ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

আজ তারাবিতে পাঠ কোরআনে কারিমের শ্রেষ্ঠত্বের কথা

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
আজ তারাবিতে পাঠ কোরআনে কারিমের শ্রেষ্ঠত্বের কথা

আজ ৯ম তারাবি অনুষ্ঠিত হবে। আজকের তারাবিতে তেলাওয়াত হবে ১২নং পারা।

শুরু হবে সূরা হুদের ৬নং আয়াত থেকে। এ সূরা শেষ হয়ে সূরা ইউসুফের ৫২নং আয়াত পর্যন্ত আজ তেলাওয়াত করা হবে।

সূরা হুদের আজকের তেলাওয়াতকৃত অংশের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ হলো-
৬নং আয়াতে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, পৃথিবীতে বিচরণকারী সব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহতায়ালার।

৯-১১নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা মানব প্রকৃতি চিত্রায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি যদি মানুষকে শুরুতে অনুগ্রহ ভোগ করাই অতঃপর তা প্রত্যাহার করে নেই তবে সে হতাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়। আর যদি শুরুতে দুঃখ ও কষ্টে রাখি। অতঃপর সুখ দেই তখন সে ‘বিপদ কেটে গেছে’ দাবি করে অহংকারী হয়ে যায়। তবে যারা ধৈর্যশীল ও নেককার তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।

প্রসঙ্গক্রমে এখানে একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, একবার মুশরিকরা নবী (সা.)-এর কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসে, আপনি আমাদের দেব-দেবীর ব্যপারে নমনীয় হোন। আমরা আপনার কথা ভেবে দেখার চেষ্টা করব। তখন আল্লাহতায়ালা ১২নং আয়াত অবতীর্ণ করে নবীকে সতর্ক করে বলেন, ‘আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনি কি তার কিছু বর্জন করবেন?’

১৩নং আয়াতে তাদের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ে দেয়া হয়েছে যারা কোরআনকে নবী (সা.)-এর রচনা বলে দাবি করে। তাদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, তিনি একা যদি এত বড় গ্রন্থ রচনা করে থাকেন তবে তোমরা তোমাদের সকল বন্ধু-বান্ধব নিয়ে, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সকল উপাস্যদের সঙ্গে নিয়ে কোরআনের দশটি সূরার মতো সংকলন তৈরি করে দেখাও!

২৫-৪৯নং আয়াতে হজরত নুহ (আ.) কর্তৃক উম্মতের সামনে একত্ববাদের দাওয়াত পেশ করা, তার সঙ্গে উম্মতের বিতর্ক, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন- সর্বশেষ শাস্তিস্বরূপ মহাপ্লাবনে তাদের সবাইকে ডুবিয়ে ফেলার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। হজরত নুহ (আ.) যখন দেখলেন বন্যায় নিজের ছেলে ডুবে যাচ্ছে তখন তিনি আল্লাহর কাছে নিজের ছেলেকে বাঁচানোর ফরিয়াদ করলেন। তখন আল্লাহতায়ালা তাকে সতর্ক করে বলে দিলেন, সে তোমার আপন নয়; সে বেদ্বীন।

৫০-৬০নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে হজরত হুদ (আ.)-এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করায় এবং আল্লাহকে অস্বীকার করায় আদ জাতির উপর কী বিপর্যয় ও গজব নেমে এসেছিল- সেসব কাহিনী।

৬১-৬৮নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি বিকট আওয়াজ কিভাবে অহংকারী সামূদ জাতিকে নির্মূল করেছিল। হজরত সালেহ (আ.) তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে উপস্থিত হলে তারা তার নবী হওয়ার প্রমাণ দাবি করে। আল্লাহতায়ালা প্রমাণস্বরূপ একটি বিশেষ উট দান করেন। আর এ উট জবাই করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা এ নিষেধ অমান্য করে উটটি জবাই করে ফেলে। পরিণতিতে আল্লাহর গজব নেমে আসে। হজরত সালেহ (আ.) এবং তার একান্ত অনুসারীরা ব্যতিত বাকি সবাই ওই গজবে ধ্বংস হয়ে যায়।

৬৮-৮৩নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, কয়েক জন ফেরেশতার বিশেষ দু’টি অভিযানের কথা। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়াতে আবির্ভূত হয়ে প্রথম গেলেন হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে। তারা তাকে দিলেন পুত্র ইসহাক জন্মের সুসংবাদ। অথচ তখন তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে অনেক বৃদ্ধ। অতঃপর ফেরেশতারা চলে গেলেন, হজরত লুত (আ.)-এর কাছে। হজরত লুত (আ.)-এর অবাধ্য ও পাপী সম্প্রদায় আগত নতুন সুদর্শন পুরুষ দেখে সমকামীতার জন্য উৎসুক হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় হজরত লুত (আ.) ফেরেশতাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। তা দেখে ফেরেশতা তাকে স্বান্তনা দিলেন। বললেন, তারা আমাদের নাগাল পাবে না। আমরা আল্লাহর দূত। অবশেষে আল্লাহতায়ালা তাদের জনপদকে উল্টে দিলেন এবং মুষলধারে পাথর বৃষ্টি বর্ষণ করলেন।

৮৪-৯৫নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, মাদইয়ানবাসীর ওপর আল্লাহর গজব বর্ষণের ঘটনা। তাদের অপরাধ, তারা মাপে কম দিত ও শিরক করত। হজরত শোয়াইব (আ.) তাদের মাঝে দ্বীনের মেহনত করেন। কিন্তু তারা তার আহ্বানে সাড়া দিল না। অবশেষে আল্লাহ আকস্মিক ভয়ংকর আওয়াজ দিয়ে তাদের ধ্বংস করেন। হজরত শোয়াইব (আ.) ও তার অনুসারীদের রক্ষা করেন। ‍

১১৪নং আয়াতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সূরা ইউসুফ
সূরা ইউসূফ পবিত্র কোরআনে কারিমের ১২নং সূরা। এটা মক্কি সূরা। এ সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ১১১টি। আজকের তারাবিতে তেলাওয়াত হবে এ সূরার ৫২নং আয়াত পর্যন্ত। পবিত্র কোরআনে কারিমের মধ্যে মাত্র এ সূরাতেই একটি পূর্ণ ঘটনার সম্পূর্ণ ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে।

আজকের তেলাওয়াতে উল্লেখযোগ্য বিষয়াবলী হলো-
৩৩-৩৪নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, একজন আল্লাহভক্ত তরুণের চরিত্র হেফজত করার নিরন্তর প্রচেষ্টার কথা। ওই তরুণ আর কেউ নন, তিনি হলেন হজরত ইউসুফ (আ.)। নিজের চরিত্র হেফাজত করার নিমিত্তে তিনি বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! এ নারীরা যে বিষয়ের প্রতি আমাকে আহ্বান করছে তা অপেক্ষা কারাগারের বন্দী জীবন আমার কাছে অধিক প্রিয়। তাদের ছলনা থেকে আপনি যদি আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব। আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। অতঃপর তার প্রতিপালক অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা তার মোনাজাতে সাড়া দিলেন। তাকে রক্ষা করলেন।

৫২নং আয়াতে দেখা যায়, তরুণ ইউসুফ শুধু যে সৎ তা-ই নয়। তিনি নিজের নৈতিক মর্যাদার ব্যপারেও সচেতন। তাই তো দেখা যায় রাজার বিশেষ আদেশে কারাগার থেকে মুক্তির সুযোগ পেয়েও তিনি তাড়াহুড়ো করে বের হলেন না। বরং ধীর-স্থিরভাবে জানতে চাইলেন, আমার ওপর আরোপিত অভিযোগের বর্তমান অবস্থা কী? রাজা সে সব নারীদের ডেকে ঘটনার তদন্ত করলেন। যখন ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করল এবং বলল, আমরা তার মাঝে কোনো দোষ দেখি নাই। বরং আমরাই তাকে কামনা করেছি। তখন তিনি কারাগার থেকে বের হতে সম্মত হলেন এবং বললেন, আমি এরূপ করেছি যেন আমার মনিব পরিস্কারভাবে জানতে পারেন যে, আমি তার অনুপস্থিতিতে তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করি নাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘন্টা, জুন ২৬, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।