ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত মূল মার্কেটের ৫ কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বা উৎপাদনে ফেরানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্ত অনুযায়ী বর্তমান তালিকাভূক্ত ৪টি কোম্পানির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এবং একটি কোম্পানি আংশিক উৎপাদনে রয়েছে। উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে মডার্ন ডায়িং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিং, রহিমা ফুড করপোরেশন, নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি এবং মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ। অন্যদিকে, আংশিক উৎপাদনে রয়েছে বিডি অটোকারস।
বিএসইসি এ বিষয়ে বলছে, উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর। কারণ, তাদের সুপারিশেই কোম্পানির আইপিও অনুমোদন করা হয়। তাই বিনিয়োগকারীদের প্রাথমিক নিরাপত্তা তাদেরকেই দিতে হবে। তারা যদি ব্যর্থ হয় তবে আমাদের কাছে আবেদন জানালে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।
অন্যদিকে, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আমরা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি, ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। কারণ, তারা কোম্পানির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে থাকে।
বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, শেয়ারহোল্ডারদের সব সময় ভেবে-চিন্তে বিনিয়োগ করতে হবে। কোম্পানি যখন ভালো মুনাফা করে তখন কেউ অভিযোগ করে না। কিন্তু কোম্পানি যখন লোকসানে চলে যায়, তখনই সবাই কথা বলা শুরু করে। একটি কোম্পানি যখন বাজারে আসে তখন কেউ বলতে পারে না ভবিষ্যতে কি হবে। আদৌ কোম্পানিটি টিকে থাকবে কি-না। আমাদের কাছে যেসব রিপোর্ট আসে তা বিবেচনায় নিয়ে আমরা কোম্পানি তালিকাভূক্তির অনুমোদন দেই।
এখন যদি কোনো রিপোর্টে ভুল তথ্য দেওয়া হয় তাহলে কমিশনের পক্ষে সব যাচাই-বাছাই করা সম্ভব না। তারপরও আমরা বেশ কিছু কোম্পানির অডিট রিপোর্টে অসঙ্গতি চিহ্নিত করে সংশোধন করতে পাঠায়। আমরা এর চেয়ে বেশি করতে পারবো না। এমনকি কোনো কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকলে সেটাকে উৎপাদনে আনতে পারবো না। এখানে অনেক সংস্থার ভূমিকা আছে। সবাই দায়িত্ব পালন করলেই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব হবে। একা বিএসইসি'র পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে ডিএসই’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলো আর্থিক প্রতিবেদন নিয়মিত ডিএসইতে দাখিল করছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ফ্যাক্টরি ভাড়া দিয়েছে অন্য কোম্পানির কাছে। সেখান থেকে ডিভিডেন্ডও দিচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। এদিক দিয়ে কোম্পানিগুলো নন কমপ্লায়েন্স নয়। তবে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে কোম্পানির কার্যক্রম অত্যন্ত মন্থর। তাই এ কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাজিদ হোসেন বলেন, কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দায় কার, এটা বড় বিষয় নয়। বিভিন্ন আমরা তদন্ত করেই ওয়েবসাইটে উৎপাদন বন্ধ কোম্পানিগুলোর তালিকা প্রকাশ করি। কিন্তু তারপরও বিনিয়োগকারীরা ওই কোম্পানির শেয়ার হুমড়ি খেয়ে ক্রয় করেন। ফলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ পার পেয়ে যায়। তাই বিনিয়োগকারীরা যদি সচেতন হয়ে বিনিয়োগ করেন, তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষই উৎপাদনে আসতে বাধ্য হবে। বিনিয়োগকারীরা পাবেন ভালো লভ্যাংশ।
এ ৫ কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে অনেকটাই বিপাকে পড়ে গেছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ, তারা আশানুরূপ লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। আবার লোকসানে থাকায় শেয়ারও বিক্রি করে বের হতে পারছেন না। ফলে ঝুঁকিতে পড়েছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ।
যদিও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় উৎপাদনে ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এমনকি বিভিন্ন সময় যোগাযোগ করা হলে আগামী মাসে বা ৩ মাসের মধ্যে আমরা উৎপাদনে আসবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে এ ধরনের তথ্য দেওয়ায় এ কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে চাপ বাড়ে। ফলে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
রহিমা ফুডের কোম্পানি সচিব জাকির হোসেন জানান, কয়েক মাস ধরে আমাদের কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। শিগগির কোম্পানির উৎপাদন শুরু হবে।
কয়েক মাস ধরে কোম্পানির পক্ষ থেকে এ ধরনের গঁৎবাধা কথা বলা হলেও এখনও উৎপাদনে আসতে পারেনি কোম্পানিটি।
নর্দার্ন জুট কোম্পানির বিক্রয় ব্যবস্থাপক সাখাওয়াত হোসেন জানান, পরিকল্পনাগত দুর্বলতা ও আর্থিক সংকটের কারণে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আশা করা হচ্ছে তাড়াতাড়ি উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে।
তবে মেঘনা পেট কোম্পানির ফোন নম্বরে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৪