কোরআনে কারিমে একটি সূরা নাজিল হয়েছে এ প্রসঙ্গে। এতে ঘোষণা করা হয়েছে লাইলাতুল কদরের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি।
হাদিস শরিফেও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোনটি কদরের রাত। নিঃসন্দেহে এতে অনেক রহস্য ও তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। তবে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন। ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে রাতটি কাটাতে পারলে প্রকৃত সুফল পাওয়া যায়।
কোরআনে কারিমের বর্ণনা অনুযায়ী এই এক রাতের ইবাদতের বিনিময়ে হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াবের চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। হয়তো আল্লাহতায়ালা ও তার রাসূল (সা.) চাননি মুসলমানরা একটি রাতের ভরসায় বসে থেকে সারা বছর বা সারা মাস অবহেলায় কাটিয়ে দিক। এ জন্য এটাকে রহস্যময় করে রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমেই মূল্যবান কিছু অর্জন করতে হয়। যে রাতের মূল্য হাজার মাসের চেয়ে বেশি তা যদি সহজে পাওয়া যেত তাহলে মানুষ হয়তো এটাকে বেশি গুরুত্ব দিত না। তাই তা অনির্দিষ্ট করে রেখে মানুষকে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে।
কেউ কেউ রমজানের যে কোনো অংশে এ রাত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু অধিকাংশ ইসলামি স্কলারের মতে রমজানের শেষ দশকেই তা লুকায়িত রয়েছে। আবার কারও কারও মতে এ রাতের তারিখ পরিবর্তনশীল। কোনো বছর ২১, কোনো বছর ২৩, কোনো বছর ২৫, কোনো বছর ২৭ আবার কোনো বছর ২৯ তারিখের রাত লাইলাতুল কদর হয়।
কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ের অনেক মনীষী রমজানের ২৭ তারিখের রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এ ব্যাপারে সাহাবিদের মধ্যে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ কারি হিসেবে আখ্যায়িত হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি জোর দিয়ে বলতেন, রমজানের ২৭তম রাতই কদরের রাত। অন্য দিকে ফিকাহ ও ইজতেহাদের জ্ঞানে ৪ খলিফার পরেই যার স্থান, সেই হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, এটা রমজানের বাইরেও হতে পারে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর মন্তব্য সম্পর্কে হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলতেন, আমার ভাই আবদুল্লাহ ভালোভাবেই জানেন, এটা রমজানের মধ্যে এবং তা ২৭তম রাত। কিন্তু লোকেরা এ রাতের ভরসায় বসে থাকবে এবং আলসেমিতে সারা বছর ও সারা রমজান মাস কাটিয়ে দেবে এ ভয়ে তিনি তা লোকদের জানাতে চান না।
হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন ২৭ রমজানের রাতটিই কদরের রাত? জবাবে তিনি বলেন, এ রাতের যেসব আলামত হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের বলেছেন আমরা সেগুলো ২৭ তারিখে পেয়েছি।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন, কদরের রাতের যে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য তার মূল উপাদান কোরআনে কারিম। শেষ নবীর উম্মতের জন্য জীবনব্যবস্থার চূড়ান্ত নির্দেশনা হিসেবে কোরআনে কারিম নাজিলের সাথে রাতটি সম্পর্কিত হওয়ায় এই মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব এ রাতের সুফল পুরোমাত্রায় পাওয়ার জন্য কোরআনের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করাই আসল উপায়।
কোরআন পাঠ ও অধ্যয়ন এবং কোরআনি বিধান ও নির্দেশনা অনুসরণেই নিহিত রয়েছে মানুষের প্রকৃত সাফল্য। লাইলাতুল কদরে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ও তাসবিহ-তাহলিলের সঙ্গে যেমন অতীত জীবনের পাপরাশি মোচনের জন্য মহান প্রভুর কাছে আকুল আবেদন জানাতে হবে তেমনি তার তওফিক প্রার্থনা করতে হবে কোরআনকে জীবনের দিশারি হিসেবে মেনে চলার। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিত দান করুন। আমিন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এমএইউ/