কাপ্তাই থেকে: রাতভর বৃষ্টিতে হওয়া পাহাড় ধস কপালটা খুলে দিলো। মাটির স্তূপে অচল হয়ে পড়েছে প্রধান সড়ক।
কিন্তু রাস্তায় নেমে তো আর থামা যায় না। তাই দ্রুতই আইভরি পার্ক, তবলছড়ি, আসাম বস্তি পেরিয়ে এলো অটোরিকশা। সংযোগ সেতু পেরিয়ে একটা টিলায় উঠতেই পেছনে গাছপালার ফাঁকে দেখা গেলো ফেলে আসা রাঙামাটি শহরের দালানগুলো। অটোর চাকা সামনে গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠতে থাকলো নির্জন সড়কের অপার্থিব রূপ। হাতের ডানে সারি সারি পাহাড়। একটার পেছন থেকে আর একটা যেনো উঁকি দিয়ে দেখছে। প্রত্যেকটা পাহাড় ছাওয়া সবুজ বনে। আর বনের মাথা ছুঁয়ে পাহাড়ের কোলে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ। জেঁকে বসে যেনো আদর খাচ্ছে পাহাড়ি বনের। বাঁয়ে কাপ্তাই লেকের জলে হাওয়ার দাপট। মাঝে মাঝে পাহাড়ি দ্বীপ। একটা-দু’টো নৌকা কদাচিৎ চোখে পড়ে।
রাতের বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমলেও মেঘ গলে অঝোরে ঝরছে এখনো। আকাশের কান্না মেখে ভিজে আছে রাস্তা। আাঁকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু রাস্তায় ঢাল বেয়ে ওঠার সময় গোঁ গোঁ আওয়াজ বাড়ছে অটো ইঞ্জিনের। গতি হয়ে যাচ্ছে স্লো। কোনো কারণে ইঞ্জিন বন্ধ হলে গড়িয়ে কয়েকশ’ ফুট নিচে পড়তে পারে বলে হিম হয়ে আসছে শরীর। পরক্ষণেই টিলার মাথা থেকে শা শা করে নিচে নামছে ছোট্ট অটো। যেনো কোনো থিম পার্কের রাইড বেয়ে নামছে। দু’পাশে সারি সারি সেগুন গাছ ছেয়ে আছে ফুলে ফুলে। কোথাওবা ফলের ভারে নুয়ে আছে মালটা গাছ। আম আর লিচুর মতো সমতলের গাছও আছে কিছু।
পাহাড়ের ঢালে জুম ক্ষেতে মাঝে মাঝে কলাগাছ, আনারস বাগান। বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মবিনুল ইসলাম এই রাস্তাকে অকপটে স্বর্গের চেয়ে সুন্দর পথের আখ্যা দিয়ে দিলেন। মগবান ইউনিয়নের মোরঘোনায় এসে লেকের পানির ওপর মাথা তুলে থাকতে দেখা গেলো বনভান্তের স্মৃতিস্তম্ভটাকে। ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি ওই মোরঘোনায় জন্ম নিয়েছিলেন বন ভান্তে। ১৯৬০ এর দশকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণের ফলে এখানে ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লেক যখন সৃষ্টি হয়, তখন আর সব গ্রামের মতো বনভান্তের জন্মভিটা বারোঘোনাও ডুবে যায় পানির নিচে। এখন সেখানে অন্তত ৫০ ফুট পানি। বনভান্তের জন্মভিটায় পানির ওপর যে স্তম্ভটা মাথা তুলে আছে তার কাছাকাছি রাস্তার উল্টো দিকে একটি স্মৃতি মন্দির নির্মাণ করছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কামনাছড়ি পাড়ায় এসে অটোর চাকা পাংচার হয়ে গেলো। ভাগ্যিস স্পেয়ার চাকা ছিলো আজিজের কাছে। বাস না চললেও পাহাড়ের গায়ে ঝোলানো কাঠের একটা যাত্রী ছাউনি আছে এই পাড়ায়। আর বাজার বলতে গোটা দুই দোকান। টানা বৃষ্টি বলে কর্মহীন পাহাড়ি ক’জন নারী জড়ো হয়ে বাঁশের চোঙে বানানো দাবা (হুক্কা) টানছেন একটি দোকানে। বাইরের মানুষ পেয়ে গলাকাটা দাম হাঁকলো দোকানি। আগের দিন কুতুকছড়ি বাজারে যে জাম্বুরা মাত্র ১০ টাকায় কেনা গেছে, এখানে তার দাম হাঁকছে ৫০ টাকা।
কড়া লিকারের লাল চা খেয়ে ফের অটো এগোতে থাকলো স্বর্গের রাস্তায়। পাহাড় চুইয়ে পড়া পানি সংগ্রহের দৃশ্য চোখে পড়লো চোখের পাশে। রাস্তার ওপর পড়ে থাকা হাতির মল জানিয়ে দিলো, এ রাস্তায় হাতি উঠে আসার গল্পটা মিথ্যে নয়।
চলবে...
বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৬
জেডএম/
আরও পড়ুন
** আলুটিলার রহস্যগুহায় অন্ধকারে একচক্কর