ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘রমজান ঐতিহ্য’

দক্ষিণ আফ্রিকায় ইফতার, তারাবি ও সেহরিতে থাকে ভিন্ন আয়োজন‍

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৫
দক্ষিণ আফ্রিকায় ইফতার, তারাবি ও সেহরিতে থাকে ভিন্ন আয়োজন‍

আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর পূর্বে স্পেন থেকে বিতাড়িত হলো একটি মুসলিম পরিবার। অথৈ সাগরে ভাসতে ভাসতে তাদের আশ্রয় হলো দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে।

অভিবাসী এই দলের নেতা হলেন শায়খ ইউসুফ সাকিক (রহ.)। তিনিই সর্বপ্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে আজান দেন। সেই থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানের যাত্রা শুরু। দক্ষিণ আফ্রিকায় শায়খ ইউসুফের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তার নামে স্ট্যাম্প ইস্যু করে বাজারে ছাড়া হয়।

এরপর বহু দেশের বহু মুসলিম অভিবাসী এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধিতে যুক্তরাজ্যের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাদের শাসনামলে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার খনিগুলোতে কাজ করার জন্য মুসলিম কলোনিগুলো থেকে প্রচুর শ্রমিক নিয়ে যায় সেখানে। যাদের অনেকেই সেখানে স্থায়ী হয়ে যায়। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম বসবাস করে। যা মোট জনসংখ্যার ২%।

সাউথ আফ্রিকার প্রথম মসজিদের নাম আওয়াল মসজিদ। যা আজ থেকে প্রায় তিন’শ বছর পূর্বে নির্মিত হয়। আওয়াল মসজিদের প্রথম ইমাম ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে আবদুস সালাম।

বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে ৫০০ মসজিদ, ৩০টি ইসলামিক সেন্টার ও ৮৫টি বিভিন্ন ধরনের ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও প্রায় মসজিদেই রয়েছে ইসলামি বিষয়ের পাঠদানের ব্যবস্থা। দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদের নিজস্ব সংবাদপত্রও রয়েছে। যেমন, আল উম্মাহ (ডারবান থেকে প্রকাশিত হয়), আল কলম (জোহান্সবার্গ) ও আল জমইয়্যা (কেপটাউন)। শেষের পত্রিকা দু’টি প্রকাশনার ২০ বছরপূর্তি উদযাপন করেছে। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার সংসদে ২২জন মুসলিম প্রতিনিধি রয়েছেন। যার মধ্যে ৬ আফ্রিকান মুসলিম পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যরা সাধারণ দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকা একটি বহুবর্ণী দেশ। আফ্রিকার সবচেয়ে স্থিতিশীল রাজনীতি ও অর্থনীতির দেশ হিসেবে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসহ ইউরোপ, আমেরিকা, আরব ও এশিয়ার প্রচুর সংখ্যক অভিবাসী। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্তমানে অভিবাসী জনগণের সংখ্যা ১ কোটি ২২ লাখ। যা জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ। আর স্থানীয় জাতি-গোষ্ঠিসহ মুসলমানরা ছড়িয়ে আছে সবার মাঝেই।

পবিত্র রমজান মাস দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে। বিভিন্ন শ্রেণী গোষ্ঠির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সম্মিলনে দক্ষিণ আফ্রিকায় রমজানের বর্ণিল উদযাপন হয়। ইফতার, তারাবি ও সেহরিসহ সবকিছুতেই চোখে পড়ে হরেক আয়োজন ভিন্ন উপস্থাপনা।

রমজানের পূর্বেই ইসলামিক সেন্টারগুলো রমজানের পবিত্রতা, গুরুত্ব ও ফজিলত সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা ও সাময়িকী বের করে তা মুসলিমদের মাঝে বিতরণ করে। মসজিদগুলোতে নেয়া হয় ইফতার ও তারাবির ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতিটি মসজিদেই তারাবির জামাত হয়। দুই শতাধিক মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় খতমে তারাবি। নারীরা মসজিদের বাইরে ভিন্ন জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করে। যেখানে মসজিদ নেই সেখানেও ইসলামিক সেন্টারগুলোর উদ্যোগে কোনো হল, কমিউনিটি সেন্টার বা বাড়ি ভাড়া করে তারাবির জামাতের ব্যবস্থা করা হয়।

রমজানে দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিমগণ সর্বতভাবে অনর্থক ও পাপ পরিহার করে চলেন। যেমন, সিনেমা, নাটক ও নিছক বিনোদনমূলক টিভি সিরিয়ালগুলো দেখেন না। প্রতিটি পরিবারে গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমের খতম করা হয়। রমজান মাসে সাউথ আফ্রিকানরা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে এবং মরহুম আত্মীয়দের কবর জিয়ারত করে মৃতদের জন্য দোয়া করে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম সংগঠনগুলো রমজানের পূর্ব থেকেই সমাজসেবামূলক কাজের জন্য প্রস্তুতি নেয়। স্থানীয় ধনী ও আরব শায়খদের সহযোগিতায় তারা আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত বিভিন্ন দেশে ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করে। প্রতি বছর রমজানে তারা দশ লক্ষাধিক মানুষকে আহার করায়। শীতবস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করে পাঁচ লাখ মানুষের মাঝে। স্থানীয় পর্যায়ে ও দরিদ্র্য এলাকার মসজিদসমূহে সাধারণ মানুষের জন্য ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘন্টা, জুলাই ০৫, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।