ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

আজ পাঠ বেহেশতের অধিকারী সাতটি গুণসম্পন্ন মানুষের পরিচয়

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫
আজ পাঠ বেহেশতের অধিকারী সাতটি গুণসম্পন্ন মানুষের পরিচয়

আজ অনুষ্ঠিত হবে ১৫তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে ১৮তম পারা তেলাওয়াত করা হবে।

আজকের তেলাওয়াতে সূরা মুমিনুন, সূরা আন নুর পূর্ণ এবং সূরা ফুরকানের ২০নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে।

সূরা মুমিনুন
সূরা মুমিনূন কোরআনের ২৩তম সূরা। এ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ১১৮টি।

এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
১-১১নং আয়াতে মুমিনের পরিচয় দেয়া আছে। একজন সফল মুমিনের ভিতর সাতটি গুণ থাকবে। যথা-
১. তারা খুশুর সঙ্গে নামাজ পড়ে। খুশুর শাব্দিক অর্থ স্থিরতা। পরিভাষায় মনের খুশু বলা হয়, শুধুমাত্র আল্লাহর ভয়কে মনে স্থান দিয়ে একনিষ্ঠভাবে নামাজ আদায় করাকে। আর দেহের খুশু বলা হয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া না করাকে।
২. তারা এমন সব বিষয় থেকে দূরে থাকে যাতে তার দুনিয়ার কোনো উপকার নেই, আখেরাতের কোনো উপকার নেই।
৩. তারা জাকাত আদায় করে।
৪. তারা নিজেদের বিবাহিত সঙ্গী ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গে যৌনাচারে লিপ্ত হয় না।
৫. তারা আমানত রক্ষা করে।
৬. তারা অঙ্গীকার রক্ষা করে।
৭. তারা নামাজ আদায়ের ব্যপারে সর্বোচ্চ যতœবান থাকে। এ আয়াতে আরো বলা হয়েছে, উপরোক্ত গুণে গুণান্বিত মুমিনরাই জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে এবং তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে।

১২-২২নং আয়াতে অসীম ক্ষমতাশালী এক আল্লাহতায়ালার গুণাবলী প্রমাণ করার জন্য তিনটি দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে। মাতৃগর্ভে মানুষের জন্মের পর্যায়সমূহ আলোচনা করা হয়েছে। বৃষ্টিবর্ষণ এবং তা দ্বারা ভূমির পরিবর্তন আলোচনা করা হয়েছে। চতুষ্পদ জন্তুর দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষ এ তিনটি দৃষ্টান্ত নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবলে এক আল্লাহকে পাবে।

২৩-৩০নং আয়াতে হজরত নূহ (আ.) এবং তার জাতির বৃত্তান্ত উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত নূহ (আ.)-এর একত্ববাদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলে কিভাবে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে এসেছিল এবং কিভাবে হজরত নূহ (আ.) ও তার অনুসারীরা বেঁচেছিলেন তা আলোচনা করা হয়েছিল।

৪৫-৪৯নং আয়াতে হজরত মূসা (আ.) এবং ফেরাউন পরিষদের বৃত্তান্ত উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত মূসা (আ.) ও হজরত হারুন (আ.) ফেরাউনের কাছে আল্লাহর একত্ববাদের আহ্বান উপস্থাপন করলে ফেরাউন ও তার পরিষদ অবাক হয়ে আপত্তি উত্থাপন করে বলেছিল, আমরা কি এমন দু’ব্যক্তির ওপর ঈমান আনব যারা আমাদেরই মতো মানুষ?

অর্থাৎ ফেরাউন ও তার পরিষদের বিশ্বাস ছিল যিনি নবী হবেন তিনি আমাদের মতো মানুষ হবেন না।

৫১নং আয়াতে হালাল খাবার গ্রহণ করতে এবং সওয়াবের কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৫৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তারা কি মনে করছে যে, আমি তাদের যে ধন-সম্পদ ও জন-সম্পদ দিয়ে আসছি তা দ্বারা শুধুই তাদের উপকার করছি? (তা নয়) প্রকৃত বিষয়টি তারা উপলব্ধি করতে পারছে না। (তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে মাত্র। এগুলোর কারণে তারা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। উপকৃত হবে না। )

৫৬-৬১নং আয়াতে তাদের গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে যারা সত্যিকারার্থে তাদের জীবন দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। প্রকৃত উপকার ভোগী তারাই, যারা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে, আল্লাহর বিধানাবলীকে (কল্যাণকর) বিশ্বাস করে, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না, দান-খয়রাত করে, আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার ভয়ে তাদের মন ভীত থাকে।

৯৯-১১৫নং আয়াতে বিচার দিবস ও তার ভয়াবহতার চিত্র আঁকা হয়েছে।

সূরা আন নুর
সূরা আন নুর কোরআনে কারিমের ২৪তম সূরা। এটা মাদানি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৬৪টি। সূরা আন নুর পবিত্র কোরআনে কারিমের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সূরা। এ সূরার উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো-

২নং আয়াতে বিয়ে বহির্ভূত যৌনসঙ্গমের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরাধী যদি অবিবাহিত হয় তবে আল্লাহতায়ালা সরকারকে নির্দেশ দিচ্ছেন, অবিবাহিত ব্যভিচারীকে জনসম্মুখে একশ’ বেত্রাঘাত করার। তিনি স্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করে দিচ্ছেন, আল্লাহ ও পরকালের ওপর যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে তবে আল্লাহর বিধান প্রয়োগের ব্যপারে অপরাধীর প্রতি সদয় হবে না।

৪নং আয়াতে ব্যভিচারের অপবাদ প্রদানের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ যদি কোনো সতী নারীর ওপর স্বামী ভিন্ন অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌনসঙ্গমের অভিযোগ তোলে এবং চারজন প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়- তবে মহান আল্লাহ সরকারকে আদেশ করছেন অপবাদ আরোপকারীকে ৮০ বেত্রাঘাত করবে এবং আল্লাহ সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন কোনো আদালতে পার্থিব মামলায় এ ব্যক্তির কোনো স্বাক্ষ্য ভবিষ্যতে কখনো গ্রহণ করা হবে না।

৬-১০নং আয়াতে এমন স্বামীর বিধান নির্ধারণ করা হয়েছে, যে স্বামী নিজের স্ত্রীর ওপর ব্যভিচারের অভিযোগর আরোপ করেছে অথবা স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান নিজের ঔরসজাত হওয়ার অস্বীকার করেছে। আদাল তাকে লিয়ান করতে বলবে। বিশেষ ভাষায় শপথ করা ও নিজরে ওপর অভিশাপ বর্ষণ করাকে লিয়ান বলে। এ আয়াতগুলোতে লিয়ানের ভাষা শিখানো হয়েছে।

১১-২০নং আয়াতে উম্মত মাতা হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.)-এর ওপর ঘৃণিত মুনাফিকদের আরোপিত ব্যভিচারের অভিযোগকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এই সূরায় নবীপত্নীর চরিত্র নিষ্কলুষ ও পবিত্র হওয়ার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

৬ষ্ঠ হিজরিতে অনুষ্ঠিত বনু মুসতালিক যুদ্ধ থেকে ফিরতি পথের অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি ঘটনা এটা।
১৬নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা যখন এ বিষয়টি শোনেছিলে তখন এরূপ কেন বললে না যে, এমন কথা মুখ দিয়ে বের করা আমাদের জন্য শোভনীয় নয়। সুবহানাল্লাহ! এগুলো বলা তো গুরুতর অপরাধ।

১৯নং আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, যারা মুসলিমদের মধ্যে অশ্লীলতার কথা ছড়াতে চায় তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। এ আয়াতের শিক্ষা হলো- কোনো মুসলিম নারীর ব্যপারে ব্যভিচারের কথা কানে আসলে যতক্ষণ পর্যন্ত তা যথাযথভাবে চারজন স্বাক্ষী দ্বারা প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা প্রচার করা যাবে না, কারো কাছে বলে বেড়ানো যাবে না। গোপন রাখতে হবে।

২৭-২৯নং আয়াতে অপরের ঘরে প্রবেশের পূর্বে সালাম দিয়ে অনুমতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৩০নং আয়াতে পুরুষদের দু’টি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চোখের হেফাজত করা ও বিয়ে বহির্ভূত যৌনাচার না করা। ‍

৩১নং আয়াতে নারীদের চারটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চোখের হেফাজত করা, বিয়ে বহির্ভূত যৌনাচার না করা এবং পর পুরুষ থেকে হাত, পা ও মুখমন্ডল ব্যতীত বাকি দেহ আবৃত করে রাখা এবং জামার ওপর বাড়তি কাপড় দিয়ে বুক ঢেকে রাখা। এ অঙ্গগুলোকে প্রয়োজনের কারণে পর্দার এ বিধানের বাইরে রাখা হয়েছে। লেন-দেন, আদান-প্রদান, বিচার-আচার, স্বাক্ষ্য প্রদান ইত্যাদি কাজে মানুষের সামনে চেহারা-হাত খোলার প্রয়োজন হয়ে থাকে।

পর্দার বিধানটি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন স্তরের উল্লেখ হয়েছে। ১ম স্তর হল নারী ঘরে থেকে নিজের অস্তিত্বকেই আড়াল করে রাখবে। এ স্তরের আলোচনা এসেছে সূরা আহজাবের ৩৩নং আয়াতে। পর্দার ২য় স্তর হলো- প্রয়োজনে নারী বাইরে যেতে পারবে। বাইরে যদি তাকে চিহ্নত করা খুবই প্রয়োজন হয় (যেমন: বিচারিক কার্যক্রম, নিরাপত্তাজনিত কার্যক্র ইত্যাদি) তবে চেহরা ও হাত-পা খোলা রেখে বাকি দেহ ঢেকে রাখতে হবে। এ স্তরের আলোচনা এসেছে সূরা নুরের এই ৩১নং আয়াতে।

পর্দার ৩য় স্তর হলো- প্রয়োজনের কারণে বাইরে গেলে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নারী তার চেহারা ও হাত-পাসহ আপাদমস্তক ঢেকে রাখবে। এ স্তরের আলোচনা করা হয়েছে সূরা আহজাবের ৫৯নং আয়াতে। উক্ত আয়াতে জিলবাব পরিধান করে বাইরে যেতে বলা হয়েছে। সাহাবারা যা আমল করেছেন তা-ই কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যা ও অর্থ। এমনকি মুসলিম হতে হলে তাদের অনুসৃত পথেই কোরআন বুঝতে হবে। নবীজীর স্ত্রী, কন্যা এবং মহিলা সাহাবীরা রাস্তাঘাটে চেহারা খোলা রেখে চলা-ফেরা করতেন এমন কোনো প্রমাণ হাদিসে নেই। বরং তারা চেহারা ঢাকাকে অত্যাধিক গুরুত্ব দিতেন এর অসংখ্য প্রমাণ আছে।

৫৮নং আয়াতে বলা হয়েছে, অপরিণত সন্তান তিন সময়ে পিতা-মাতর ঘরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবে। ফজরের পূর্বে, দুপরে বিশ্রামকালে ও এশার নামাজের পরে।

৫৯নং আয়াতে বলা হয়েছে পরিণত সন্তান পিতা-মাতার ঘরে প্রবেশ করতে সবসময় অনুমতি নিবে।

সূরা ফুরকান
সূরা ফুরকান পবিত্র কোরআনে কারিমের ২৫তম সূরা। এ সূরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। আয়াত সংখ্যা ৭৭টি। এ সূরায় আল্লাহর একত্ববাদ ও নবীর রিসালতের ওপর কাফেরদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘন্টা, জুলাই ০২, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।