মারমেইড বিচ ও ইকো রিসোর্ট ঘুরে: (প্রথম পর্বের পর)... ক্যাফের স্টাফরা তখন রোজ সকাল-বিকেল পর্যটকদের হাতে হাতে প্রতিদিনের মেন্যু তালিকা বিলি করতেন। তখন অনেক বিদেশি সকালে এসে সারাদিন মারমেইডে থেকে সন্ধ্যায় যেতো।
ইকো রিসোর্টের তৈরির গল্প বলে চলেন তিনি, আমরা একসঙ্গে অনেক বিনিয়োগ করিনি। অল্প অল্প করে ব্যবসা বাড়িয়েছি। তিনটি রুম থেকে সাতটি করেছি। ২০০৭ সালের দিকে মাস দু’য়েক মারমেইড ক্যাফে বন্ধ ছিলো। আমার ইচ্ছে ছিলো, মারমেইড ক্যাফে বন্ধ না করার। কারণ, ততোদিনে এটি ব্র্যান্ড হয়ে গেছে। পরে কক্সবাজারে বর্তমানে যেখানে মারমেইড ক্যাফে, সেখানেই আমরা এটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলাম। এদিকে, ইকো রিসোর্টের কাজও চলছে। মূল ডিজাইন পাবলো ভাইয়ের করা। এর মধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন শিল্পী রনি আহমেদ। তার সঙ্গে আমাদের একটি শৈল্পিক সম্পর্ক তৈরি হলো। মাত্র আটজন দিয়ে শুরু করা সেই মারমেইড ক্যাফে থেকে এখন স্টাফ সংখ্যা প্রায় ৪শ জন। ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে ২য় সোহাগ শিখেছেন ব্যবসায়ী বাবার কাছ থেকেও। বলেন, ছোট ছোট উদ্যোগকে কীভাবে বড় করতে হয় তা শিখেছি বাবার কাছ থেকে। উনি বলতেন, তুমি ছোট ছোট জিনিস ম্যানেজ করতে পারলে, বড় বড় ব্যাপারগুলোও পারবে।
কথা হয় মারমেইডের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়েও। বলে চলেন- থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারত- সবারই ট্যুরিজমের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেটাকেই তারা ব্র্যান্ডিং করেন। আমাদেরও ঠিক করতে হবে, আমরা কোনটি ধরে ব্র্যান্ডিং করবো। মারমেইড যেটি করে, নেচারকে ইনট্যাক্ট রেখে একটি লাইফস্টাইল উপহার দেওয়া। ট্যুরিজমকে জীবনের অংশ হিসেবে ভাবতে হবে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে নয়, সেবার মানসিকতা নিয়ে এ ক্ষেত্রে আসতে হবে। আমাদের কাছে এটা একটা জীবনব্যবস্থা। লাভ-লস থাকবেই। কিন্তু আমরা এটাকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে নিয়েছি। এটাকেই আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই। এজন্য আমরা স্টাফদের বলি হোস্ট, বাকিরা গেস্ট। ‘আমি সবসময় চেষ্টা করি মানুষ তৈরি করতে। আমাদের এখানে এমনও আছেন যিনি একসময় মাটি কাটতেন। পরে আন্তর্জাতিক মানের শেফ হয়ে বেরিয়েছেন। আমার সবসময় চেষ্টা থাকে সবাইকে দেওয়ার। সবাইকে দিলে নিশ্চিতভাবে আমি এর ইতিবাচক প্রতিদান পাবো। এই আত্মবিশ্বাস আমার তৈরি হয়ে গেছে। ’
কথা হয় সমস্যা নিয়েও। বলেন, আমি অবশ্য কোনোকিছুকে সমস্যা হিসেবে দেখি না। তবে কিছু প্রস্তাব আছে। কক্সবাজারের মতো একটি ট্যুরিজম ডেস্টিনেশনকে নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের কি পরিকল্পনা তা উদ্যোক্তাদের কাছে পরিষ্কার করে দিতে হবে। আমরা নিজ উদ্যোগে সংশ্লিষ্টদের কাছে বিভিন্ন তথ্য জানতে গেলে পাওয়া যায় না। বলে, পরে আসেন। ‘পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য মারমেইড আবেদন করেছে। আমার জানা মতে, পরিবেশ নিয়ে আমাদের মতো এতো গভীরভাবে কেউ ভাবছে না। বছরের পর বছর সংশ্লিষ্টদের পেছনে ঘুরছি। কেউ আমাদের স্পষ্ট করে বলে না, ছাড়পত্র পেতে আমাদের কী কী করতে হবে। নানা ধরনের হয়রানি করে। কেউ বলে না, এই ১শটি কাজ করলে ছাড়পত্র পাওয়া যাবে। বললে আমরা সেগুলো করতাম। এছাড়া কক্সবাজার, সুন্দরবনের মতো জায়গায় পর্যটনবান্ধব প্রশাসন দরকার।
শোনালেন স্বপ্নের কথাও, কক্সবাজারকে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্টিনেশন করে তুলতে চাই। এখানে জেনেভার মতো বড় বড় ইভেন্ট, স্পোর্টস ও ফেস্টিভ্যাল হবে। হোটেল-মোটেল অনেক হয়েছে কিন্তু পর্যটকদের সময় কাটানোর জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। সেগুলো গড়ে তুলতে চাই। মারমেইড ইকো ট্যুরিজম সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৬
এসএনএস
আরও পড়ুন
** ‘কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক গন্তব্য করতে চাই’ (পর্ব-১)
** কক্সবাজারকে ‘আর্ট ডেস্টিনেশন’ করতে মারমেইডের কর্মযজ্ঞ
** শতভাগ ‘অরগ্যানিক ফুড’ পাতে দিতে একনিষ্ঠ মারমেইড