রাঙামাটি থেকে: দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী ও লেক, পাহাড়, ঝরনার দেশ রাঙামাটির পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ জরুরি বলে মনে করেন এখানকার জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন।
তিনি বলেন, পর্যটনের দিক থেকে রাঙামাটি অনেকদূর এগিয়েছে।
বোববার (২১ আগস্ট) সকালে বাংলানিউজ টিমের কথা হচ্ছিলো জেলা প্রশাসকের সঙ্গে। দেশের সবচেয়ে বড় এ জেলার বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যসম্ভার, পর্যটনের নানা সমস্যা, সম্ভাবনা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, বতর্মানে পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, ডিজিটালাইজেশন প্রভৃতি নিয়ে কথা বলছিলেন মো. সামসুল আরেফিন।
পর্যটকবান্ধব এই জেলা প্রশাসক বলেন, একটি জায়গার অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ট্যুরিস্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেশে ১৬ কোটি মানুষ। এর এক শতাংশও যদি পযর্টনে আগ্রহী হয় তাহলে সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ লাখ। এর মধ্যে যদি ১ লাখ ৬০ হাজার প্রতিবছর রাঙামাটি টানতে পারে এবং তারা এসে ৫ হাজার টাকা করে খরচ করে তাহলে জেলার মানুষ প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা পায়। এতে তাদেরই জীবনমান উন্নত হবে। রাঙামাটির পযর্টন শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাজ করার কিছু লিমিটেশন আছে। তবু আমরা কাজ করছি। অন্তত পযর্টনের সম্ভাবনাসহ কিছু বিষয়ে মানুষের ভেতর সচেতনতা তৈরি করতে পেরেছি।
উদাহরণ টেনে জেলা প্রশাসক বলেন, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকে যাওয়া সহজ খাগড়াছড়ি হয়ে। সেখানকার মানুষ পাহাড়ের নানা সমস্যা ভুলে পযর্টনে ইনভেস্ট করছে। হেডম্যানরা তাদের বাড়ির সঙ্গে নিজেরাই কটেজ তৈরি করে ভাড়া দিচ্ছে। এতে তারা প্রতিদিন উপার্জন করছে। এভাবে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই এগিয়ে এলে পযর্টন আরও বিকশিত হবে।
পর্যটন বিকাশে পযর্টকদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তাদের সচেতনতাও জরুরি। স্পটগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। কাপ্তাই লেকের নৌকাগুলোতে আমরা ডাস্টবিন দিয়েছি। কিন্তু চালকরাও সেটি ঠিকভাবে মানছেন না, আবার পাবলিকও সচেতন নয়, তাহলে তো পরিবেশ ঠিক রাখা মুশকিল, বলেন তিনি।
তিন পাবর্ত্য জেলার ভেতর উন্নয়নে এগিয়ে থাকা এ জেলা ডিজিটালাইজেশনেও এগিয়ে। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণে জেলা প্রশাসক নিজেই স্মার্টফোন ও অ্যাপস ব্যবহার করেন। কথার ফাঁকে ডকুমেন্ট ছবি তুলে রাখতে দেখা গেলো তাকে। জেলা তথ্য বাতায়ন নিয়মিত হালনাগাদ করা, উন্নয়নমূলক ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পরিচালিত বিভিন্ন কাযর্ক্রম মনিটরিং টুলস তৈরি, স্থায়ী সনদ যাচাই সিস্টেম অনলাইন করা, বিদেশি পর্যটকদের রাঙামাটি ভ্রমণের আবেদন সহজ করতে অনলাইন সিস্টেম তৈরি এবং হোটেল-মোটেল, দর্শনীয় স্থানের তথ্য অনলাইনে জানা সহজলভ্য করা, জেলা এনজিও পোর্টাল, ডিসি অফিস অ্যাপস, রাঙামাটি ট্যুরিজম অ্যাপস এবং নাগরিক সেবায় সার্বক্ষণিক ফেসবুকের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা আছে জেলা প্রশাসনের। এতে অনলাইনের স্মার্টফোন ব্যবহার করেই অনেক সমস্যার সমাধান পাবেন পর্যটকও সাধারণ মানুষ।
রাঙামাটি এখন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ ও পযর্টকবান্ধব বলেই দাবি মো. সামসুল আরেফিনের। হোটেল-মোটেলগুলোতে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখা, হয়রানি বন্ধসহ নানা পদক্ষেপ রয়েছে প্রশাসনের। পাশাপাশি জেলার ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মানুষকে আরও স্বাবলম্বী করতে তাদের নারীদের তৈরি ব্যাগসহ বিভিন্ন উপকরণ তাদের মধ্যেই বিতরণ করা হয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, জেলার পর্যটন আকর্ষণ বাড়াতে পর্যটন পোর্টাল রাঙামাটি চালু, হাইটেক পার্ক নির্মাণ, এ এলাকার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে পরিচিত করতে ঐতিহ্য রাঙামাটি নামে আলাদা পোর্টাল তৈরিসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলোর প্রাথমিক কাজ চলছে। শিগগির শুরু হবে।
সবশেষে সামসুল আরেফিন বলেন, পযর্টনের বিষয়টি পাবর্ত্য জেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত। তারা নানান পদক্ষেপও নিচ্ছে, কাজ করছে।
তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় জরুরি বলে মনে করেন এ জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৬
এইচএ/এএ