ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘রমজান ঐতিহ্য’

ভারতীয় মুসলমানদের রোজার হালচাল

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৫
ভারতীয় মুসলমানদের রোজার হালচাল

ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র।

অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল তথা বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।

ইসলাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের দ্বিতীয় বহুল-প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস। জনসংখ্যার বিচারে ভারতে মুসলমানদের স্থান হিন্দুদের ঠিক পরেই। ভারতের জনসংখ্যার মোট ১৭.৪ শতাংশ মুসলমান। ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা সমগ্র বিশ্বের নিরিখে তৃতীয় বৃহত্তম। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম সংখ্যালঘু-মুসলমান অধ্যুষিত রাষ্ট্রও বটে।

সপ্তম শতাব্দীর প্রথমভাগে আরব বণিক সম্প্রদায়ের ভারতে আগমনের সূত্র ধরে ভারতবাসী ইসলাম সম্পর্কে অবহিত হন। ৬২৯ সালে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর (৫৭১–৬৩২ খ্রি.) জীবদ্দশাতেই ভারতে প্রথম মসজিদ স্থাপিত হয়।

সমগ্র বিশ্বের ন্যায় পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে ভারতেও। দেশটির কোটি কোটি মুসলমানের কাছে রমজান মাস কেবল পানাহার থেকে বিরত এবং ভোজ-উৎসব নয়, বরং নামাজ পড়া আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। ‍

বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে রোজা এক অন্যমাত্রা এনেছে। পত্রিকায় দেখে যায়, অনেক হিন্দু রোজা রাখে। তারা ইফতারের আয়োজন করে, এবং মুসলমনাদের ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। খবরে প্রকাশ, কয়েক বছর আগে তিহার জেলে কয়েকজন মুসলিম বন্দীর সঙ্গে সহমর্মিতা জানাতে পুরো রমজান না খেয়ে থেকেছে অনেক হিন্দু কয়েদি।

‘এই পবিত্র মাসে আমি পুরোপুরি বদলে যাই। আধ্যাত্মিক পরিবেশ আমাদের জীবনকে সত্যিই বদলে দেয়,’ বলছিলেন আসিফ আনসারি। এই মুসলিম তরুণ অন ইসলাম ডটনেটকে জানান, তিনি এই মাসে এক ওয়াক্ত নামাজও কাজা করেন না।

তিনি বলেন, ‘আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারব না। আমি সারাদিন রোজা রেখে ও তারাবি নামাজ পড়তে বিপুল জীবনীশক্তি পাই। ’

ভারতে পুরো রমজান মাসে মসজিদগুলো মুসল্লিদের চাপে থাকে একেবারে ঠাসা, বিশেষ করে তারাবির নামাজে মসজিদে ঠাঁই নেই অবস্থার সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো স্থানে মসজিদ ছাড়িয়ে রাস্তায় পর্যন্ত কাতার ছড়িয়ে পড়ে। বিপুলসংখ্যক মানুষ নামাজের জামাতে শরিক হয়, তার শান্তি আর সৌহার্দ্যের জন্য মোনাজাত করে।

শরিফ খান নামের একজন জানান, ‘আমি মসজিদেই তারাবির নামাজ পড়তে ভালোবাসি। এখানে ২৭ রমজানের মধ্যেই পবিত্র কোরআন পুরোপুরি তেলাওয়াত হয়ে যায়। এই মাসে রাতে নামাজ পড়ার সময় আমি সত্যিই আল্লাহর সান্নিধ্য অনুভব করি। ’

ভারতের মসজিদগুলোতে সাধারণভাবে ২৭ রমজানের মধ্যেই তারাবিতে পুরো কোরআন খতম হয়। তবে কোনো কোনো মসজিদে প্রতি ৫ রোজায় একবার পবিত্র কোরআন পাঠ সম্পন্ন করা হয়। সময়-সুযোগের আলোকে মুসল্লিরা সংশ্লিষ্ট মসজিদে তারাবি আদায় করেন। কোনো কোনো স্থানে মসজিদ কমিটি বিশেষ নামাজের পর স্থানীয় ভাষায় পবিত্র কোরআনের তাফসির মাহফিলের আয়োজন করেন।

ভারত হিন্দুপ্রধান দেশ। মুসলমানরা কি রোজায় বিশেষ কোনো সমস্যায় পড়েন? এ বিষয়ে মধ্যপ্রদেশের মুফতি শিষ মাহমুদ বলেন, মুসলিম দেশগুলোতে লোকজন এই মাসে কিছুটা ছাড় পান। কিন্তু ভারতে মুসলমানদের কর্মস্থলে নির্ধারিত কাজ শেষ করে নামাজে শরিক হতে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে হয়। তবে অনেকেই আবার ছাড় পান। সব মিলিয়ে পরিবেশ ভালো।

রমজান মাসে তারাবির নামাজে যাতে বেশি মুসুল্লি জামাতে শরিক হতে পারে, সেজন্য মসজিদে মসজিদে নামাজের সময়সূচি নির্ধারণের সময় কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। ভারতের প্রায় অঞ্চলেই মাইকে আজান দেয়া নিষিদ্ধ বিধায় সেহরির সময় ঘুম থেকে উঠতে অনেক সময় বিপাকে পড়তে হয়। সেটা অবশ্য মুসলমানরা অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছেন।

তবে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, ভারতে রোজা পালন নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। রোজাদারের সামনে পারত পক্ষে কেউ খায় না। এভাবেই রমজান মসে ছড়িয়ে পড়ে সৌহার্দ্য, বন্ধুত্ব আর সম্প্রীতির বারতা।

প্রসঙ্গত, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পবিত্র রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানান এবং ভারতের কারগারে আটক কয়েকজন পাকিস্তানী জেলেকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন রমজানের শুভেচ্ছা হিসেবে।

সব মিলিয়ে বলা চলে, বহু সংস্কৃতির দেশ ভারতে মুসলমানদের ভালোই কাটছে রমজান। প্রত্যাশ করি এ ধারা অব্যাহত থাকুক অনন্তকাল।

-অন ইসলাম অবলম্বনে

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘন্টা, জুলাই ০৬, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।