ঢাকা: ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মাধ্যমে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) নামে নতুন ধরনের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হলে শেয়ারবাজারে আইপিও শিকারিদের দৌরাত্ম্য কমবে। কারণ, আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় সেকেন্ডারি বাজারের বিনিয়োগকারীরাও আইপিও আবেদন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
নতুন নিয়মে আবেদন করা হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। শেয়ারের বরাদ্দপত্রও হবে ডিজিটাল। আর রিফান্ড ওয়ারেন্ট নামে কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না বলে তাতে কাগজের ব্যবহারের প্রয়োজনই পড়বে না। আইপিও পদ্ধতিকে সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব করতে তাতে কাগজের ব্যবহার প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হচ্ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাজারে মূলত দুই শ্রেণীর বিনিয়োগকারী থাকেন। এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী শুধুমাত্র আইপিওতে বিনিয়োগ করেন। এমনকি কোনো কোনো বিনিয়োগকারীর কাছে তিনশ’ থেকে ৫শ’ বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ফলে যেকোনো কোম্পানির আইপিও লটারিতে তাদের শেয়ার লট বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।
কিন্তু নতুন এ প্রক্রিয়া চালু হলে যেসব বিনিয়োগকারী সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করেন কোনো ধরনের ঝামেলা না থাকায় তারাও এখন থেকে আইপিও আবেদন করবেন। ফলে আইপিও শিকারিদের দৌরাত্ম্য কমবে এবং তাদের শেয়ার বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভিন্ন ভিন্ন নামে বিও থাকলেও মূলত সেগুলোর মালিক একজনই। আইপিও মৌসুম এলে তারা এসব অ্যাকাউন্ট নিয়ে আইপিও লটারি বিজয়ী হতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তবে ভিন্ন ভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট হওয়ার কারণে এসব আইপিও শিকারিদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এ বিষয়ে নেই কোনো আইন। ফলে বিষয়টি কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না সুযোগ সন্ধানীদের।
আইপিও আবেদনের নতুন প্রক্রিয়া শুরু হলে এখন থেকে একটি কোম্পানির আইপিওতে কয়েক শ’ গুণ আবেদন জমা পড়বে বলে আশা করছেন দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা। কারণ, আগে আইপিও আবেদন করার জন্য দীর্ঘ সময় ব্যাংকগুলোর সামনে লাইনে দাঁড়াতে হতো। এমনকি নতুন এ প্রক্রিয়ায় নগদ টাকাও জমা দিতে হবে না। যদি কেউ আইপিও বরাদ্দ পান তবে তার বিও হিসাব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কেটে নিয়ে কোম্পানির কাছে দেওয়া হবে। ফলে রিফান্ড পাওয়ার যে ঝামেলা ছিল তা আর থাকছে না।
চলতি মাসের শেষের দিকে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর মাধ্যমে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) চাঁদা সংগ্রহের নতুন এ প্রক্রিয়ার পাইলট প্রকল্প শুরু হতে পারে। এতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধান করে আগামী জুন মাস থেকে সব কোম্পানির আইপিওর ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপন কুমার বালা বলেন, বাজারে লেনদেনের গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আনতে আমরা কাজ করছি। নতুন আইপিও প্রক্রিয়া চালু হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ভোগান্তির হাত থেকে মুক্তি পাবেন। এতে আইপিও শিকারিদেরও আইপিও থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে বর্তমানের মতো বড় কোনো আবেদনপত্র জমা দিতে হবে না। বিনিয়োগকারীকে শুধু তার ডিপি বা ব্রোকারহাউসকে আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করলেই চলবে। ডিপি কম্পিউটার সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিজিটাল আবেদনপত্র তৈরি করবে।
লটারিতে শেয়ার বণ্টনের পর সংশ্লিষ্ট ডিপির কাছে ডিজিটাল অ্যালটমেন্ট লেটার বা বরাদ্দপত্র পাঠানো হবে। তাতে তার হাউসের কোন কোন বিওধারী লটারিতে কৃতকার্য হয়েছেন এবং কতোটি শেয়ার বরাদ্দ পেয়েছেন (বিধি অনুযায়ী ৫০টির বেশি শেয়ার বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ নেই) তার উল্লেখ থাকবে। ডিপি মনে করলে সংশ্লিষ্ট বিও হিসাবধারীর ই-মেইলে ওই বরাদ্দপত্রের কপি পাঠিয়ে দেবেন। তাছাড়া চাইলে কোনো বিনিয়োগকারী ডিপির কাছ থেকে বরাদ্দপত্রের কপির প্রিন্ট নিতে পারবেন।
অন্যদিকে আবেদনের সঙ্গে কোম্পানির হিসাবে কোনো টাকা জমা দিতে হবে না বলে অকৃতকার্য আবেদনকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়ার (রিফান্ড) কোনো বিষয় থাকবে না। এ কারণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে কোনো ওয়ারেন্টও (বিশেষায়িত চেক) ইস্যু করতে হবে না।
আইপিও পদ্ধতি সহজ করতে গত বছরের নভেম্বর মাসে বিশেষ উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তার ধারাবাহিকতায় ব্যাংকের পরিবর্তে ডিপির মাধ্যমে আবেদন জমা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউজ মালিকও বলেছেন, আইপিও আবেদনের এ নতুন প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের ঝামেলা কমবে। তবে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। এতে তারা কয়েকটি কোম্পানির আইপিও আবেদন করার পর যদি শেয়ার বরাদ্দ না পান, তবে বিরক্ত হয়ে যাবেন।
**লভ্যাংশ দেবে ৭ কোম্পানি
** সপ্তাহের শুরুতে বাড়ছে সূচক
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৪