ঢাকা: শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ১৭ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে এ লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। শেয়ারবাজারে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দেওয়ার দায়ে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন এসব ঘটনার নায়কেরা।
১৯৯৬ সালে ও ২০১০-২০১১ সালে দুই দফায় শেয়ারবাজারে যে ধস নামে তারই পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের হয়েছিলো এই ১৭টি মামলা। এর মধ্যে প্রথম ১৫টি মামলা ১৭ বছর ধরে ও শেষের দুটি মামলা তিন বছর ঝুলে রয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ৪০ জন আসামি রয়েছেন।
১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার ধসের সময় কারসাজির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা এবং ২০১১ সালে কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
নতুনভাবে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রক্রিয়া একটু দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগে ফাইল চালাচালি চলছে। আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন ২০১২ এর আওতায় এই বিচার সম্পন্ন হবে। আইনটি ১৯৬৯ সালে গৃহীত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ভিত্তিতে তৈরি।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকলেও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় মামলাগুলো নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়কদের আসামির কাঠগড়ায় হাজির করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে তাদের যথাযথ শাস্তি দেওয়া হবে এটাই প্রত্যাশা তাদের।
বিশেষ করে শেয়ার বাজারে সর্বস্ব হারানো মানুষগুলোর মধ্যে এই প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এ কে এম শামসুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইলটি সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে। জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএ) কমিটির একজন সদস্য অসুস্থ থাকায় ফাইলটি অনুমোদন হতে দেরি হচ্ছে। তবে আশা করছি ওই সদস্য সুস্থ হয়ে উঠলেই জিএ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টির অনুমোদন দেওয়া হবে।
এসইসি’র আইনজীবী ড. আবুল কাশেম মোহাম্মদ আলী এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, বিচারকাজ পরিচালনার জন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে শুনেছি।
বিচার প্রক্রিয়াটি শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ করতে ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করেন এই আইনজীবী।
বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির নায়কদের বিচারের উদ্যোগকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন এই খাতের সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে বিচারের মাধ্যমে সাজা নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য নিয়ে এমন ভয়াবহ খেলা আর কেউ খেলতে পারবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “শেয়ার কেলেঙ্কারির সাথে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় তারা বার বার এ সুযোগটি নিচ্ছে। শেয়ার কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য সরকারের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। ”
ট্রাইব্যুনাল জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুররাবৃত্তি ঘটবে না বলে আশা তার।
১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেংকারির দায়ে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭(২৪) ধারায় মোট ১৫টি মামলা হয়। এই মামলায় আসামি করা হয় ৩২ জনকে। এছাড়া ২০১০ সালের ডিসেম্বর ও ২০১১ সালের জানুয়ারির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। এতে আসামি করা হয় পাঁচ জনকে। শেয়ারবাজারে বড় বড় খেলোয়াড়দের নাম রয়েছে আসামিদের তালিকায়।
২০১০-১১ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির পর ঢাকার শেয়ার বাজারে হাজার হাজার সাধারণ বিনিয়োগকারী পথে বসে যায়। ভয়াবহ এই পরিণতিতে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটে। এসময় এই খাতে একের পর এক বিপর্যয় নেমে আসতে থাকে। এ অবস্থায় গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে আরও অনেক বড় বড় ঘটনা। এসব ঘটনার নায়কদের নামও সামনে আসে। যেসব নাম লোকের মুখে মুখে।
ট্রাইব্যুনাল কাজ করতে শুরু করলে এই শেয়ার কেলেঙ্কারির বাঘা বাঘা নায়কদের বিচার হবে সেই প্রত্যাশাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৪