ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

তিউনিসিয়ায় রমজান জুড়ে চলে কোরআন প্রতিযোগিতা

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫
তিউনিসিয়ায় রমজান জুড়ে চলে কোরআন প্রতিযোগিতা

রমজানের তিউনিসিয়া যে কোনো সময়ের তিউনিয়া থেকে ভিন্ন; তিউনিসিয়ার ধর্মীয় অনুশাসন, আচার-অনুষ্ঠান ও বর্ণিল আয়োজনের জন্য। রমজান এলেই যেনো জেগে ওঠে মুসলিম তিউনিসিয়া।

সারা বছরের আড়ষ্টতা কাটিয়ে নতুন ধর্মীয় উদ্যোম দেখা যায় সর্বত্র। রমজান আগমনের পূর্বেই তার জন্য প্রস্তুতিসম্পন্ন করে মুসলমানরা।

কর্মব্যস্ততা কমিয়ে আনে এবং রমজানকে ইবাদত ও আনুগত্যের মধ্য কাটানোর জন্য তৈরি হয় তারা। তিউনিসিয়ার স্বচ্ছল মুসলিম পরিবারগুলো রমজানের আগমন উপলক্ষ্যে- ‘সালামিয়া’ নামক আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সালামিয়া অনুষ্ঠানে প্রসিদ্ধ কবি ও গায়েনদের আমন্ত্রণ করা হয়। তারা সেখানে হামদ, নাত ও ভক্তিমূলক সুফি গান পরিবেশন করেন। সুফি গান তিউনিসিয়ার মুসলিম সংস্কৃতির প্রাণ বলা যায়। রমজান ছাড়াও তারা সুফিগানের চর্চা করে। রমজানে শহরের মসজিদ, রাস্তা, ক্যাফে হাউজ ও জনসমাগমের স্থানগুলোতে বিশেষ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।

রমজানে তিউনিসিয়ান মুসলমানরা উদারভাবে দান করে। বিশেষত তারা রমজানে সমাজের ঋণগ্রস্থ মানুষের ঋণ পরিশোধ করে দেয়। কেউবা আবার ঋণের দাবী ত্যাগ করে। এতিম, অসহায় ও দরিদ্র্য মানুষকে নতুন কাপড় উপহার দেয়া তিউনিসিয়ান মুসলিমদের একটি সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। রমজানে মসজিদের মিনারে মিনারে মিনারে কোরআনের সুর ধ্বনিত হয়। মসজিদের মুসল্লিদের সমাগম বাড়ে। ইফতারের পর দ্রুত তারাবির জামাতে উপস্থিত হয়। প্রতিটি মসজিদে জোহর ও এশার নামাজের পর কোরআনের তাফসির ও হাদিসের দরস হয়। আসরের নামাজের পর মসজিদে কোরআন তেলাওয়াত ও জিকিরের মজলিস হয়। ইফতারের সময় সবার জন্য সম্মিলিত দোয়ার অনুষ্ঠান হয়।

রমজানে তিউনিসিয়ার প্রায় চারশ’ মসজিদে হিফজুল কোরআনের প্রতিযোগিতা হয়। যাতে স্থানীয় হাফেজসহ ১৫টি আরব রাষ্ট্রের হাফেজরা অংশগ্রহণ করেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্বয়ং বাদশাহ সভাপতিত্ব করেন এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন। প্রথম পুরস্কার হিসেবে আড়াই হাজার ইউএস ডলার প্রদান করা হয়।

তিউনিসিয়ান মুসলিমদের নিজস্ব রমজান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে। যার কিছু পারিবারিক আবার কিছু সামাজিক। যেমন, তারা রমজানে মেয়েদের বিয়ে দেয়। যেসব মেয়ের বাগদানসম্পন্ন হয় তাদেরকে ২৭ রমজানে পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার প্রদান করা হয়। স্থানীয় ভাষায় যাকে- ‘মাওসুম’ বলা হয়। কোনো কোনো পরিবার রমজানের ২৭ তারিখ ছেলেদের খতনা করায় এবং সাধারণ মুসলমানদেরকে সেহরি করায়।

রমজান মাসে খাবারের ক্ষেত্রেও তিউনিশিয়ানদের ভিন্নতা রয়েছে। রমজানের প্রথম রাত -যাকে স্থানীয়রা ‘লায়লাতুল কারশ’ বলে- সে রাত থেকে তারা মিষ্টান্ন তৈরি করে। এ রাতটিকে তারা উদযাপন করে। ইফতারে খেজুর, দুধ ও কিসমিস খেতে পছন্দ করে। থাকে বিভিন্ন ধরনের পিঠাও। সেহরিতে থাকে গোশতের যে কোনো আয়োজন। এছাড়া তারা রমজানে ‘রাফিসা’, ‘মাদমুজা’, ‘আসিদা,’ ‘বারকুকাস’ নামক বিশেষ খাবারের আয়োজন করে। তিউনিসিয়ান মুসলিমরা ইফতারের জন্য বিশেষ ধরনের রুটি ও হালুয়া তৈরি করে এবং তার প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করে। রুটি তাদের ইফতার আয়োজনের অন্যতম দিক।

১৮৮১ সাল থেকে তিউনিসিয়া ফ্রান্সের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯৫৬ সালে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। আধুনিক তিউনিসিয়ার স্থপতি হাবিব বুর্গিবা দেশটিকে স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেন এবং ৩০ বছর ধরে দেশটির রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিউনিসিয়া উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ইসলাম এখানকার রাষ্ট্রধর্ম; প্রায় সব তিউনিসীয় নাগরিক মুসলিম।

তিউনিসিয়া পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় স্থান। এর রৌদ্দ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া, নয়নাভিরাম বেলাভূমি, বিচিত্র ভূ-প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, সাহারার মরূদ্যান এবং সুরক্ষিত প্রাচীন রোমান প্রত্নস্থলগুলো তাদের কাছে বেশি পছন্দনীয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘন্টা, জুলাই ০২, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।