ঢাকা: প্রাথমিক গণপ্রস্তাব প্রক্রিয়া (আইপিও) সংশোধনের লক্ষ্যে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ১৩ ডিজিটে রূপান্তর এবং ব্যাংক রাউটিং নম্বর সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক।
রাউটিং নম্বর হলো চেক শনাক্তকরণে ব্যাংকের দেওয়া ইলেকট্রনিক নম্বর যা অ্যাকাউন্টধারীর প্রতিটি চেকের নিচে উল্লেখ থাকে।
গত ১৮ ডিসেম্বর বিএসইসি বিও হিসাব হালনাগাদ করার জন্য বিনিয়োগকারীদের নির্দেশ দেয়।
প্রথম পর্যায়ে গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিও হালনাগাদ করার সুযোগ ছিল। তবে এ সময়ের মধ্যে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী তাদের বিও হিসাব হালনগাদ করেননি। তাই বিএসইসিতে ডিএসই’র মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজগুলো ৬ মাস সময় বাড়ানোর আবেদন জানায়। কিন্তু বিএসইসি আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে বিও হিসাব হালনাগাদ না করলে সমস্যায় পড়তে পারেন অ্যাকাউন্টধারীরা।
এ বিষয়ে ডিএসই’র সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বিও হালনাগাদে বিএসইসি যেসব তথ্য চেয়েছে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই উপকারী। যা ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষকে অস্বাভাবিক লেনদেন চিহ্নিতকরণে সহায়তা করবে। এছাড়া আইপিও প্রক্রিয়াও অনেক সহজ হবে। ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন জমা দেওয়ার বিড়ম্বনা থাকবে না।
তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যেসব বিও অ্যাকাউন্টধারী প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে ব্যর্থ হবেন তাদের হিসাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে বিএসইসি যদি অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তখন সে অনুযায়ী কাজ করা হবে বলে জানান টিটু।
যদিও এ বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাকাউন্টধারীরা তাদের বিও হালনাগাদ করতে পারবেন। এ সময়ের মধ্যে যারা বিও হালনাগাদ করবেন না তাদের বিষয়ে কমিশন এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বেঁধে দেওয়া সময় শেষে যদি দেখা যায় অধিকাংশ (মেজরিটি) বিনিয়োগকারী তাদের হিসাব হালনাগাদ করেছেন তবে বাকিদের বিষয়ে সেসময় আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিও হিসাব হালনাগাদ করতে যেসব তথ্য থাকা বাধ্যতামূলক সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্লায়েন্ট আইডি নম্বর, পোস্ট কোড, টেলিফোন নম্বর/মোবাইল নম্বর, ই-মেইল (যদি থাকে), ১৩ ডিজিট সংবলিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংক রাউটিং নম্বর।
তবে বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি’র এ নির্দেশনাকে অনেকটা হয়রানির কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ৮ থেকে ১১ ডিজিটের তারা কিভাবে এটাকে ১৩ ডিজিটে রূপান্তর করবেন সে বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ অনেকে গ্রামে বাবা-মার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে শেয়ার ব্যবসা করেন।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই তারা অ্যাকাউন্ট নম্বর ১৩ ডিজিটে রূপান্তর করে দেবেন। এসব তথ্য হালনাগাদ না করলে ভবিষ্যতে হিসাবধারীর অনেক সমস্যা হতে পারে।
তবে যেসব বিনিয়োগকারী তার পরিবারের সদস্য বা আত্মীয় স্বজনের নামে বিও হিসাব খুলে ব্যবসা করেন মূল সমস্যাটা তাদের। কারণ ব্যাংকগুলো অ্যাকাউন্টধারীর কাছে ছাড়া নম্বর ১৩ ডিজিটে রূপান্তর এবং রাউটিং নম্বর সরবরাহ করছে না। তাই এ তথ্য দিয়ে হালনাগাদ করা অনেকটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া, বিও হিসাবে হিসাবধারীর পেশা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। যদি কেউ চাকরিজীবী হন তবে তার অফিসের ঠিকানা এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যবসার নাম, পণ্যের নাম ও ব্যবসার এলাকার (বিজনেস এরিয়া) উল্লেখ থাকতে হবে।
বিও অ্যাকাউন্টে হিসাবধারীর বাৎসরিক অর্থ জমা ও উত্তোলনের আনুমানিক তথ্য এবং তার আয়ের উৎস (ব্যক্তিগত/কোম্পানি) সংযুক্ত করতে হবে।
সংশোধিত আইপিও প্রক্রিয়ায় আবেদনের সঙ্গে টাকা জমা দিতে হবে না। তবে আইপিও’র লটারি বিজয়ী হলে বিনিয়োগকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি টাকা কেটে নেয়ার পদ্ধতি থাকবে। এ পদ্ধতি চালু করার জন্য স্টেক হোল্ডারদের কাছে সমস্যা এবং তা সমাধানের পরামর্শ চেয়েছে বিএসইসি।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৪