ঢাকা: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওভার দি কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের অধিকাংশ কোম্পানির মূল মার্কেটে ফেরানোর কোনো উদ্যোগ নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং কোম্পানি কর্তৃপক্ষের।
কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওটিসি মার্কেটে থাকলে বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির উৎপাদন, আয়, ব্যয়, লোকসান কোনো বিষয়ে জবাবদিহি করতে হয় না।
তবে কোম্পানিগুলোর দাবি, শেয়ার ডিমেট করা ও অধিকাংশ শর্ত পূরণ করার পরও শুধুমাত্র বিএসইসি’র অবহেলার কারণে তারা মূল মার্কেটে ফিরতে পারছে না।
অন্যদিকে কোম্পানিগুলোর এ অভিযোগ মানতে নারাজ বিএসইসি। বিএসইসি কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধু শেয়ার ডিমেট করলেই মূল মার্কেট ফেরা যায় না। আনুষঙ্গিক আরও অনেক নিয়ম পালন করতে হয়। যা কোম্পানিগুলো পরিপূর্ণভাবে পালন করছে না। ফলে তাদের মূল মার্কেটে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বিএসইসি’র এক কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওটিসি’র কোম্পানিগুলোর সেভাবে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে না। দিতে হচ্ছে না বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ। উদ্যোক্তারা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিলেও এখন তাদের স্বার্থের দিকে তাকাচ্ছেন না। মূল মার্কেটে ফেরার ব্যাপারে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। তারা শর্তগুলো পূরণ করলেই মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা হবে এসব কোম্পানিগুলোকে।
এদিকে, উৎপাদনে থাকা একাধিক কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে জানা গেছে, কিছু কোম্পানির শেয়ার যথাসময়ে ডিমেট (ইলেকট্রনিক) না হওয়ার কারণে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে পূর্ণ উৎপাদন শুরু করার পাশাপাশি শেয়ার ডিমেট করলেও কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মূলত বিএসইসি’র অবহেলার কারণে কোম্পানিগুলো মূল মার্কেটে ফিরতে পারছে না।
যদিও ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ওয়াটা কেমিক্যাল কোম্পানিকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সংস্থাটি শুধু ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত রয়েছে। ঘোষণা পরবর্তী আর কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। কমিশনের এ উদ্যোগ প্রয়োজন অনুযায়ী খুবই শ্লথ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ওটিসি মার্কেটের আইন অনুযায়ী সকল শর্ত পূরণ করে মূল মার্কেটে ফেরার জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে আবেদন করতে হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো কোম্পানি কমিশনের কাছে আবেদন করেনি। এমনকি ওয়াটা ক্যামিকেল কোম্পানিও কোনো আবেদন করেনি। কোম্পানিগুলো আইন অনুযায়ী কমিশন বরাবর আবেদন করলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওটিসিতে শেয়ার ডিমেট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া ১১টি কোম্পানি হচ্ছে- ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ, আলফা টোব্যাকো, ঢাকা ফিশারিজ, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, এপেক্স উইভিং, মুন্নু ফেব্রিক্স, রহমান কেমিক্যাল লিমিটেড, সোনালী পেপার, নিলয় সিমেন্ট, পদ্মা সিমেন্ট এবং লেক্সকো লেদার কমপ্লেক্স।
ফলে এসব কোম্পানির কোনো লভ্যাংশ না দেওয়া, বছরের পর বছর ধরে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না হওয়া, শেয়ারের ক্রেতা না থাকা এবং শেয়ার দর কমে তলানিতে চলে আসায় এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকৃত অর্থ উত্তোলন অনিশ্চিত হয়ে পরেছে বিনিয়োগকারীদের।
ডিএসই’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওটিসি মার্কেটে মোট ৬৮টি কোম্পানির মধ্যে আংশিক উৎপাদনে রয়েছে কমপক্ষে ২৩টি, পুরোপুরি উৎপাদনে রয়েছে ১০টি, উৎপাদনে নেই ৩১টি এবং কোম্পানির অস্তিত্ব নেই ৪ কোম্পানির।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজার থেকে সুবিধা নিয়ে এখন বিনিয়োগকারীদের ঝুলিয়ে রেখেছে কতিপয় কোম্পানি। এসব কোম্পানির মধ্যে অনেক কোম্পানির মূল বাজারে ফিরে আসার সামর্থ্য থাকলেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়া এবং জবাবদিহিতার ভয়ে তারা ফিরছে না।
এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থারও উদাসীনতার কারণে শর্ত পূরণ করেও কয়েকটি কোম্পানি মূল মার্কেটে ফিরতে পারছে না বলে মত দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৪