ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

বিচিত্র আনন্দের উত্স ঈদ

ড. বিএম মফিজুর রহমান আল্-আযহারী, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৫
বিচিত্র আনন্দের উত্স ঈদ

নিরবচ্ছিন্ন কর্মব্যস্ততা মানব জীবনের সব হাস্য-রস, আনন্দ-স্ফূর্তি নিঃশেষে শুকিয়ে নেয়। কর্মের গভীর চিন্তায় নিরন্তর ভারাক্রান্ত জীবনে কর্মশক্তির অবক্ষয় ঘটে।

ফলে জীবন হয়ে যায় ঊষর-ধূসর মরুভূমির মতো রূপ-রস-গন্ধহীন। অথচ আনন্দের এক পশলা হালকা বারিপাত মানস-প্রান্তরে রচনা করতে পারে ফুলে-ফলে সুশোভিত স্নিগ্ধ গুলবাগিচা। তাই অনাবিল আনন্দ-বিনোদন প্রতিটি মানুষের জীবনে অন্তঃসলীলা ফল্গুধারার মতো অপরিহার্য। বস্তুত হর্ষোত্ফুল্ল মনের পক্ষেই অধিক কর্মক্ষম হওয়া সম্ভব। ঈদের আনন্দ রহস্য এখানেই নিহিত। যার মধ্যে রয়েছে বহুমুখী বৈশিষ্ট্য, শিক্ষা ও কর্মের অপূর্ব সমাহার। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

বিনোদনে নৈতিকতা
মানুষ ‘দেহ ও আত্মার’ সমন্বয়ে এক অনন্য সৃষ্টি। একটি তার বস্তু সত্তা। অন্যটি অতীন্দ্রিয় প্রাণসত্তা। দেহের বিনোদন বস্তুগত ভোগ-বিলাস তথা ইন্দ্রিয়পরায়ণতা। আর আত্মার বিনোদন ইন্দ্রিয়-সংযমের মাধ্যমে ইবাদতের পরম উপলব্ধি। ইসলামি ঈদে এ দুয়ের ঘটেছে অপূর্ব সমন্বয়। এই বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটে যেভাবে-

দৈহিক সাজসজ্জা
হজরত হাসান (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের আদেশ করেছেন, আমরা যেন দুই ঈদে আমাদের সাধ্যানুসারে উত্তম পোশাক পরিধান করি এবং উত্তম সুগন্ধি ব্যবহার করি। ’

ভোজনোত্সব ও পানাহারে বৈচিত্র্য
ঈদ আল্লাহতায়ালার আতিথেয়তা। তাই আমাদের উচিত এ সময়ে রুচিসম্মত হালাল উপাদেয় ও সুস্বাদু খাদ্য-ব্যঞ্জন দিয়ে আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণের মাধ্যমে ভোজনোত্সবের আয়োজন করা। এতে আনন্দানুভূতির বিনিময় ঘটে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও সামাজিক সংহতি হয় সুদৃঢ়। সর্বোপরি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় অন্তরাত্মা হয় প্রাণবন্ত। এ কারণেই ঈদের দিনে রোজা রাখা ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ভোজন বিনোদনের নামে সীমালঙ্ঘন ও নেশার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার অনুমোদন নেই এখানে। যা অনেক ধর্মে আনন্দ-উত্সবের অপরিহার্য অংশ। পবিত্র কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘আর যারা কাফের, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুষ্পদ জন্তুর মতো আহার করে। তাদের বাসস্থান জাহান্নাম। ’ –সূরা মুহাম্মদ: ১২
নির্দোষ হাস্য-রস ও বিনোদন বৈচিত্র্য

বৈধ ও নির্দোষ আনন্দ-ফুর্তি, খেলাধুলা, ক্রীড়া-কৌতুক, হাস্যরস, পরিচ্ছন্ন ভাবধারা তথা নৈতিক মূল্যবোধ ও ঈমানি ব্যঞ্জনাসমৃদ্ধ শিল্প-সঙ্গীত- এগুলো ইসলামে ঈদের দিনে আচরিত বৈধ আনুষ্ঠানিকতার অনুষঙ্গ। কিন্তু বিনোদনের নামে শুধু নগ্নতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, বেপরোয়া যৌন উস্কানি ও পাশবিকতার কোনো স্থান নেই ইসলামে। ঈদ-বিনোদনে পাপাচ্ছন্ন আয়োজন শয়তানের মানবতাবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ। সিয়াম সাধনার প্রভা এখনও যার ললাটে দীপ্তিমান, সে মুমিন ঈদ-বিনোদনের নামে অশ্লীলতার চর্চা করবে, তা অকল্পনীয়।

নফল ইবাদত
ঈদ নফল ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুবর্ণ সুযোগ। এ মর্মে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত্রিদ্বয় আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে জাগরিত রাখবে, তার অন্তর সে দিন মরবে না যে দিন অন্তরগুলো মৃত্যুবরণ করবে’ অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা মৃত্যু-পরবর্তী কঠিন অবস্থাগুলোতে বিশেষ করে হাশরের দিন তার হৃদয়ে অবিচলতা, গভীর আত্মপ্রশান্তি এবং তাকে সব ধরনের ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করবেন।

আল্লাহু আকবার ধ্বনি
‘আল্লাহু আকবার’ স্রষ্টার মাহাত্ম্য প্রকাশের এক পরম সত্য অভিব্যক্তি। মুমিনের হৃদয়স্পন্দন যে সুর তরঙ্গে অনুরণিত। বেহেশতি সমীরণে স্নিগ্ধ, আত্মার অফুরন্ত প্রশান্তির এক চিরন্তন বিনোদন। তাই দুই ঈদ আনন্দের সঙ্গে তাকবির ধ্বনিকে সংযোজিত করা হয়েছে। তাকবির ইসলামি ঈদের ভূষণ। ঈদের দিনগুলোতে মুসলিমদের হৃদয়-নিঃসৃত তাকবির ধ্বনি আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে।

ঈদের নামাজ ও শুভেচ্ছা বিনিময়
ঈদের নামাজ আল্লাহর পথে এগিয়ে যাওয়ার এক সুমহান ঐক্যবদ্ধ প্রতিশ্রুতি। যেথায় নেই হিংসা-বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব-কলহ, ভেদ-বৈষম্য আর অহঙ্কারের এতটুকু কালিমা। আছে শুধু পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের ছোঁয়া। হৃদ্যতার সুরভিমাখা নির্মলতার উষ্ণ পরশ। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত ঈদের নামাজ ঈদ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। নিষ্পাপ কোলাহলে ঈদগাহ ভরে ওঠে এক পুলকিত ভাবধারায়। নামাজ শেষে পারস্পরিক ঈদ-শুভেচ্ছা বিনিময়ে যেন ধূলির ধরায় নেমে আসে স্বর্গ। ঐশী বিনোদনের এক অপূর্ব দৃশ্যপট!

পুরস্কারপ্রাপ্তির আনন্দ
ঈদ সিয়াম সাধনার পুরস্কার বিতরণ দিবস। তাই তো ঈদের প্রতি মুহূর্ত মুমিনের কাছে হয়ে ওঠে আত্মিক-বিনোদনের মহিমায় উদ্ভাসিত। হাদিসে এসেছে, ‘এক মাস রোজা পালন করে মুসলিমরা যখন ইদগাহ পানে বের হয়, আল্লাহতায়ালা তখন ফেরেশতাদের ডেকে বলেন- হে ফেরেশতাগণ! প্রত্যেক শ্রমিক (শ্রম শেষে) তার পারিশ্রমিক পেতে চায়। আমার ওইসব বান্দা যারা এক মাস রোজা পালন করে তাদের ইদগাহে চলছে, তারা তাদের পুরস্কার পেতে চায়। তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। তখন একজন ঘোষক উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করতে থাকে, হে উম্মতে মুহাম্মদ! তোমরা তোমাদের ঘরে ফিরে যাও। তোমাদের অপরাধগুলো পুণ্যে পরিণত করা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহতায়ালা বলেন, হে আমার (প্রিয়) বান্দারা! তোমরা আমার জন্যই রোজা রেখেছ, আবার আমার জন্যই তা ভেঙেছ, যাও নিষ্পাপ হয়ে ফিরে যাও, আমি তোমাদের পাপরাশি মার্জনা করে দিলাম। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘন্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।