হাম্মাম খানা (রাজকীয় গোসলখানা)। অত্যাধুনিক কায়দায় নির্মিত এই হাম্মামখানায় গরম পানির ব্যবস্থা ছিল সেই সময়েই। সাপ্লাইয়ের পানি ব্যবহৃত হতো। আর পানি আসতো বুড়িগঙ্গা নদী থেকে।
 
পারশিয়ান হুইল দিয়ে (চরকির মতো, তাতে পাত্র লাগানো ছিল, নিচে গিয়ে পনি ভরতো আর উপরে এসে ফেলে দিতো জলাধারে) পানি তোলা হতো বুড়িগঙ্গা সংলগ্ন ব্যারাকের ছাদে। সেখানে ছিল কেন্দ্রীয় জলাধার (যা এখনও দৃশ্যমান)। আর জলাধার থেকে মাটির পাইপে চলে যেতো দরবার হল, মসজিদ, বাগান, ঝরণাসহ পুরো কেল্লায়।
 
কুঁড়ে ঘর স্টাইলের দ্বিতল ভবনটির (দরবার হল) দ্বিতীয় তলাতেও মিউজিয়াম ছিল। কিন্তু প্রায় ৪ বছর ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে ঝুকিপূর্ণ উল্লেখ করে।

এর ঠিক পেছনে রয়েছে প্রকাশনা বিক্রির স্টল। কিন্তু সেখানে গিয়ে হতাশ হতে হলো। লালবাগ কেল্লা নিয়ে কোনই প্রকাশনা নেই। মতিন মাহমুদ নামে এক স্টাফকে পাওয়া গেলো। তিনি বাংলানিউজকে জানালেন, একটি বই ছিলো বাংলায় ৩১ টাকা দরে বিক্রি করা হতো। সব বিক্রি হয়ে গেছে। এখন এক পৃষ্ঠার একটি ইংরেজি বুকলেট রয়েছে। তবে বাংলা প্রকাশনাটি অনেকদিন ধরেই নেই। অর্ডার দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রিন্ট হয়ে আসেনি এখনও।
 
পর্যটকদের সহযোগিতা করার জন্য মশিউর রহমান নামে একজন গাইড রয়েছেন। তার সহযোগিতা পেতে হলে মূল ফটকে প্রবেশের আগেই পশ্চিম কোণে লালবাগ কেল্লার কাস্টডিয়ানের কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে লালবাগ কেল্লায় কর্মরত মশিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলে অবাকই হতো হলো। তাকে যখন বলা হলো, দরবার হলের দ্বিতীয় তলাটি বন্ধ কতদিন ধরে। তিনি বিষ্ময় নিয়ে তাকালেন। বললেন, দরবার হলে আবার দ্বিতীয়তলা কই পেলেন। তিনি সৈনিকের ব্যারাকটিকে দরবার হিসেবে বুঝাতে চাইছিলেন। তখন তাকে মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত দরবার হলের কথা বলা হলে তিনি বললেন- ও আচ্ছা। আমরা আসলে ব্যারাককে দরবার হল বলি তো।
 
পর্যটন বর্ষ নিয়ে বিশেষ কোন আয়োজন আছে কি-না জানতে চাইলে কাস্টডিয়ান সুলতানা জাকিয়া বেদৌরা বাংলানিউজকে বলেন, এটা তো পর্যটনের আওতায় পড়ে না। আর পর্যটন বছরের জন্য আমরা কোন নির্দেশনা পাইনি।
 
দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ ছাড়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখানে ছাড় দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই বলে জানান সুলতানা জাকিয়া বেদৌরা।
 
১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু করেন সম্রাট আওরঙ্গজেব’র তৃতীয় পুত্র আজম শাহ। এক বছরের মাথায় মারাঠা বিদ্রোহ শুরু হলে দিল্লিতে ডাক পড়ে আজম শাহের। থেমে যায় নির্মাণ কাজ। ততদিনে মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণ শেষ।
 
এরপর ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খাঁ এসে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু কন্যা পরি বিবির অকাল মৃত্যু হলে ভেঙ্গে পড়েন শায়েস্তা খাঁ। অনেকে একে অপয়া বলে অপবাদ তোলেন। কন্যা পরি বিবিকে ঠিক মাঝামাঝি সমাহিত করেন শায়েস্তা খাঁ। পরে এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। তখন এর নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ।

আট বছর পর শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যান। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান এর উন্নয়ন শুরু করেন। তখন এর নাম দেওয়া হয় লালবাগ দুর্গ। ১৯১০ সালে এটিকে সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

মোট আঠারো একর জমির উপর অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ইউনেস্কো হেরিটেজের আওতায় নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হলেও বাফার জোন না থাকায় আবেদন বাতিল হয়ে যায় বলে জানান সুলতানা জাকিয়া বেদৌরা। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৬ হাজার ৩১১ জন বিদেশি পর্যটক কেল্লাটি পরিদর্শন করেন। একই সময়ে দেশি দর্শনার্থীর আগমন ঘটে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫৪ জন (শিক্ষার্থী ছাড়া)।
 
রোববার সাপ্তাহিক ছুটি। সোমবার খোলা থাকে দুপুর থেকে। সপ্তাহের আর সব দিনি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে লালবাগ কেল্লা। সন্ধ্যার পর হয় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। তখন নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়। প্রবেশ ফি দেশি পর্যটকদের জন্য ২০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের পর্যটকদের জন্য এক’শ টাকা, অন্যান্য দেশের পর্যটকদের জন্য দু’শ’ টাকা। এছাড়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রবেশ ফি ৫ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ