ঢাকা: বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার কথা বিবেচনা করে ২০১১ সালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ‘বাইব্যাক আইন’ বা শেয়ার পুনঃক্রয় আইন চালুর উদ্যোগ নেন। কিন্তু ওই উদ্যোগ নেওয়ার পর দুই বছর সময় অতিবাহিত হলেও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
বাইব্যাক হচ্ছে একটি বিধান। যার আওতায় কোনো কোম্পানির শেয়ার মূল্য যদি অফার মূল্যের (প্রিমিয়ামসহ) নিচে নেমে যায় বা কমে যায় তবে ওই কোম্পানি কর্তৃক স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার পুনঃক্রয় করতে বাধ্য থাকবেন।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও কমিশন মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ আইনটি মূলত কোম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে। আমরা এ বিষয়ে সব কাজ সম্পন্ন করে অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু তারপরও আইনটি কেন পাস হচ্ছে না বা আইনটির কি হয়েছে তা আমাদের জানানো হয়নি। কোম্পানি আইন সংশোধণ করা হলে হয়তো এ আইনটিও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িত হোতাদের স্বার্থ রক্ষা এবং আইনের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতেই এ আইনটি পাস করতে পারছে না সরকার। যাদের মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন এবং দেশের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী শেয়ার ব্যবসায়ী জড়িত। বিশেষ করে যেসব ব্যবসায়ীর কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অধিকহারে প্রিমিয়াম নিয়ে বাজারে এসেছে, তারা রাজনৈতিক বা আর্থিক প্রভাব খাটিয়ে এ আইন চালু বা বাস্তবায়নের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন।
এ মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাইব্যাক আইন বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কারণ বাইব্যাক আইনের আওতায় এলে কোম্পানিগুলোর বাজারে আসার সময় আর দুর্নীতি করবে না। ফলে আইপিও’র শেয়ার লেনদেনের প্রথম কয়েকমাস বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যাব্যস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সাজিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে বাইব্যাক আইন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে আইনটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। আইনটি এখন কোথায় আছে তা স্পষ্ট নয়। ’
আইনটি চালুর বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি সরকার ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দ্রুত এ আইন চালুর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বাইব্যাক বা শেয়ার পুনঃক্রয় আইন কী?: আগেই বলা হয়েছে, বাইব্যাক হচ্ছে একটি বিধান। যার আওতায় কোনো কোম্পানির শেয়ার মূল্য যদি অফার মূল্যের (প্রিমিয়ামসহ) নিচে নেমে যায় বা কমে যায় তবে ওই কোম্পানি কর্তৃক স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার পুনঃক্রয় করতে বাধ্য থাকবেন।
যেমন: কোনো কোম্পানির ২০ টাকা প্রিমিয়াম ও ১০ টাকা ফেস ভ্যালুসহ মোট ৩০ টাকা মূল্য নিয়ে আইপিও’র মাধ্যমে বাজারে তালিকাভুক্ত হলো। এখন ওই কোম্পানির লেনদেন শুরু হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে যদি শেয়ার দাম ৩০ টাকার নিচে নেমে আসে তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ, স্পন্সর এবং ইস্যু ম্যানেজার ওই শেয়ার বাজার থেকে ৩০ টাকা দরে পুনঃক্রয় করতে বাধ্য থাকবেন।
এ আইনটি বাংলাদেশে চালু হলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী বড় ধরনের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। বিশেষ করে কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম অফার মূল্যের নিচে নেমে এলে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা না করতে পারলে অন্তত মূল টাকা ফেরত পাবেন। পৃথিবীর অনেক দেশের কোম্পানি আইনে এটি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বাংলাদেশের কোম্পানি আইনে এ বিধানটি নেই।
বাইব্যাক আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, শেয়ার বাইব্যাক করার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ক্রয় করা শেয়ার বাতিল বা ধ্বংস করতে হবে। এছাড়া পরবর্তী ২৪ মাসের মধ্যে একই ধরনের শেয়ার ইস্যু করা যাবে না। বাইব্যাক সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি), বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ ও ডিপোজটরিতে এ সংশ্লিষ্ট সব তথ্য দাখিল করতে হবে। এসব বিধান ভঙ্গে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, শেয়ার বাইব্যাকের পরিমাণ মোট পরিশোধিত মূলধনের ১৫ ভাগের বেশি হবে না। এছাড়া উন্মুক্ত তহবিলের (ফ্রি রিজার্ভের) শেয়ার প্রিমিয়াম হিসাব হতে শতকরা ১০ ভাগের বেশি অর্থ বাইব্যাকে ব্যয় করা যাবে না। কোম্পানির দায় এর মোট মূলধন ও ফ্রি রিজার্ভের দ্বিগুণের বেশি হবে না। ফ্রি রিজার্ভ বলতে বোঝানো হয়েছে বিধিবদ্ধ রিজার্ভ ছাড়া পুঞ্জীভূত মুনাফা ও সাধারণ রিজার্ভ।
কোম্পানি বিএসইসি‘র অনুমোদনক্রমে নিজস্ব অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা কোনো ৩য় পর্বের কোম্পানির মাধ্যমে বাজার হতে আনুপাতিকহারে ৯০ দিনের মধ্যে শেয়ার বাইব্যাক করবে। তবে বাইব্যাক করার আগে ওই কোম্পানিকে অঙ্গীকার করতে হবে যে শেয়ার বাইব্যাকের ৩৬৫ দিনের মধ্যে দেউলিয়া হবে না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাইব্যাক নিশ্চিত হলে প্রিমিয়াম বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বাজারে স্বচ্ছতা আসবে। বাইব্যাক কার্যকর হলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ, স্পন্সর এবং ইস্যু ম্যানেজার সবারই দায়বদ্ধতা বাড়বে। তারা জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। কারণ শেয়ারগুলো এসব প্রতিষ্ঠানকেই (কোম্পানি, স্পন্সর ও ইস্যু ম্যানেজার) ক্রয় করে নিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী সেটা বাইব্যাক কিংবা প্রাইস পেগিং যেটির আওতায় পড়ুক তার দায়ভার নিতে হবে কোম্পানি, স্পন্সর অথবা ইস্যু ম্যানেজারকে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৪