ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

ইফতারে নেই নতুনত্ব, ঈদ নিয়ে দুশ্চিন্তা স্বল্প আয়ের মানুষের

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
ইফতারে নেই নতুনত্ব, ঈদ নিয়ে দুশ্চিন্তা স্বল্প আয়ের মানুষের

মাদারীপুর: দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন এসেছে। দৈনন্দিন বাজার নিয়ে কড়ায়-গন্ডায় হিসেব করে অগ্রসর হতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষের।

এরপরও আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাতে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেকেই। দৈনন্দিন বাজার খরচের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছেন অসংখ্য স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের।

মাদারীপুর জেলার শিবচরের চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপকালে অধিকাংশ গৃহকর্তীরা জানান, হিসাব-নিকাশ করে চলতে হচ্ছে। বাজারে চাষের মাছও কিনতে কষ্ট হয়! সব কিছুর এতো দাম! সংসার চালানো কষ্ট হয়ে উঠছে। ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে আয় না বাড়ায় অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। দিনমজুর অসংখ্য পরিবারে ইফতারেও নেই নতুনত্ব।

তারা জানান, ভাত দিয়ে ইফতার করেন অনেকেই। মাঝে মধ্যে ছোলা ভুনার সঙ্গে মুড়ির ব্যবস্থা হয়। ভোজ্য তেলের দাম বেশি থাকায় বেগুনি বা আলুর চপ তৈরি করে খাওয়া অনেকটাই বিলাসিতা বলে জানান তারা। ইফতার কোনোভাবে চালিয়ে গেলেও সামনের ঈদে খরচ নিয়ে শঙ্কিত তারা।

শিবচরের পদ্মাবেস্টিত বন্দরখোলা ইউনিয়নের কমলা বেগম (৫০) বলেন, আমার স্বামী ক্ষেত-খামারে দিনমজুরি খাটে। সবদিন কাজও পায় না। চাল-ডাল কিনতেই টাকা চলে যায়। সেখানে ইফতারের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। সামনের ঈদে খরচ নিয়েই চিন্তায় আছি। মাংসের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে মাংস-পোলাউ খাওয়া হবে কিনা জানি না।

আব্দুস সাত্তার নামে এক ব্যক্তি বলেন, কষ্ট কইরা যা কামাই করি, তা সংসারের দৈনন্দিন বাজার-সদাই করতেই শেষ হয়ে যায়। ইফতারের জন্য ফলমূলসহ একটু ভালো খাবার কেনা হয় না। মাছ-মাংসেরও অনেক দাম। গরুর মাংস খাই না অনেক দিন। এখন আবার ব্রয়লারের দামও অনেক বেড়েছে।

বন্দরখোলা ইউনিয়নের রিয়াজ উদ্দিন মাদবর কান্দি গ্রামের হুমায়ুন শেখ। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার পরিবার। অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চলে তার। আলাপকালে তিনি জানান, জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে ঈদে নতুন জামাকাপড় কেনা আর ঈদের দিনের জন্য একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছি। আয়-রোজগারের সঙ্গে খরচের হিসাব মিলাতে পারছি না। আমাদের মতো গরিব মানুষ অনেক কষ্টে আছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,সপ্তাহের শেষে ব্রয়লার মুরগীর দাম কিছুটা কমলেও গরুর মাংস এবং পাঙাশ মাছের দাম অপরিবর্তিত আছে। গরুর মাংসের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। আসন্ন ঈদে মাংসের দাম আরও আকাশচুম্বী হতে পারে বলে আশঙ্কা সাধারণ মানুষের।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগী ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা। সোনালি মুরগী বিক্রি হচ্ছে  ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা, লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া দেশি মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা করে। এছাড়াও আলু, পিঁয়াজ, পটল, শশা, টমেটো, মরিচসহ নানা ধরনের সব্জির দামও বাড়তি রয়েছে। ফলের মধ্যে তরমুজ, বাঙ্গির দামও চড়া।

উৎরাইল হাটের মুরগী ব্যবসায়ী আহসান জানান, ব্রয়লারের দাম কমেছে। ২০০ টাকা করে কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে বিক্রি কমে গেছে।

মাছ বিক্রেতারা জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে মাছের দাম বেশি। ইলিশ, পাঙ্গাস, পাবদা, রুইসহ প্রায় সকল মাছের দাম বেড়েছে। '

মাদারীপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস জানান,'বাজারে পন্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। '

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।