ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

আজ পাঠ মানুষের প্রতি ব্যবহার কেমন হওয়া দরকার

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৫
আজ পাঠ মানুষের প্রতি ব্যবহার কেমন হওয়া দরকার

চলতি রমজান মাসের প্রথম দশক রহমতের শেষ দিন আজ। আজ সন্ধ্যার পর শুরু হবে মধ্য দশক, মাগফিরাতের দশক।

আজ অনুষ্ঠিত হবে ১১তম তারাবি। আজকের তারাবিতে ১৪নং পারা তেলাওয়াত হবে। এ পারায় রয়েছে পূর্ণ দু’টি সূরা- সূরা হিজর এবং সূরা নাহ্ল।

সূরা হিজর
সূরা হিজর কোরআনে কারিমের ১৫তম সূরা। এ সূরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৯৯টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য বিষয়াবলী হলো-

৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি। আমিই এর হেফাজত করব। কোরআন হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই নিয়েছেন। বিধায় সুদীর্ঘ দেড় হাজার বছর অতীত হওয়ার পরও পবিত্র কোরআনে কারিমে কোনো বিকৃতি ঘটেনি। যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছিল অবিকল সেভাবেই আছে।
বিকৃত হওয়া থেকে কোরআনকে আল্লাহ হেফাজত করবেন। কিন্তু কোরআনের আলোকে ব্যাক্তি ও সমাজ গঠনে মানুষকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। কোরআন বিরোধী কর্যকলাপ মাথাচাড়া দিলে তা প্রতিহত মানুষের দায়িত্ব। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ২৩ বছরের জীবন সাধনা এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে তার কোরআনকে নবীর আদর্শে উজ্জ্বীবিত কিছু মর্দে মুজাহিদ মানুষ দ্বারা হেফাজত করবেন।

১৬-২৫নং আয়াতে প্রকৃতিতে আল্লাহর কুদরতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

২৬-৪৪নং আয়াতে প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টির ঘটনা এবং শয়তান চির অভিশপ্ত হওয়ার আলোচনা স্থান পেয়েছে।

৫৮-৭৭নং আয়াতে হজরত লুত (আ.) ও তার সমকামী জাতির ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।

৭৮-৭৯নং আয়াতে আইকাবাসীর ওপর আল্লাহর গজব বর্ষণের আলোচনা করা হয়েছে। আইকা ছিল মাদইয়ানের পার্শ্ববর্তী একটি এলাকা। এ এলাকার নবী ছিলেন হজরত শোয়াইব (আ.)। তিনি উপরোক্ত দু’টি জনপদের জন্যই নবী ছিলেন।

৮০-৮৪নং আয়াতে হিজরবাসীদের অবাধ্যতা ও তাদের ওপর আল্লাহর গজব বর্ষণের আলোচনা স্থান পেয়েছে। হিজর একটি উপত্যকার নাম। এ উপত্যকায় বাস করত ছামুদ জাতি। তাদের নবী ছিলেন হজরত সালেহ (আ.)। তারা স্থাপত্যশিল্পে অনেক উন্নত ছিল। কিন্তু অবাধ গুনাহর কারণে যখন আল্লাহর গজব নেমে আসে তখন তাদের প্রযুক্তি ও বৈষয়িক উন্নতি আল্লাহর গজব থেকে তাদের রক্ষা করতে পারেনি।

৮৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আকাশ-পৃথিবী ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী কোনো কিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করি নাই। কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে।

৮৮নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আমি অমুসলিমদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগ-বিলাসের যে সমস্ত উপায়-উপকরণ দিয়েছি, সে সবের প্রতি তুমি কখনো চোখ দৃষ্টি দিও না।

৯৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর।

সূরা নাহল
সূরা নাহ্ল পবিত্র কোরআনে কারিমের ১৬তম সূরা। এ সূরাটিও মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ১২৮টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

৩-১৭নং আয়াতে প্রকৃতির মাঝে মানুষের জন্য আল্লাহর দেয়া বিভিন্ন নিয়ামতের আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর ১৮নং আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।

২০-২১নং আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর যাদের ইবাদাত করো, তারা কিছুই সৃষ্টি করে না। বরং তাদেরই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব। পুনরুত্থান কবে হবে, এ ব্যপারে তাদের কোনো ধারণা বা চেতনা নেই।

৬১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের সীমা লংঘনের জন্য শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠের কোনো জীব-জন্তুকে রেহাই দিতেন না। কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেন। অতঃপর যখন তাদের সময় আসে তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব করতে পারে না।

৬৫-৬৯নং আয়াতে প্রকৃতির মাঝে আল্লাহর দেয়া কিছু নিদর্শনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গাভীর গর্ভ থেকে দুধ, মৌমাছির গর্ভ থেকে মধু, আঙ্গুর থেকে রস বের হওয়ার উল্লেখ করে আল্লাহর নিদর্শন আকর্ষণীয় ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

৭১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমদের কাউকে কারও ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা অধীনস্থদের এমন কিছু দেয় না যাতে ওরা এ বিষয়ে তাদের সমান হতে পারে। তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?

৯০-৯১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেছেন নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে, সদাচরণ করতে, আত্মীয়-স্বজনকে দান করতে। এবং তিনি নিষেধ করেছেন অশ্লীলতা করতে, গুনাহর কাজ করতে, সীমা লংঘন করতে। তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পূরণ কর। পরষ্পর অঙ্গীকার যখন আল্লাহর নামে শপথ করে সুদৃঢ় কর তখন তা ভঙ্গ করো না।

৯৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা পরষ্পরকে ধোঁকা দেয়ার জন্য শপথকে ব্যবহার করো না।

৯৭নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, মুমিন হয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে যে-ই সৎকর্ম করবে তাকে আমি আনন্দময় জীবন দান করব।

৯৮নং আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যখন পবিত্র কোরআনে কারিম পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।
১১৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ হারাম করেছেন, মৃত প্রাণী, প্রবাহিত রক্ত, শুকরের গোশত এবং যে প্রাণীকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে খুশি করার জন্য জবাই করা হয়েছে।

১২৬নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর তবে ঠিক ততখানি প্রতিশোধ নিবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। তবে তোমরা যদি ধৈর্যধারণ করো; তবে তা-ই হবে উৎকৃষ্ট কাজ।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘন্টা, জুন ২৮, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।