ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

রমজানে ইরানিরা রাতে দীর্ঘ সময় কোরআন তেলাওয়াত করেন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৩ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭
রমজানে ইরানিরা রাতে দীর্ঘ সময় কোরআন তেলাওয়াত করেন রমজানে ইরানিরা রাতে দীর্ঘ সময় কোরআন তেলাওয়াত করেন

ইরানের ধর্মপ্রাণ মানুষ রোজা রাখে, নামাজ পড়ে। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্ম পালন নিয়ে তেমন কোনো কড়াকড়ি নেই বললেই চলে।

ধর্মপালন একেবারেই ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে; রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ নেই অবশ্য, ধর্মপালন বা ধর্মীয় আচার-আচরণ কোথাও কোথাও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।

রোজা শুরুর আগে ইরানের লোকজনের মধ্যে এক ধরনের সাড়া পড়ে যায়।

তবে বাংলাদেশে যেমন পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে সেই ভয়ে লোকজন আগেই বড় রকমের কেনাকাটা করে রাখার চেষ্টা করে ইরানে তেমনটা দেখা যায় না। রমজানে ইরানের বাজারে পণ্য সরবরাহ আর দশটা মাসের মতোই স্বাভাবিক থাকে। খেজুর কিংবা গোশতের দাম সামান্য কিছু বাড়ে।

কিন্তু সরকারি বাজারগুলোতে রমজান উপলক্ষে দাম ও মানের দিকটি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হয়। রোজার সময় সাধারণ মানুষের ওপর যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে, সে দিকে বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি বাজারে মাঝে-মধ্যে পণ্যমূল্যে কিছুটা ভর্তুকি দেওয়া হয়। সরকারি বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন রকমের দুধ, দই ও দুগ্ধজাত পণ্যের প্রচুর সরবরাহ থাকে। থাকে অন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহও।

ইরানের লোকজন সাধারণত ইফতারিতে ‘অশ’ বা স্যুপ, খেজুর, কলা, দুধ, পনির, রুটি, মধু, আপেল, চেরি, তরমুজ, তলেবি বা এক ধরনের বাঙ্গি ও আঙ্গুর খেয়ে থাকেন। গরমের এই সময়ে নানা ধরনের পিচ ফল পাওয়া যায়। ইফতারিতে অনেকটা অবশ্যম্ভাবী উপাদান হিসেবে থাকে টমেটো, শসা, লেটুসপাতার সালাদ, পুঁদিনা ও ধনিয়া পাতাসহ নানা রকমের সুগন্ধযুক্ত পাতা।

রমজানে ইরানিরা রাতে দীর্ঘ সময় কোরআন তেলাওয়াত করেন
আর থাকে এক রকমের জিলাপি। ইরানিরা জিলাপিকে বলে জুলবিয়া। এই জিলাপি দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের জিলাপির মতো। তবে এতে আড়াই প্যাঁচ থাকে না, প্যাঁচের সংখ্যা অসংখ্য এবং আকৃতি তুলনামূলকভাবে অনেক চিকন। ইরানিরা হালিমও খেয়ে থাকে ইফতারিতে। তবে এই হালিমের স্বাদ বাংলাদেশের হালিমের মতো নয়। এটা কিছুটা টক জাতীয়। ছোট চাল, চিনি আর জাফরান দিয়ে রান্না হয় এক ধরনের ক্ষির বা পায়েশ যার ইরানি নাম ‘শোলে জার্দ। ’ এটিও ইফতারির একটি নামিদামি উপাদান।

মসজিদে কিংবা আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে ইফতারি দেওয়ার রেওয়াজ ইরানেও রয়েছে। মাশহাদে ইমাম রেজার মাজারে প্রতিদিন অন্তত ১২ হাজার মানুষের ইফতারির যোগান দেওয়া হয়।

রোজা উপলক্ষে ইরানের অফিস-আদালতের সময় পরিবর্তিত হয়। শেষ বিকালে রাজধানী তেহরানের রাস্তাগুলো তুলনামূলক ফাঁকা থাকে। রোজায় শহরের রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে পর্দা টেনে দেওয়া হয়। তবে রুটির দোকানগুলো খোলা থাকে। কারণ তেহরানের পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে রুটির দোকান। যেগুলোর ওপর সাধারণ মানুষ নির্ভরশীল। রোজার সময় যেসব শিশু, বৃদ্ধ কিংবা অসুস্থ নারী-পুরুষ রোজা রাখতে পারেন না- তাদের খাবারের যোগান আসে এই রুটির দোকান থেকে। তবে, ইফতারির আগে এসব রুটির দোকানে ভিড় একটু বেশি হয়।

ইফতারি শেষে ইরানে শিয়া মুসলমানদের মধ্যে নেই তারাবির ব্যস্ততা। কারণ শিয়া মাজহাবে তারাবি নামাজের বিশেষ গুরুত্ব নেই। তবে তারা রাতে কোরআন তেলাওয়াত করে।

ইরানের ৮৫ ভাগ লোক শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত আর সুন্নি মাত্র ১৫ ভাগ। শিয়া অধ্যুষিত দেশটিতে রমজানের ২১তম দিনে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদত বরণের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। শিয়া ধর্মমতে, রমজানের ১৯ তারিখে হজরত আলী (রা.) ছুরিকাহত হন এবং ২১ তারিখে মারা যান। ইরানিরা অনেক সময় এই তিন দিনকে ‘পুনরুত্থানের রাত’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে।

এই দিনগুলো শোকের কাল হিসেবে পালন করা হয়। কেউ কেউ রাস্তায় নেমে হজরত আলী (রা.)-এর কষ্ট আর তার মৃত্যুতে প্রকাশ্যে শোক পালন করেন। অন্যরা একান্তে শোক পালন করেন বা স্থানীয় মসজিদে অন্যদের সঙ্গে মিলে রাত জেগে নামাজ পড়েন, কোরআন তেলওয়াত করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।