ঢাকা: সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো ইচ্ছা করলে ২ হাজার ১১৮ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। বিশেষ করে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) তাদের সুযোগ দেওয়া হলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে কোম্পানিগুলো।
কারণ প্রিমিয়াম আয়ের অর্থ বিনিয়োগে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে সেটি না থাকায় অর্থ বিনিয়োগের বিষয়টি তাদের উপরই নির্ভর করে। তাই এ মুহূর্তে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কথা ভাবছে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো।
বর্হিবিশ্বে শেয়ারবাজারই সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের প্রধান মাধ্যম। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকেই তাদের সিংহভাগ আয় আসে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পলিসিগত দুর্বলতা ও বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় শেয়ারবাজারে সেভাবে বিনিয়োগ করে না সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রাথমিক গণ প্রস্তাবে (আইপিও) বিনিয়োগ করতে পারে না। এজন্য আমরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে বিমা কোম্পানিগুলোকে আইপিওতে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। বিএসইসি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
তিনি আরও বলেন, বিমা কোম্পানিগুলো আইপিওতে বিনিয়োগ করার সুযোগ পেলে জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আসবে। যা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের উপদেষ্টা নাসির এ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অধিকাংশ বিমা কোম্পানিই বাজারে বিনিয়োগ করে। তবে সম্প্রতি বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করায় বিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ কমেছে।
তিনি আরও বলেন, বাজার স্থিতিশীল হলে বিমা কোম্পানিগুলো স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিনিয়োগ বাড়বে। কোম্পানিগুলো চাইলে বিনিয়োগযোগ্য সব অর্থই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
তথ্য মতে, বর্তমানে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর কাছে সম্মেলিতভাবে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ রয়েছে ২ হাজার ১১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বিমা কর্পোরেশনের কাছে আছে ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর বেসরকারি ৪৩টি সাধারণ বিমা কোম্পানির কাছে আছে ১ হাজার ৮৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে মন্দাবস্থা থাকায় কোম্পানিগুলোর সিংহভাগ অর্থ রয়েছে ডিপোজিট আকারে। তবে শেয়ারবাজারে অর্থের ছোট একটি অংশ বিনিয়োগ থাকলে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে পাইওনিয়র ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিউএএফএম সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিমা কোম্পানিগুলো সাধারণত ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ করতে চায়। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার অস্থিতিশীল থাকায় এখানে বিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ কম। অথচ বর্হিবিশ্বে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর আয়ের প্রধান উৎস শেয়ারবাজার।
তিনি আরও বলেন, ডিপোজিট করা অর্থ থেকে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো নয় থেকে সাড়ে নয় শতাংশ মুনাফা পায়। যা খুবই নগণ্য। তারপরও নিরাপদ হওয়ার কারণে কোম্পানিগুলোর অর্থ ডিপোজিট করে রাখে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলে এবং বাজার স্থিতিশীল হলে বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াবে।
বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সেরে উপদেষ্টা এ কে আজিজুল হক চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগযোগ্য অর্থের সিংহভাগই ডিপোজিট আকারে রাখে বিমা কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি কিছু অংশ শেয়ারে বিনিয়োগ করে। তবে কোম্পানিগুলো তাদের প্রিমিয়ামের অর্থ যে কোনো খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
বেসরকারি সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি বিনিয়োগযোগ্য অর্থ আছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের কাছে। কোম্পনিটির কাছে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ আছে ২৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকার ওপরে।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের কাছে আছে ১৭০ কোটি ১০ লাখ টাকা। ১৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স।
এছাড়া প্রগতি ইন্স্যুরেন্সে ১১৫ কোটি ১০ লাখ, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সে ৫৯ কোটি ১০ লাখ, পিপলস ইন্স্যুরেন্সে ৪৩ কোটি ৭০ লাখ, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সে ২৭ কোটি ২০ লাখ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সে ৩৩ কোটি ২০ লাখ, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সে ৬৫ কোটি, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সে ২৭ কোটি, জনতা ইন্স্যুরেন্সে ১৯ কোটি ৪০ লাখ, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সে ৬২ কোটি ২০ লাখ, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সে ৩৪ কোটি ২০ লাখ, সেন্টাল ইন্স্যুরেন্সে ২৪ কোটি ৭০ লাখ, রূপালী ইন্স্যুরেন্সে ৭৪ কোটি ৬০ লাখ, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভে ৭ কোটি ২০ লাখ, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সে ২১ কোটি ৭০ লাখ, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ, প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে ৪৪ কোটি, মেঘনা ইন্স্যুরেন্সে ২৯ কোটি ১০ লাখ, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সে ৩০ কোটি ৪০ লাখ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সে ১৪ কোটি ২০ লাখ, নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্সে ৩৭ কোটি ৪০ লাখ, নিটল ইন্স্যুরেন্সে ২৯ কোটি ৫০ লাখ, স্টান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সে ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সে ৭ কোটি ৬০ লাখ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সে ১৭ কোটি ৬০ লাখ, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সে ২৫ কোটি, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সে ২৬ কোটি ৪০ লাখ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশে ৪৩ কোটি ৬০ লাখ, ইসলামী কমার্সিয়াল ইন্স্যুরেন্সে ২১ কোটি ৬০ লাখ, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সে ২৩ কোটি, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সে ৩৯ কোটি, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সে ৩২ কোটি, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সে ৩৯ কোটি ৮০ লাখ, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সে ২৬ কোটি, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সে ২৪ কোটি ৮০ লাখ, ইউনিয়ন ইন্সুরেন্সে ১৭ কোটি ৩০ লাখ, এশিয়া প্যাসেফিকে ২৭ কোটি ৩০ লাখ, দেশ জেনারেলে ১০ কোটি, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সে ৩২ কোটি ৭০ লাখ এবং পূরবী জেনারেলে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগযোগ্য অর্থ আছে।
বিমা কোম্পানিকে আইপিওতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসি‘র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিমা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কমিশন থেকে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪