ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্য তিতাখাঁ ও মিতাখাঁ জামে মসজিদ

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্য তিতাখাঁ ও মিতাখাঁ জামে মসজিদ

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের ঐতিহাসিক ও নান্দনিক দু’টি মসজিদ তিতাখাঁ জামে মসজিদ ও হযরত আজিম শাহ জামে (মিতাখাঁ) মসজিদ বা দায়রা মসজিদ।  

মাত্র একশ’ মিটারের মতো দূরত্বে অবস্থিত মসজিদ দু’টির সঠিক নির্মাণ সাল জানা নেই।

তবে প্রাচীন এ মসজিদ দু’টি ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য। লোকমুখে প্রচলিত আছে বিভিন্ন কাহিনী।  

মসজিদ দু’টি জেলা শহরের উত্তর তেমুহনীর দক্ষিণে বাজার সড়কে বাঞ্চানগর এলাকায় অবস্থিত। পাশাপাশি অবস্থানে স্থাপিত মসজিদ দু’টির একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব একশ’ মিটারের মতো।  

ঠিক কত বছর আগে মসজিদ দু’টি নির্মাণ করা হয়েছিল, তার সঠিক তথ্য এখনো অজানা রয়ে গেছে। জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় পাঁচশ’ বছর আগে মুঘল আমলে মসজিদগুলো তৈরি করা হয়েছে। কারণ মসজিদের নান্দনিক নির্মাণ শৈলী ও কারুকার্যের সঙ্গে মুঘলদের তৈরি স্থাপনার মিল পাওয়া যায়।

তিতাখাঁ জামে মসজিদ: লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেহমুনীর দায়রা বাড়ির পাশে ইসলাম বক্সভূঞা বাড়ির সামনে ১২২৯ হিজরি সনে এ মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়। তখন এ জায়গাটি একটি ঘন জঙ্গল ছিল।  

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হযরত আজিম শাহ (র.) বাগানের মধ্যে মসজিদটি আবিষ্কার করেন। কিন্তু মসজিদটির নাম কেন তিতাখাঁ রাখা হয়েছে, তার সঠিক কোনো তথ্য কেউ দিতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে, জনৈক তিতাখাঁ এ মসজিদটি প্রথমে নির্মাণ করেছিলেন। ওই সময়ে জনৈক ওমর আলী নামে এক কারিগর মসজিদটির কারুকার্য করেন।  

মসজিদের চার কোণায় চারটি ছোট মিনার, ওপরের প্রথম অংশে তিনটি বড় গম্বুজ রয়েছে। ৪৯ ফুট লম্বা এবং ৪২ ফুট প্রস্থের এ মসজিদটির ভেতরে দেয়ালে লতাপাতা, শৈল্পিক কারুকার্যের জন্য খ্যাতি লাভ করেছে। ভেতরে এবং বাইরের নকশায় ব্যবহার করা হয়েছে ভাঙ্গা সিরামিকের টুকরো।  

একতলা বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল ইট, চুন এবং সুরকি দিয়ে। মসজিদের ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়েছে কাঠের কাঠামোর ওপর ইট বসিয়ে, তাতে চুন এবং সুরকির প্রলেপ দিয়ে।  

বর্তমানে সংস্কারের কারণে মসজিদের কিছু নকশা পরিবর্তন হয়েছে। ওপরে এবং সামনের অংশে নতুন কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।  

প্রাচীন এ মসজিদটিতে এক সময় সব ধর্মের মানুষ উদার হাতে দান করতেন।  

মসজিদের মোয়াজ্জিন শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি গত ২০ বছর ধরে এ মসজিদের দায়িত্বে আছি। প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্তে এ মসজিদে কয়েকশ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। মসজিদের ভেতরে একসঙ্গে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মসজিদটি পরিচালিত হয়ে আসছে।  

স্থানীয়রা জানান, শৈল্পিক কারুকার্যের কারণে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন মসজিদটি দেখতে আসেন এবং সেখানে নামাজ আদায় করেন।  

আজিম শাহ জামে মসজিদ: তিতাখাঁ জামে মসজিদের মাত্র একশ’ মিটারের মধ্যে উত্তরে ঐতিহাসিক আরেকটি মসজিদ রয়েছে। যেটি আজিম শাহ মসজিদ বা মিতাখাঁ মসজিদ নামেও পরিচিত। লক্ষ্মীপুরের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ আজিম শাহ দায়রাবাড়ি মসজিদ। এ স্থানে সে সময় ছিল ঝোড়-জঙ্গলে পরিপূর্ণ।  আজিম শাহ মসজিদের পুরনো অংশ

জানা যায়, ইয়েমেন থেকে ১৭৮৫ সালে মরহুম আজিম শাহ (র.) তার পীর দায়েম শাহ (র:) এর নির্দেশে লক্ষ্মীপুর আসেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৬ বছর। তিনি যখন লক্ষ্মীপুরে আগমন করেন, তখন বেলা অপরাহ্ন। এখানে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি পরশমান মিজির। আজিম শাহ বাগানে প্রবেশ করেন। কিন্তু তাঁর বের হতে দেরি দেখে লোকজনের আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ সে সময় জঙ্গলে বাঘ ছিল। তারা ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান একটি এবাদতখানা। এ এবাদতখানাই আজকের দায়রাবাড়ি মসজিদ বা মিতাখাঁ মসজিদ।  

জনশ্রুতি রয়েছে, লোকজন যখন আজিম শাহকে মসজিদের মধ্যে এবাদতে মশগুল দেখতে পান, তখন মসজিদের সামনে শান্তভাবে বসা ছিল একটি বাঘ।  

আজিম শাহ যখন মসজিদের অস্তিত্ব খুঁজে পান, তখন মসজিদের ভেতরে ছিল কোরান শরিফ, মোমবাতী ইত্যাদি। মসজিদের দেয়ালের নিম্নভাগ প্রায় দুই/তিন ফুট মাটির নিচে দেবে ছিল বলে ও জানা যায়। এরপর আজিম শাহ বাগান ও ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার করে বসতি স্থাপন করেন এবং ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। বহুদূর থেকে মানুষ তাঁর কাছে কোরান-হাদিস শিক্ষার জন্য আসতেন। আজিম শাহ নিজ হাতে কাঠ-খড়ি দিয়ে কাগজ তৈরি করতেন।  

সম্প্রতি হযরত আজিম শাহর বংশধরেরা মসজিদটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।  আজিম শাহ মসজিদের নতুন অংশ

তাঁর বংশধর শাহ জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, জঙ্গলের ভেতর মসজিদটির অস্তিত্ব যখন খুঁজে পাওয়া যায়, তখন মাত্র আটজনের নামাজের জায়গা ছিল। ১৮০০ শতাব্দীর শুরুতে সেটি সংস্কার করে ২৪ জনের নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে মসজিদটির আয়তন বাড়ানো হয়েছে। প্রাচীন মসজিদটি ঠিক রেখেই চারতলা বিশিষ্ট আধুনিক মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ একসঙ্গে এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।