ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

এটি কিন্তু জুরাছড়ি!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
এটি কিন্তু জুরাছড়ি! ছবি: ডি এইচ বাদল

জুরাছড়ি (রাঙ্গামাটি) ঘুরে: এখনো যাদের ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর বা মালদ্বীপের বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত বা পাহাড় ঘেরা মনোমুগ্ধকর জলরাশি দেখার সুযোগ হয়নি, উপরের ছবি দেখে তারা হয়তো ভুল করতে পারেন।
 
ভাবতে পারেন-এটিই বুঝি মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা অথবা ইউরোপ-আমেরিকার পাহাড়ঘেরা বিখ্যাত কোনো জলরাশি!
 
মোটেও তা নয়! এটি বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি! অপার সৌন্দযের লীলাভূমি এ স্থানটি না দেখলে জীবনে বড় একটা অপূর্ণতা থেকে যাবে!

রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরের এ উপজেলা নান্দনিক সৌন্দর্যে  ঠাসা।

৬০৬ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত `পাহাড়কন্যা’ জুরাছড়ি সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য সৌন্দর্যের ডালা সাজিয়ে বসে আছে।
 
রাঙ্গামাটির অন্যতম পযর্টন অনুষঙ্গ কাপ্তাই হ্রদের কোলজুড়ে বসে থাকা  জুরাছড়ির সৌন্দয’র পুরোটাই প্রাকৃতিক। মানুষের হাতে তৈরি কৃত্রিম কোনো সৌন্দর্য এখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না!
 
কিন্তু পাহাড় তলায় জলের শরীরে বুক পযর্ন্ত ডুবে থাকা জুরাছড়ির অপরূপ রূপ পযর্টকদের চোখের আড়ালেই রয়ে গেছে। হাজার ফুট উচুঁ টিলার ওপর বসতি গড়ে যুগ যুগ ধরে যারা বসবাস করছেন, তারাই কেবল জানেন এই সৌন্দর্যের খবর!

জুরাছড়ির এক পাশে ওই দূর পাহাড় থেকে নেমে আসা বৃক্ষরাজী। অন্য পাশে কাপ্তাই হ্রদের নীরব জলে ঝিরি ঝিরি বাতাসের মিতালী মানুষের ঘুমন্ত সৌন্দর্যবোধকে এক ঝাঁকিতে জাগিয়ে তোলে। কোথায় যেন হারিয়ে যেতে চায় মন। বেতর থেকে কে যেন ডাক দিয়ে যায় ‘বাহির পানে’।
 
সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পযর্টকদের দুর্গম পাহাড়বেষ্টিত পুরো জুরাছড়ি ঘোরার প্রয়োজন নেই। যে টিলার ওপর ‍উপজেলা কমপ্লেক্স তার আশপাশ ঘুরে দেখলেই মন জুড়িয়ে যাবে।

কাপ্তাই লেকের পানির তোড় থেকে টিলার পাড় শাসনের জন্য কংক্রিটের তৈরি রাস্তা আর রাস্তার পাড়ে লাগানো সারি সারি নারিকেল গাছ জুরাছড়িকে দিয়েছে মোহনীয় সৌন্দর্য।
 
উপজেলা কমপ্লেক্স থেকে থানা কমপ্লেক্সের সংযোগ সড়কে সারিবদ্ধ নারিকেল, গর্জন ও জারুল গাছের হাতছানি উপেক্ষা করার মত নয়। এই সৌন্দর্যের নিবিড় ডাকে সাড়া দিলে জীবনটা হয়ে উঠবে উপভোগ্য!
 
প্রায় ২৭ হাজার লোকের বসত এই জুরাছড়ি উপজেলায়। এদের অধিকাংশই চাকমা সম্প্রদায়ের।
 
এ ছাড়া মুসলমান, হিন্দু, রাখাইন, মারমা, তংচ্যাংগা, প্যাংকো, ত্রিপুরা, কিয়াং, মরুং ও বোম সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস রয়েছে জুরাছড়ি উপজেলায়। বাংলাদেশের একটি উপজেলায় এতগুলো সম্প্রদায়ের এক সঙ্গে বসবাসের বিষয়টি বিরল।
 
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে আবহমানকাল ধরে সহাবস্থান করে আসা জুরাছড়ির মানুষের জীবনাচারও পযর্টনের অন্যতম অনুষঙ্গ হতে পারে। এখানে নানা জাতের মানুষের নানা রকম সংস্কৃতি, পোশাক-আশাক, খাদ্যাভাস, লোকাচার বৈচিত্র্য পিয়াসী পযর্টকের পযর্টন ক্ষুধা মেটাবে।

এছাড়া জুরাছড়িতে রয়েছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি বৌদ্ধবিহার, ঝর্ণা ও দীঘি। এগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ পেলে পযর্টকদের সৌন্দর্য উপভোগে আরো নতুন মাত্রা যোগ হবে।
 
জুরাছড়ি উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে আর্মি ক্যাম্প। তাছাড়া জুরাছড়ি থানার পুলিশ পযর্টকদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত। যে কোনো প্রয়োজনে ছুটে আসেন তারা।
 
রাঙ্গামাটি শহর থেকে জুরাছড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থাও মোটামুটি সন্তোষজনক। শহরসংলগ্ন কাপ্তাই লেকের রিজার্ভ ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় একটি এবং দুপুর আড়াইটায় একটি ইঞ্জিনচালিত বোট ছেড়ে যায়। জন প্রতি ভাড়া ৭০ টাকা।
 
প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরত্বের এই পানিপথ পাড়ি দিতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। পথে শুভলং, নতুন বাজারসহ তিন চারটি ঘাটে বোট থামে। চাইলে স্পিডবোট অথবা ট্রলার ভাড়া করে যেতে পারেন।
 
জুরাছড়ি থাকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। খাওয়ার জন্যও আধুনিক কোনো রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠেনি। তবে উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশে মোহম্মদ আলী হোটেলে সুস্বাদু খাবার মেলে। দামও কম।

যেহেতু থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই, সেহেতু দিন যেয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে রাঙ্গামাটি শহরে। এ জন্য দুপুর দেড়টা ও রাত সাড়ে ৮টায় ফিরতি বোট ধরতে হবে।

** হাজারছড়ায় পযর্টকের অপেক্ষায় আফিদা
** পাহাড়ে নিরুত্তাপ হরতাল
** সময় বশীভূত ইউএস বাংলায়!
** বিজিবির আতুরঘরে
** আলুটিলা রহস্যগুহায় গা ছমছমে অনুভূতি


বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
এজেড/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ