শ্যামনগরের গাবুরা থেকে ফিরে: ভোরের সূর্যটা যেন আজ অলস। উঠছে আবার উঠছে না।
এর মধ্যে কেউ কেউ বলে উঠলো এক কাপ চা হলে ভালোই হতো। কিন্তু নদীতে তো আর চা পাওয়া যায় না। তাই শীত নিবারণের জন্য কেউ মাফলার, চাদর পেচিয়ে নিলো। আবার কেউ সুয়েটার আর জ্যাকেটের চেন গলা পর্যন্ত টেনে নিল। এতো কিছু করার পরও নির্লজ্জ শীত পিছু ছাড়ছে না। এভাবেই পৌঁছে যাই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চাদনীমুখা গ্রামে।
ট্রলার থেকে সবাই উঠে চায়ের দোকান খুঁজতে থাকি। কিন্তু কোনো দোকানেই চা বিক্রি হয় না। চায়ের দোকান খুঁজতে খুঁজতে চোখ আটকে যায় নতুন একটি দৃশ্য দেখে। আব্দুল্লাহ আল মামুনের দোকানে দাড়িপাল্লায় পাকা ‘দয়া কলা’।
দাড়িপাল্লায় পাকা কলা কেন জানতে চাইলে তিনি উত্তরটা দিতে না দিতেই তার পাশে দাঁড়ানো বাবা আরশাদ আলী (৭২) বলে উঠেন, ৪৫ বছর ধরে আমাদের এ গ্রামে কেজি দরে পাকা কলা বিক্রি করা হয়।
তিনি বলেন, প্রতি কেজি কলা ১২ থেকে ১৪ টাকা দরে বিক্রি হয়। সরূপকাঠি, ইন্দিরা হাটে হালিতে কলা বিক্রি হলেও তাদের এখানে কেজিতে বিক্রি হয়। যদি একটি কলা কেউ চায়, তখন কি করেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি কলাও মেপে বিক্রি করা হয়। যতো গ্রাম ওজন হবে কেজি হিসেবে তার দাম নেওয়া হবে।
তাদের এ কেজি দরে কলা বিক্রি দেখে বাংলানিউজের ‘বছর ঘুরে দেশ জুড়ে’ টিমের সদস্য চিফ অব করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও লাইফস্টাইল এডিটর শারমীনা ইসলাম কলা না খেয়ে উঠলেনই না। কেজি দরে কলা কিনলেন। শখ করে কিনলেও সব সাবাড় করতে পারলেন না। সাবাড় করলেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মাহফুজুল ইসলাম ও স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইনজামামুল হক। আয়েশি ভঙ্গিতি তাদের কলা খাওয়ার দৃশ্য দেখে আশে পাশের সহজ সরল লোকেরা এসে ভিড় জমানো শুরু করলো।
জমিন গাবুরা দ্বীপটির বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের এ দ্বীপটি।
এ দ্বীপের সব দোকানেই যুগ যুগ ধরে পাকা কলা কেজি দরে বিক্রি হয় বলে জানালেন স্থানীরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
এমআরএম/এসএইচ