ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল মার্কেট থেকে বিতাড়িত হয়ে ওভার দি কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে যাওয়া পদ্মা সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড অবলুপ্ত হতে যাচ্ছে। ফলে নিঃস্ব হতে যাচ্ছেন কয়েক হাজার শেয়ারহোল্ডার।
কারণ, এ কোম্পানির শেয়ার উচ্চ দরে কেনা থাকলেও কোম্পানি অবলুপ্ত হওয়ায় শেয়ারপ্রতি মাত্র ২ টাকা করে ফেরত পেতে পারেন বিনিয়োগকারীরা! তবে এটাও অনেকটা অনিশ্চিত। আদালতের কাছে এখনও যদি কোনো পাওনাদার এ কোম্পানির কাছে পাওনা দাবি করেন তবে কোম্পানির সর্বশেষ সম্পদ থেকে তা পরিশোধ করা হবে। আর তখন খালি হাতেই ফিরতে হতে পারে এসব শেয়ারহোল্ডারদের।
জানা গেছে, হাইকোর্টের কাছে কোম্পানির হিসাবে মোট ৮ কোটি ৫ লাখ বা তার কিছুটা কম-বেশি টাকা রয়েছে। তবে কোনো জমি বা অন্য কোনো সম্পদ কোম্পানির নামে নেই। এ টাকার বিপরীতে বর্তমানে ৮ হাজার ২৫৭ জন শেয়ারহোল্ডারের কাছে এ কোম্পানির মোট ২ কোটি ৭৬ লাখ শেয়ার রয়েছে। সে হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার প্রতি ফেরত পাওয়ার কথা রয়েছে ২ দশমিক ৯১ টাকা।
কিন্তু হাইকোর্টের কাছে পরবর্তীতে কোনো পাওনাদার কোম্পানির কাছে পাওনা দাবি করে তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেন তবে তা পরিশোধ করতে হবে এবং লিকুইডেটরের (অবসায়ক) খরচ মেটানোর পর শেয়ারহোল্ডারদের টাকা ফেরতের প্রশ্ন আসবে। সে হিসেবে শেয়ারহোল্ডাররা আদৌও কোনো টাকা ফেরত পাবেন কি-না তা অনিশ্চিত হয়ে পরেছে।
অন্যদিকে সরকারের কাছে কোম্পানির ট্যাক্স বাকি রয়েছে কি-না সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখবেন হাইকোর্ট। যদি সরকার ট্যাক্স পায় তবে সেটাও অবশিষ্ট এ টাকা থেকে পরিশোধ করা হবে।
হাইকোর্ট নিয়োজিত লিকুইডেটরের (অবসায়ক) পক্ষ থেকে পাওনাদারদের ১৫ দিনের দেওয়া সময় এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত লিকুইডেটরের (অবসায়ক) কাছে কোনো ব্যাংক, বিমা বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান পাওনা দাবি করেনি। কতোজন শেয়ারহোল্ডার তাদের প্রমাণাদি জমা দিয়েছেন তারও কোনো হিসাব নেই বলে জানান অবসায়ক ব্যারিস্টার মো. মোকছেদুল ইসলাম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুধুমাত্র কোম্পানির অবসায়কের দায়িত্বে রয়েছি। শেয়ারহোল্ডাররা আমাদের কাছে তাদের শেয়ারের প্রমাণাদি দাখিল করছেন। আমরা সেগুলো সংগ্রহ করে হাইকোর্টের কাছে জমা দেবো। শেয়ারহোল্ডারদের কতো টাকা ফেরত দেওয়া হবে তার বিচার করবেন হাইকোর্ট।
মোকছেদুল ইসলাম বলেন, অনেক শেয়ারহোল্ডার মনে করছেন, আমার এ অফিসই কোম্পানির অফিস। আমরাই তাদের টাকা লুটে খেয়েছি। এমনকি অনেক শেয়ারহোল্ডার আমার অফিসে এসে অফিস স্টাফদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন এবং নিচে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের ওপর চড়াও হয়েছেন। কিন্তু এটা কোর্টের অংশ। আমি অবসায়কের দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।
তিনি আরও বলেন, গত ২০ মার্চ বৃহস্পতিবার নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়েছে। এখন প্রমাণাদি কোর্টে দাখিল করতে পারলে আমার দায়িত্ব শেষ।
তিনি কোনো শেয়ারহোল্ডার বা পাওনাদারকে তার সঙ্গে বা তার অফিসে যোগাযোগ না করার জন্য অনুরোধ জানান। এখন থেকে বিষয়টি হাইকোর্ট দেখবেন বলেও জানান তিনি।
অবসায়ক মোকছেদুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে হাইকোর্ট সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) কাছে এ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের নামের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছেন। সেই তালিকা ধরেই শেয়ারহোল্ডারদের টাকা ফেরত দেওয়া হতে পারে।
পদ্মা সিমেন্ট কোম্পানির কিছু অসাধু পরিচালক ২০০২ সালে লোকসানি কোম্পানিটিকে লাভজনক দেখিয়ে আইপিও’র মাধ্যমে সাধারণ জনগণের কাছে শেয়ার বিক্রি করেছেন। আবার ২০০৯ ও ২০১০ সালে চাঙ্গা বাজারের সুযোগে উদ্যোক্তাদের হাতে থাকা প্রায় সব শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চ দামে বিক্রি করে বাজার থেকে সটকে পড়েন তারা।
তালিকাভূক্তির বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দেখানো হয় ০ দশমিক ৪৪ টাকা। কিন্তু পরের বছর থেকে টানা লোকসান করতে থাকে কোম্পানিটি। টানা সাত বছর লোকসানে থাকার পর ২০১১ সালে কোম্পানিটি হঠাৎ ৪ টাকা ইপিএস দেখায়। ওই বছরেই কোম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম ওঠে ৪০ টাকায়। এ সময় অসাধু উদ্যাক্তারা তাদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে সরে পড়েন।
জানা গেছে, তালিকাভূক্তির সময় এ কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন আমিনুল ইসলাম। তখন কোম্পানির পরিচালকদের হাতে মোট শেয়ার ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ। যার মধ্যে আমিনুল ইসলামের কাছে ২৫ লাখ, নজরুল ইসলামের কাছে ২৪ লাখ, মোহাম্মদ আলীর কাছে ১৪ লাখ, নাহিদ কাওসারের কাছে ১৫ লাখ, মামুন আলী বিশ্বাসের কাছে ১২ লাখ, তানভীর নেওয়াজের কাছে ৮ লাখ, বিশ্বাস কোল্ড স্টোরেজের কাছে ৩০ লাখ এবং নাটোর কোল্ড স্টোরেজের হাতে ১০ লাখ শেয়ার ছিল।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালকদের কাছে মাত্র ০ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আর ৯৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৪