ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

এক্সপ্রেস ট্রেনে স্ট্যান্ডিং সিটের যাত্রীরা

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
এক্সপ্রেস ট্রেনে স্ট্যান্ডিং সিটের যাত্রীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পারাবত এক্সপ্রেস থেকে: পারাবত এক্সপ্রেসে এই এক স্টাইল। কমলাপুর স্টেশন থেকে উঠবেন পুরো ট্রেন ফাঁকা।

কিন্তু বিমানবন্দরে এলে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়বে শত-শত যাত্রী। এরা স্ট্যান্ডিং সিটের যাত্রী। কেউ ভৈরব, কেউ আশুগঞ্জ, কেউবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাবেন। কথা হচ্ছে এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়ে। তবে তা এত এত স্টেশনে থেমে থেমে যাবে, তবেই না এক্সপ্রেস ট্রেনের নামের মাহাত্ম্য। ঢাকা থেকে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে। নিয়ম অনুযায়ী থামার কথা কেবল শ্রীমঙ্গলে। চায়ের দেশে অনেক পর্যটক আসা-যাওয়া করেন তাদের জন্যই হয়তো এই ব্যবস্থা। কিন্তু ট্রেনে যাত্রার যা দশা, তাতে পর্যটকের জন্য সুখকর নয়, এ কথা বলা যাবে নিঃসন্দেহে।

পারাবতের কর্মী আবদুল জব্বারের (সঠিক নামটি উল্লেখ করা হলো না) সঙ্গে কথা হচ্ছিলো ভিড় ঠাসা একটি বগিতে বসে। জানালেন এই ভিড় সাময়িক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া গেলেই ট্রেন ফাঁকা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাড়া দেড় থেকে দুইশ' টাকা। সে কারণে অনেকেই স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনে নেয় ৭০-৮০ টাকায়। তাতে তাদের সাশ্রয় হয়।

তার কথার ভঙ্গিতে মনে হলো বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেট রুটের এটাই বুঝি সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা। স্ট্যান্ডিং সিটে ভৈরব যাচ্ছে একটি পরিবার। ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলো, এখন ফিরছে তারা । এই পরিবারের কিশোর ইসমাইল জানালো, তারা পাঁচজন যাচ্ছে, মা-নানি আর তারা তিন ভাই-বোন। এদের মধ‌্য মা ও নানির জন্য দু’টি টিকিট কিনেছে ১৮০ টাকা দিয়ে আর ওরা তিন ভাই-বোন যাচ্ছে ফ্রি।

বেশ ভালোই ১৮০ টাকায় পাঁচজনের ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফেরা। ট্রেনেই এটা সম্ভব। গাড়িতে হলে এই আট থেকে বারো বছরের ছেলেমেয়েদের সবারই টিকিট কাটতে হতো। সেদিক থেকে গরিবের জন্য ভালোই সাশ্রয়। তবে পুরো পথটিই কষ্ট করে যাওয়া, দাঁড়িয়ে তো সারাক্ষণ থাকা যায় না। কখনও ব্যাগের ওপর বসে, আবার কখনও কারো সিটের গায়ে হেলান দিয়েই কাটে তাদের ট্রেন যাত্রার সময়। আখাউড়া যাবেন যুবক এক যাত্রী। তিনি জানালেন, এই সুবিধাটা তিনিও প্রায়শই নেন। কারণ এতে সাশ্রয় কেবল অর্থে নয়, সময়েও।

সে অর্থে পারাবত এক্সপ্রেস এই গরিব মানুষগুলোকে সেবাটা ভালোই দিচ্ছে। ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত লোকাল ট্রেন যে নেই তা নয়। সেটি তিতাস। সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ছেড়ে আসে। আবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। সেখান থেকে বিকেলে ছেড়ে আসে। আর ঢাকা থেকে ফের রাতে যায়।

তিতাসেও যাওয়া-আসা করে এই রুটের অনেক যাত্রী। তবে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) অফিস ডেতেও পারাবত এক্সপ্রেসের বগিতে বগিতে যে ভিড় দেখা গেলো, তাতে বলা যায় এই রুটে সার্ভিস আরও বাড়াতে হবে।

আর এক্সপ্রেস ট্রেনকে সত্যিকারের এক্সপ্রেস করে তুলতে লোকাল যাত্রী তোলা বন্ধ করতেই হবে। আরও একটি বিষয় নজর এলো, এই যে শত শত স্ট্যান্ডিং সিটের যাত্রী। এদের সবার কিন্তু টিকিট কাটা নেই। বগির ভেতরেই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তোলা হচ্ছে। এর কতটা রেল কর্তৃপক্ষের ফান্ডে, আর কতটা টিটিসহ অন্যদের পকেটে যাবে, তা আন্দাজ করা কঠিন কিছু নয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
টিআই/এমএমকে

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ