ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

জেরিন চা বাগান থেকে উচ্চশিক্ষায়

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
জেরিন চা বাগান থেকে উচ্চশিক্ষায় ছবি: শুভ্রনীল সাগর

জেরিন চা বাগান ঘুরে: বছর সাতের লিটনের সঙ্গে কথা হয় সকাল সাড়ে সাতটায়। জিজ্ঞেস করি, স্কুলে যাবে না? বললো, হ্যাঁ।

স্কুল কখন? নয়টায়। লিটনের সঙ্গে আবারও দেখা হয়। তখন তাকে চেনাই যায় না! দিব্যি বাবু সেজে বুকে বই লেপ্টে স্কুলের পথে চলেছে সে। শুধু লিটন নয়, তার মতো আরও অনেকে। স্কুল শুরু ও শেষের সময়টিতে জেরিন চা বাগানে নদীর মতো এঁকে-বেঁকে চলা রাস্তাগুলো শুধু তাদের।

লিটনদের স্কুলের নাম, জেরিন চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভৌগলিক অবস্থান, শ্রীমঙ্গলে ইস্পাহানী লিমিটেডের চা বাগান জেরিনে। সম্পূর্ণ বাগানের তত্ত্বাবধানে স্কুলটি ২০১০ সালে স্থাপিত হয়। স্কুলের ভবন থেকে শুরু করে শিক্ষকদের বেতন, খুদে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা সব তারাই ব্যবস্থা করেন। স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা চারজন ও শিক্ষার্থী ১৭৬। ২০১৩ সাল থেকে সরকারি খাতায় স্কুলটির নাম উঠেছে।

তাদের পথ ধরে বহুদিন পর আমাদেরও যাত্রা স্কুলের দিকে। সঙ্গী হলেন সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী। ততোক্ষণে মাথা উঁচু করে জাতীয় পতাকা উঠে গেছে। মাঠ-বারান্দা-শ্রেণিকক্ষে রমা-নাসিমা-মিঠুনদের হই-হুল্লোড়। ক্লাস বসলেই থেমে যাবে সব। আহা! মুহূর্তেই অজুত-কোটি স্মৃতি এসে ভিড় করলো। ‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না- সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি। ’

বৃহস্পতিবারের (২১ জুলাই) মেঘলা দিন। প্রধান শিক্ষক রেবেকা খাতুন তখনও পৌঁছাননি। তার হয়ে কথা বললেন সহকারী শিক্ষক স্মৃতি রানি দেব। পাশে বসে ফাঁকে ফাঁকে যোগ করেন জয়মতি রানি প্রজাপতি।

‘সরকারি হলেও এখনও সরকারি কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। আশাকরি খুব শিগগিরই হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত বাগান ব্যবস্থাপনা থেকে সবকিছু আসে। ’, বলেন স্মৃতি রানি।

অধিকাংশ শিক্ষার্থী চা শ্রমিকদের হলেও, তাদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ নাকি ভীষণ। আশপাশের গ্রাম থেকে বাচ্চারা পড়তে আসে। সবচেয়ে বেশি অপেক্ষাকৃত খুদেদের। প্রি-প্রাইমারি যাদের বলে। স্কুল খোলার আগেই তারা দলবেঁধে চলে আসে। স্কুলে আসতেই তাদের যতো আনন্দ।  

বাচ্চাদের আগ্রহকে পুঁজি করে অভিভাবকদেরও ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য আগ্রহী করে তুলছেন শিক্ষকরা। পাশ থেকে জয়মতি বলেন, বেশিরভাগ বাবা-মা নিরক্ষর। তারা টিপসই দিয়ে কাজ চালান। আমরা সবসময় বলি, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে। তাহলে ওদের কাছ থেকে সই করা শিখে নিতে পারবে। এখন সময় পাল্টেছে। সবাই সচেতন হচ্ছে, সবাই চায় পড়াশোনা করাতে।

সমস্যা-সঙ্কট নিয়ে স্মৃতি রানি বলেন, এখন পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিস। দিনদিন শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে। শ্রেণিকক্ষগুলো ছোটো। এজন্য কক্ষসঙ্কট রয়েছে। অফিস কক্ষটিও খুব ছোট। সবই বাগান থেকে দেওয়া। ম্যানেজার স্যারের (সেলিম রেজা) উদ্যোগে এতোসব হয়েছে। তিনি যতোটা পেরেছেন করেছেন। এখন সরকারি হয়েছে। বাকিটা সরকার দেখুক।  

জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক আগেই বলছিলেন শিক্ষা নিয়ে তার আন্তরিকতার কথা, আমরা শ্রমিকদের বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য এই স্কুল করেছি। তাদের বিনামূল্যে পড়ার ব্যবস্থা করছি। এমনকি খাতা-কলমও দিয়ে দিচ্ছি। একটাই উদ্দেশ্য, তাদের লেখাপড়া যেনো থেমে না যায়।  

আমাদের বাগানের এক কর্মী ইদ্রিস আলীর ছেলে ওমান আলী এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইতিহাস বিভাগ) প্রথমসারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে। আমাদের সহযোগিতা ছিলো বলেই পেরেছে। ভবিষ্যতে এই স্কুল থেকেও ছেলেমেয়েরা এরকম বড় জায়গায় যাবে, যোগ করেন তিনি।  

জেরিন চা বাগান স্কুলের প্রথম ব্যাচ এবার এসএসসি পাস করে গেছে। দু’-একজন বাদে বাকিরা এইচএসসিতে ভতি হয়েছে বলে শিক্ষকরা জানালেন। তারা সবাই পাহাড়ের পুত্র-কন্যা। চূড়ায় ওঠা তাদের রক্তে। শিক্ষায়ও এটি তারা ধরে রাখবে, এটুকু আশা করাই যায়!


বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
এসএনএস

*** হজরত শাহপরান, আশাগাছ এবং অন্যান্য​
*** মাধবকুণ্ড ঝরনাতলার কোলাহলে
*** ঝরনা! ঝরনা! সুন্দরী ঝরনা পরিকুণ্ড
*** ‘আগে সালমান শাহের মৃত্যুর বিচার, পরে মিউজিয়াম’
*** শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে হাকালুকির কন্যারা
*** ধুলো ঝেড়ে কুশিয়ারার ইস্ট-ইন্ডিয়া ঘাট​
*** অরূপরতনের সন্ধানে শ্রীচৈতন্যের বাস্তুলীলায়
*** জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে রেমা-কালেঙ্গা
*** রহস্যই থেকে গেলো যজ্ঞকুণ্ডের ধারা  
*** পিছুটান মুছে দেবে ভাড়াউড়া হ্রদ
*** লাউয়াছড়া গভীর আনন্দের মূর্তি ধরিয়া আসে
*** ‘সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে চায় না’
*** ওদের ট্রেন, মোদের ট্রেন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ