ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

নেক আমলের প্রতিদান যারা দিগুণ পাবেন

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৫
নেক আমলের প্রতিদান যারা দিগুণ পাবেন

আজ অনুষ্ঠিত হবে ১৭তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে ২০তম পারা।

শুরু হবে সূরা নামলের ৬০নং আয়াত থেকে। আজ সূরা নামল শেষ করে সূরা আল কাসাস সম্পূর্ণ তেলাওয়াত করা হবে। অতপর সূরা আনকাবুতের ৪৪নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে।

সূরা নামলের আজকের তেলাওয়াতকৃত অংশের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো-
৬৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হে নবী! আপনি বলে দিন, আল্লাহ ব্যতীত আকাশ ও জমিনের যত সৃষ্টি রয়েছে তারা কেউ কোনো গায়েবের (অদৃশ্যের) বিষয়ে অবগত নয়।
এ আয়াত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, নবী মুহাম্মদ (সা.) গায়েব (অদৃশ্যের কোনো খবর) জানতেন না। অদৃশ্যের খবর একমাত্র আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন

৮৯-৯০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি পরকালে নেকি নিয়ে আসবে সে তদপেক্ষা উত্তম বিনিময় পাবে। সে পরকালের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে থাকবে। আর যারা গুনাহ নিয়ে আসবে তাদের উপুড় করে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। তাদের বলা হবে, ওই কাজের শাস্তিই তোমাদের দেয়া হচ্ছে- যা তোমরা দুনিয়াতে করতে।

৯৩নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আপনার রব ওই সমস্ত কাজ সম্পর্কে অনবগত না যা তোমরা করছ।

সূরা আল কাসাস
সূরা আল কাসাস পবিত্র কোরআনে কারিমের ২৮তম সূরা। এ সূরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে, আয়াত সংখ্যা ৮৮টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

২৩নং আয়াতের দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, একদল রাখাল মহল্লার কূপ থেকে নিজেদের প্রাণীগুলোকে পানি পান করাচ্ছে। একটু দূরে দু’জন মেয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এমতাবস্তায় হজরত মূসা (আ.) মেয়ে দু’জনকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এখানে কেন? উত্তরে তারা জানাল, রাখাল ছেলেদের চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছি। আমাদের পিতা অত্যন্ত বৃদ্ধ।

অর্থাৎ আমরা আমাদের প্রাণীগুলোকে পানি পান করাব। কিন্তু আমরা ছেলেদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজে বিশ্বাসী নই। আমরা নারীদের স্বতন্ত্র অবস্থানে বিশ্বাসী। তাই ছেলেগুলো চলে যাওয়ার অপেক্ষায় দূরে দাঁড়িয়ে আছি। তদুপরি আমরা বাড়ির বাইরে বের হয়ে কর্ম করতে আগ্রহী নই। কিন্তু আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ। প্রাণীকে পানি পান করানোর মতো সামর্থ তার নেই। প্রাণীকে পান করানোর মতো অন্যকোনো পুরুষও আমাদের পরিবারে নেই।

এ দুই মেয়ে হলেন আল্লাহর নবী হজরত শোয়াইব (আ.)-এর কন্যা। হজরত শোয়াইব (আ.)-এর মেয়ে এবং হজরত মূসা (আ.)-এর উপরোক্ত কথোপকথনের দ্বারা কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হয়-

ক. নারীর ব্যয় নির্বাহের মতো সবল কোনো পুরুষ যদি না থাকে তবে সে নারী উপার্জনের জন্য বাইরে যেতে পারবে।
খ. নারীর কর্মস্থল পুরুষের সঙ্গে হবে না; বরং পৃথক হবে।
গ. সংসারের যে সব কাজ বাইরে যেয়ে সমাধা করতে হয়, বাড়ির পুরুষরা সেগুলোর ব্যবস্থা করবে।

২৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, অতপর এক মেয়ে লজ্জাবনত অবস্থায় হজরত মূসা (আ.)-এর কাছে গেল এবং বলল, আপনি কী আমাদের প্রাণীগুলোকে পানি পান করিয়েছেন। তাই বিনিময় প্রদানের জন্য আমাদের পিতা আপনাকে ডেকেছেন।

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা এবং বিনিময় প্রদান করা নবীদের বৈশিষ্ট্য। এবং এটা প্রত্যেক মানুষেরও নৈতিক দায়িত্ব।

২৬নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, এক মেয়ে বলল, হে আব্বা! তাকে আমাদের কাজে নিয়োগ করুন। কেননা, নিয়োগ পাওয়ার জন্য সে-ই অধিক হকদার যে সামর্থবান ও বিশ্বস্ত।

এ আয়াত থেকে বুঝে আসছে, কাউকে কোনো কাজের জন্য নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রধান দু’টি বিষয় লক্ষণীয়। সংশ্লিষ্ট কাজের বৈষয়িক সামর্থ্য থাকা এবং বিশ্বস্ত থাকা। কোনো যোগ্য প্রার্থী যদি অবিশ্বস্ত হয়, দুর্নীতিগ্রস্থ হয় তাকে কোনো অবস্থাতেই ওই কাজের জন্য নিয়োগ দেয়া যাবে না। আবার কোনো সৎ ব্যক্তির যদি সংশ্লিষ্ট কাজের যোগ্যতা না থাকে তবে তাকেও নিয়োগ দেয়া যাবে না।

৩৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হজরত মূসা (আ.) আল্লাহর কাছে আর্জি করছেন, আমার ভাই হারুণের ভাষা আমার চেয়ে বেশি প্রাঞ্জল। অতএব, তাকেও আমার সঙ্গে নবুওয়ত প্রদান করুন।

এ আয়াত থেকে বুঝে আসে, দ্বীনী খেদমতের জন্য পার্থিব যোগ্যতারও দরকার আছে। অতএব, যে ব্যক্তি নিজেকে ইসলামের খেদমতের জন্য উৎসর্গ করতে চায় তার উচিৎ সংশ্লিষ্ট কাজের ব্যপারে সর্বোচ্চ যোগ্যতা, নিপুণতা ও কর্মদক্ষতা অর্জন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। যোগ্যতা অর্জনের মেহনত করাটাও দ্বীনের খেদমতের অংশরূপে বিবেচিত হবে।

৫০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তারা যদি আপনার কথা না মানে তবে জেনে রাখুন, তারা নিজেদের মনের অনুসরণ করছে। যারা আল্লাহর নির্দেশিত পথ এড়িয়ে যেয়ে মন মতো চলবে তাদের চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে আছে?

৫৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, নেক আমলের প্রতিদান দ্বিগুণ করে তাদের দেয়া হবে যারা মানুষের দুর্ব্যবহারের ওপর ধৈর্যধারণ করে, সদ্বব্যহার দ্বারা অসদ্ব্যবহারকে প্রতিহত করে, দান করে, কোনো বেহুদা কথা শোনলে এড়িয়ে যায় এবং বলে দেয় আমাদের কাজের ফল আমরা ভোগ করব আর তোমাদের কাজের ফল তোমরা ভোগ করবে।

৭৬-৮২নং আয়াতে ঐতিহাসিক কৃপণ কারুনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। কৃপণতা ভালো নয় এটাই এই আয়াতের শিক্ষা।

সূরা আনকাবুত
সূরা আনকাবুত পবিত্র কোরআনে কারিমের ২৯তম সূরা। এ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ৬৯টি।

আজ তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে এ সূরার ৪৪নং আয়াত পর্যন্ত। আজকের তেলাওয়াতকৃত অংশে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

১২নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, কাফেররা মুমিনদের বলে, তোমরা যদি আমাদের পথ অনুসরণ কর তবে তোমাদের সব গুনাহ আমরাই বহন করব। (আল্লাহ বলছেন,) তারা তাদের কোনো গুনাহই বহন করতে পারবে না। তারা নিছক মিথ্যা কথা বলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘন্টা, জুলাই ০৪, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।