বরিশাল: রমজানে নিজ বাড়িতে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে ইফতার করতে কে না পছন্দ করে। তবে সবাই যে পেরে ওঠে এমনটাও নয়।
বিশেষ করে ক্লাস বন্ধ না হলে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা যারা ছাত্রাবাসে থাকেন তাদের রমজানের শুরুর দিকে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করা হয় না।
তবে ক্লাস বন্ধ হয়ে গেলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে বাড়িতে ফিরে ইফতার আয়োজনে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে অংশ গ্রহণ নিতে পারেন। কিন্তু ভিনদেশী শিক্ষার্থীদের বেলায় সেই সুযোগটা হয়ে ওঠে না। যেমনটা হচ্ছে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজে পড়াশুনার তাগিতে আসা প্যালেস্টাইনের শিক্ষার্থীদের বেলায়। পরিবার-পরিজনকে পাশে না পেলেও রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে এ দেশের নিয়মে শিক্ষার্থীরা রোজা রেখে চলছেন। আর বন্ধু ও সহপাঠীরা সবাই এক সঙ্গে মিলে ইফতার-সাহরি করে ভুলে থাকার চেষ্টাও করছেন পরিবারের সঙ্গে কেটে যাওয়া দিনগুলোকে।
মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, রমজানে পরিবারের কাছে থাকলে পছন্দের খাবারগুলো রান্না করা হলেও এখানে পরিস্থিতি পুরোটাই উল্টো। মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে থেকে সাহরি ও ইফতারসহ সবকিছুই করতে হয় নিজেদের। যদিও অনেকেই আবার ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়েও থাকছেন। তবে প্যালেস্টাইনে সব সময় মাংস ও রুটি খাওয়া হলেও সময়ের প্রয়োজনে ভিন্ন দেশে এখন বাঙালি খাবারেই অভ্যস্ত হয়েছেন তারা।
মোহাম্মদ ও হাসানসহ প্যালেস্টাইনের শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাংলাদেশে পড়াশুনার জন্য থাকছি, পড়াশুনা শেষ না করে দেশে যাওয়া হচ্ছে না, তাই এদেশেই রমজানসহ ঈদ উদযাপন করতে হয়। আর বন্ধুরা সবাই মিলে বেশ ভালোভাবেই ধর্মীয় এসব উৎসবগুলো উদযাপন করছেন।
বাঙালিদের আন্তরিকতার কারণে প্যালেস্টাইনের পর তাদের হৃদয়ে বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে জানিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এখানে থাকতে থাকতে আমরা বাঙালি হয়ে গেছি, খুব ভালো লাগে এখানে। সবাই সহযোগিতা করে, ভালোবাসে আমাদের।
এদিকে ভিনদেশীদের কিছুটা হলেও পরিবারের আদর দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বরিশার নগরের কালিবাড়ি রোড এলাকার বাসিন্দা দিপু হাফিজুর রহমান ও তার পরিবার। তাই প্রায় গত ১৫ বছর ধরে বরিশাল নগরের কালীবাড়ি এলাকার নিজ বাসায় ভিনদেশী শিক্ষার্থীদের নিয়ে রমজান ও ঈদ ঘিরে আতিথেয়তার নানান আয়োজন করে আসছেন তিনি।
নিজ দেশের সংস্কৃতি বিদেশিদের মধ্যে ছড়িতে দিতে প্রতি বছর এমন আয়োজন করেন জানিয়ে দিপু হাফিজুর রহমান বলেন, আমার সবসময়ই মনে হয় ওরা (প্যালেস্টাইনের শিক্ষার্থীরা) বাসা ও পরিবার-পরিজন ছেড়ে অনেক দূরে রোজায় ইফতার করছেন, ঈদ উদযাপন করছেন। এ সময়টাতে যদি তারা আমার বাসায় আসে তাহলে কিছুটা হলেও তাদের ভালো লাগবে। তারা এখন আমার বাসায় আসতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য রোধ করে। আমার বাসকে তারা নিজেদের বাসা মনে করেন, আমারও খুব ভালো লাগে। বিদেশি এসব ছেলে-মেয়েদের সঙ্গ দিতে। ওদের নিয়ে আমার পরিবারও অনেক আনন্দ উপভোগ করছে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ ও হাসানসহ প্যালেস্টাইনের শিক্ষার্থীরা বলেন, দিপু হাফিজুর রহমান আমাদের ভাইয়ের মতো হয়ে গেছে। তার সঙ্গে ইফতার খাওয়া-দাওয়া করি। তার বাসায় অনেক সময় আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়। এ বাসায় পরিবারের মতো সময় কাটাতে পারি বলেও জানান তারা।
প্রসঙ্গত, বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজে ২৩ জন প্যালেস্টাইন নাগরিক পড়ালেখা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২৩
এমএস/আরআইএস