রমজান মাসে মুসলমানদের ঘরে ঘরে দীর্ঘ একমাস চলে সিয়াস সাধনা। সব প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে।
কিছু কিছু রোগ আছে যার জন্য সব সময় চিকিৎসা নিতে হয়। কিংবা নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। সেসব ক্ষেত্রে অনেকেই রোজা রাখা সম্ভব নয় বলে মনে করেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগই দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর ওষুধ গ্রহণ করে রোজা রাখা সম্ভব। এসব ওষুধের কোনোটি দিনে একবার, আবার কোনোটি দিনে দু’বার খেলেই যথেষ্ট। কাজেই রোজা রেখেও রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব কিংবা চিকিৎসা চলা অবস্থায়ও রোজা রাখা যায়।
তবে সব ক্ষেত্রেই তা সম্ভব নয়। কোনো রোগে তীব্রভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকলে রোজা রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের মতে যেসব ক্ষেত্রে রোজা রাখা সম্ভব হতে পারে-
পেপটিক আলসারের রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই রোজা রাখলে ভালো বোধ করেন। কারো কারো ক্ষেত্রে রোজা রাখলে সমস্যাটা বেড়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখাটা অনুশীলনের ওপর নির্ভর করে। রোজা রাখতে চেষ্টা করে অসুবিধা দেখা না দিলে রোজা রাখা যাবে। পেপটিক আলসার বা এ জাতীয় স্বাস্থ্য সমস্যায় ব্যবহৃত ওষুধ সাধারণত দৈনিক ২ বারের বেশি খেতে হয় না। কাজেই রোজা রাখতে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মুখে ওষুধ গ্রহণ করছেন কিংবা খাদ্য তালিকা মেনে চলছেন তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা ভালো; বিশেষ করে ওজন কমানোর দিক থেকে। তবে হাইপো গ্লাইসেমিয়া হয়ে যায় কি-না সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। তবে যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
রোগের দোহাই দিয়ে অযথা নিজ সিদ্ধান্তে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকার কোনো মানে হয় না। তার আগে একবার জেনে নিন আপনার চিকিৎসক এ সম্পর্কে কি বলেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে সাহরি ও ইফতারের অধিকাংশ খাবারই হচ্ছে তেলে ভাজা। যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাছাড়া সাহরি ও ইফতারের খাবার নির্বাচনে রোজাদারের বয়স ও শারীরিক অবস্থাকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। সাহরিতে ভাত থাকবে, ভাত নির্ভেজাল খাবার, ভাতের সঙ্গে হাই প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখা উচিত।
হাইপ্রোটিনযুক্ত খাবারের তালিকায় রয়েছে- মাংস, ডিম, মাছ ইত্যাদি। তবে যাদের হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা গরু, খাসির পরিবর্তে মুরগি, মাছ কিংবা কুসুম ছাড়া ডিম খেতে পারেন।
ডালকে বলা হয় গরিবের প্রোটিন। ডাল উদ্ভিদ প্রোটিন বলে এর সঙ্গে ক্ষতিকর চর্বি নেই। সাহরিতে যে কোনো একটি সবজি রাখা উচিত। সবজিকে সংযোজন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করা। সাহরিতে দুধ-কলা অনেকের পছন্দ। দুধ-কলা মসলাহীন বলে পাকস্থলীতে উত্তেজনা সৃষ্টির ঝুঁকি কম থাকে।
যাদের পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হয় তারা গ্যাস উদ্রেককারী খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন। যাদের চা পানের অভ্যাস আছে তারা সাহরিতে চায়ের আয়োজন রাখতে পারেন।
ইফতারে উত্তেজক খাবার বর্জন করতে হবে। ইফতার শুরু করতে হবে তাজা ফলের রস কিংবা লেবুর রসের শরবত দিয়ে। বাজারের রঙিন শরবতে বর্জন করা উচিত। কারণ রঙিন শরবতে ব্যবহৃত হয় কৃত্রিম রং যা ক্যান্সারের উদ্রেককারী বলে স্বীকৃত। যে কোনো তাজা ফলের শরবত শরীরকে তাজা রাখবে শরীরে মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করবে।
শরবতের পর রাখা যেতে পারে যে কোনো মৌসুমি ফল। ফল সহজপাচ্য ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পূরণ করে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ইফতারির প্রচলিত মেন্যুর মধ্যে বুট, ছোলা ও মুড়ি স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর কিন্তু তেলেভাজা পিঁয়াজু ও বেগুনি জাতীয় খাবার গ্যাসের উদ্রেক করে বদহজমের সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া এসব খাবার পুরনো তেলে ভাজা হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। দেখা গেছে বার বার গরম করা তেলে ক্ষতিকর পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়। যার মধ্যে বেলজোপাইরিনের মাত্রা খুব বেশি থাকে। বেনজোপাইরিন ক্যান্সারের উদ্রেক হবে।
ইফতারে প্রচুর পানি পান করতে হবে। খেতে হবে কম মসলাযুক্ত খাবার। ইফতারে মিষ্টি জাতীয় খাবার রাখাও মন্দ নয়, যদি তা খেতে চিকিৎসকের নিষেধ না থাকে। তবে বেশি খাওয়া যাবে না। ইফতারে খেজুর-খুরমা রাখাও ভালো। খুরমা খুব দ্রুত শরীরের গ্লকোজ ঘাটতি মেটাতে পারে ও শরীরের দুর্বলতা দূর করে।
পরিশেষে বলা যায়, রোজা যেহেতু আল্লাহতায়ালার জন্য এবং আল্লাহ এর পুরস্কার দেবেন। দৈহিক রোজার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরের রোজাটাই আসল, তাই কোনো অজুহাত বা আলস্য করে রোজা পালন থেকে বিরত থাকা উচিত নয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৬
এমএ/