ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘রমজান ঐতিহ্য’

ইতালিয়ান‍রা তাবুতে ইফতার ও তারাবির আয়োজন করে

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫
ইতালিয়ান‍রা তাবুতে ইফতার ও তারাবির আয়োজন করে ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ ইউরোপে অবস্থিত ভূমধ্য সাগরীয় দেশ ইতালিতে ইসলাম নবাগত কোনো ধর্ম নয়। বরং ইতালির ভাগ্যোন্নায়নের অনেক কিছু হয়েছে মুসলিমদের নেতৃত্বে।

ইসলামের সোনালি যুগে ইতালির ‘সিসিলি’ দ্বীপপুঞ্জ মুসলিম শাসনাধীন ছিলো। এখানেই জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত মুসলিম কবি ও দার্শনিক ইবনে হামাদিস সিসিলি।

ইতালির সমাজ আরব সভ্যতা ও সংস্কৃতি দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। বিশেষত পশ্চিম ইতালির যেসব দ্বীপগুলো আরব রাষ্ট্রগুলোর নিকটবর্তী, সেখানে আরব রীতি-নীতি ও জীবনাচরণের ছাপ পাওয়া যায়। বর্তমানে স্থানীয় ও অভিবাসী মিলে ইতালিতে প্রায় ১৫ লাখ মুসলিম বসবাস করে। জনসংখ্যার ৪% ভাগ মুসলিম। ইতালিতে ছোট-বড় ৪৫০টি মসজিদ রয়েছে।

ইতালি ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রাণকেন্দ্র ভ্যাটিক্যানের দেশ হলেও সেখানে ইসলামের আগমন হয়েছিলো খুব সহজেই। ইতালিতে ইসলামের আগমন ঘটে প্রথমে সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে। পরে অবশ্য সেখানে ইসলাম প্রচারকদের একটি বড় দল ওই অঞ্চলের মানুষের মাঝে ইসলামের বাণী প্রচার করতে থাকে।

বর্তমানে ইতালিতে ইসলামে প্রচার-প্রসারে ‘ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইতালি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইসলাম প্রচারে তাদের অভাবনীয় সাফল্যের কারণেই তারা কয়েকবার চরমপন্থীদের হামলার শিকার হয়েছে। তার পরও তারা চরম ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে ইসলামের বাণী প্রচার করে যাচ্ছে। যেসব ইতালীয় ইসলামের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক অভিযোগ উত্থাপন করে, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র যুক্তির সঙ্গে তা খণ্ডন করে আসছে। ইসলাম প্রচারকরা পাল্টা আক্রমণের পরিবর্তে চরমপন্থীদের সামনে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরে।

ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে ইতালিতে বেশ কয়েকটি ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতালিতে মুসলিম সোসাইটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, ইসলাম সম্পর্কে ইতালির শাসকদের স্বচ্ছ ধারণার অভাব। ফলে তারা ইসলাম বিষয়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেল করার অনুমতি এখনও পায়নি। তাই ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র একটি অনলাইন টিভি চ্যানেলের অনুমতি লাভের চেষ্টা করছে। এমনকি ইতালিতে মুসলিমদেরকে ইসলামি রীতি অনুসারে দাফন করারও অনুমতি দেয়া হয় না। তবে রমজানে কোথাও কোথাও প্রশাসন কিছুটা নমনীয়তা দেখায়। ফলে মুসলিমরা ইফতার পার্টি করার অনুমতি পায়। ইতালিতে মুসলমানরা জায়গায় তাবু করে তারাবির নামাজ আদায় করে ও ইফতার করে। রমজানে ইতালির সরকার এসব খুব একটা বাঁধা দেয় না।

রমজান মাসকে ইতালির মুসলিমরা ধর্মচর্চা ও ইবাদতের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। এ সময় তারা মুসলিম দেশে তৈরি পণ্য ও খাবার গ্রহণ করে। শহরের মুসলিম হোটেল ও রেস্তোঁরায় ইফতার ও সেহরি করে। রমজান মাসে ইতালির মুসলিমরা আরবীয় খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করে, যা মুসলমানদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। রমজান মাসে আরব দেশ থেকে আমদানী করা প্রচুর খাবার ইতালিতে পাওয়া যায়। যার উল্লেখযোগ্য অংশ যায় উপহার হিসেবে। ইতালির মুসলিম কমিউনিটিগুলো রমজানে ইসলামি বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করে। সেখানে সাধারণত আরব আলেমদেরকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়।

রমজান মাসে ইতালির মুসলিম অধিবাসী এবং বিভিন্ন দেশের মুসলিম অভিবাসীরা পরস্পরের কাছে আসার সুযোগ লাভ করে। সাধারণত তারা সবাই সপরিবারে মসজিদে ইফতারি করে। ইফতার অনুষ্ঠানে অভিবাসীরা নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করে নিয়ে আসে। মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করে ঘরে ফেরে। রমজান মাসে ইতালীয় মুসলিমরা দুহাত খুলে দান করেন। তারা অনুন্নত ও দুর্দশাগ্রস্থ মুসলিম অঞ্চলের জন্য দান করতে বেশি পছন্দ করে। যেমন, ফিলিস্তিন ও আফ্রিকার দরিদ্র্য অঞ্চলের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ দান করে তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘন্টা, জুন ২৭, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।