মারমেইড বিচ রিসোর্ট থেকে: সতেজ জবা ফুলের লকেটের সঙ্গে জংলি লতার দুই মাথা জুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে কলা গাছের শুকনো ছাল দিয়ে বাঁধা।
প্রবেশের সময় হাতে ধরিয়ে দেওয়া হলো পানের খিলির সমান ছোট্ট একটি ফুলের তোড়া। তাতেও মুন্সিয়ানার ছাপ। নাম না জানা বাহারি রঙের জংলি ফুল ও একটি অলকানন্দাকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এলামন্ডার পাতা দিয়ে।
অভ্যর্থনা পয়েন্টের পাশেই ছোট্ট একটি গাছে শোভা পাচ্ছে মালাগুলো। কেউ এলেই গলায় পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
মালা ও তোড়া দু'টোই সাধারণ উপকরণের। কিন্তু প্রস্তুত প্রণালী আর ব্যতিক্রমী ধাচের এই উপস্থাপন দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
এরপর রেস্টুরেন্টের ভেতরে গিয়ে বসতেই পরিবেশন করা হলো সদ্য গাছ থেকে পেড়ে আনা ডাব। চুমুক দিতে যাবো, ঠিক নাক বরাবর শোভা পাচ্ছে একটি সুগন্ধি টগর। ছুরির মাথা দিয়ে আলতো করে ছাল ফুটো করে সেঁটে দেওয়া হয়েছে। মনে হবে যেন ডাবে ফুল গজিয়েছে।
চুমুক দিলে আলতো করে আপনার নাককে ছুঁয়ে দেবে। সঙ্গে মোহনীয় গন্ধে প্রশান্তির আবেশে জড়িয়ে যাবে শরীর ও মন।
ডাবের পানির প্রশান্তির আবেশ শেষ না হতেই টেবিলে পরিবেশন করা হলো নানান মুখরোচক খাবার। হাত ধুঁতে যাবো, সেখানেও অবাক হওয়ার পালা। নারকেল গাছের গুঁড়ির ওপর পুরাতন কড়াই দিয়ে চমৎকার দু’টি বেসিন বানানো হয়েছে।
ব্যতিক্রমী দু’টি অসাধারণ বেসিন দেখে খাওয়ার কথাই ভুলে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য। আনমনে হাত চলে গেলে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায়। ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না।
এরপর খাবার টেবিলেও যে আরো বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল ধারণায়ও ছিল না। ডাবের খোলকে ব্যবহার করা হয়েছে বাটি হিসেবে। সেই বাটির ওপর সতেজ পাতা দিয়ে পরিবেশন করা হলো স্কুইড। খাওয়ার আগেই অন্যরকম একটি ভালো লাগায় ভরে গেল মন।
রেস্টুরেন্টর পাশেই রয়েছে সবজি বাগান। সেখানে চাষ করা হয় দেশি-বিদেশি নানান জাতের মৌসুমী সবজি। বাগানের ঠিক মাঝে ছোট্ট একটি চৌবাচ্চা। তাতে ফুটে রয়েছে অনেক পদ্মফুল। সেই পদ্মফুল ঘিরে পাতানো রয়েছে কয়েকটি চেয়ার।
সেই বাগানের সবজি দেখে দেখে কেদারায় বসে আরাম করছেন, ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই বাহারি ডিস নিয়ে হাজির হয়ে যাবেন রেস্টুরেন্টের স্টাফরা। সেখানে বসেই আপনি উদরপূর্তি করতে পারবেন আয়েশের সঙ্গে।
পরিত্যক্ত টিনের বালতিও যে চমৎকার ঝাড়বাতি হতে পারে মারমেইডে না এলে তা অজানাই থেকে যেতো। ভাঙা বালতির সারা গায়ে ঝাজরের মতো ফুটো করে উল্টো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ভেতরে শোভা পাচ্ছে বৈদ্যুতিক বাল্ব।
মারমেইডের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বললেন, এখানে সবকিছু রিসাইক্লিং ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি। শুধু লিলেন, ক্রোকারিজ ও কাটলারিজ নতুন কেনা হয়েছে।
রিসোর্টটিতে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু কটেজ। সবগুলোই কুঁড়েঘর আদলে নির্মিত। ভেতরে গেলেও অনুমান করা কঠিন, সেটি আসলে মাটির নাকি কংক্রিটের। সাজ-সজ্জায়ও নান্দনিকতার ছাপ স্পষ্ট। আধুনিক সব সুবিধাও বিদ্যমান।
কটেজের সামনে রয়েছে বাগান। গ্রামের মতো বারান্দার খুঁটিতে ঝুলছে হারিকেন। রাতের বেলায় টিপ-টিপ আলোয় বসে সেখান থেকেই স্পষ্ট শুনতে পাবেন সমুদ্রের গর্জন।
মারমেইডে তৈরি সবকিছুতেই যেমন সুরুচির পরিচয় বিদ্যমান, তেমনি প্রকৃতিও মারমেইডকে উজাড় করে দিয়েছে। এর পূর্বে বঙ্গোসাগর আর পশ্চিমে বিশাল পাহাড়ের দূতিয়ালি করছে রিসোর্টটি। এমনকি, জোয়ারের সময় পানি এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাবে কটেজের শরীর।
এতোসব আয়োজন ও নৈসর্গের মহাসমারোহ নিয়ে মারমেইডের ভৌগোলিক অবস্থান কক্সবাজার শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। ট্যাক্সিতে গেলে ২০ মিনিট আর অটোরিকশায় গেলে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগবে। এখানকার পেঁচার দ্বীপে সম্পূর্ণ কোলাহল ও নাগরিক কায়ক্লেশমুক্ত নির্জন পরিবেশে গড়ে উঠেছে পরিবেশবান্ধব এ বিচ রিসোর্ট।
এই পেঁচার দ্বীপের নামকরণ নিয়েও রয়েছে এক মজার আখ্যান। রেযুখাল নদীর তীরে দ্বীপটির অবস্থান। একসময় নাকি অগুণতি পেঁচার বসবাস ছিল এ অঞ্চলে, সে থেকেই এ নাম।
মারমেইডে রয়েছে অবকাশ যাপন ও চিত্ত বিনোদনের নানান উপাদান। এসবের মধ্যে রয়েছে জেট স্কি রাইডিং, কায়াক রাইডিং, বিচ বাইকিং, সার্ফিং প্রশিক্ষণ, পেইন্টিং ক্লাস, লাইভ বারবিকিউ, বিচে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, হিল ট্র্যাকিং, ডিপ সি ট্রিপ, ব্যক্তিগত ফটোশ্যুটসহ অনেক কিছু।
প্রকৃতিপিপাসুদের ইচ্ছের কোনোকিছুই অপূর্ণ থাকার কথা নয় মারমেইডে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৬
এসআই/এসআর
** সেন্টমার্টিন দেখতে কেমন (পর্ব-২)
**সেন্টমার্টিন দেখতে কেমন (পর্ব-১)
** কুকুর যখন ‘টুনা’ শিকারি
** ‘পর্যটন মৌসুম শব্দটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে’
** তৈরি হচ্ছে ‘বিচ ডাটাবেজ’
** সেন্টমার্টিনে সৈকত জুড়ে কাঁকড়ার আল্পনা
** সেন্টমার্টিনে বাজার সদাইয়ের সংগ্রাম (ভিডিওসহ)
** সৈকতের আল্পনাশিল্পীদের করুণ মৃত্যুগাথা
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ