ঢাকা: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও তালিকাভূক্ত কোম্পানি ফার্মা এইডের দ্বন্দ্বের কারণে সহসাই চালু হচ্ছে না কোম্পানিটির লেনদেন। কারণ এক্সচেঞ্জগুলোর মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণের (ডিমিউচ্যুয়ালাইজড) পর বন্ধ হওয়া কোনো কোম্পানির লেনদেন চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রেগুলেটর অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন (আরএডি), যা ডিএসইতে এখনও গঠন সম্পন্ন হয়নি।
কোম্পানির বিরুদ্ধে ডিএসই’র প্রধান অভিযোগ, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ডিএসই’র প্রতিনিধিদলকে কারখানা পরিদর্শন করতে না দেওয়া হয়নি। এ কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় এ কোম্পানি শেয়ার লেনদেন। তবে কোম্পানিটি যদি তাদের ভুল স্বীকার করতো, তাহলে পরদিনই লেনদেন চালু করা সম্ভব হতো বলে জানিয়েছে ডিএসই।
অন্যদিকে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা কোনো ভুল করেনি। আইন অনুযায়ী তারা কাজ করছে। তাদের কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও ডিএসই লেনদেন বন্ধ রেখেছে। কারখানা পরিদর্শনে ডিএসই’র কাছে ২০/২৫ মিনিট সময় চাওয়া হয়েছিল মাত্র। কিন্তু তারা সাহযোগিতা না করে কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
ডিএসই’র ডিজিএম (লিস্টিং) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ডিএসই’র আইন অনুযায়ী কোম্পানি পরিদর্শনে বাধা দেওয়ায় তাদের লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে শুনানি চলাকালে ভুল স্বীকার করতে বলা হলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা না করায় লেনদেন চালু করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, ফার্মা এইডের কোম্পানি সচিব খন্দকার হাসান রেজা বলেন, ডিএসই’র ডাকা শুনানিতে আমাদের ভুল স্বীকার করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। ডিএসই বলেছিল, ‘আপনারা ভুল স্বীকার করেন, আমরা আপনাদের কোম্পানির লেনদেন চালু করে দেবো’। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, এখানে আমাদের ভুল কোথায়। আমরা ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের জন্য কিছুটা সময় চেয়েছিলাম মাত্র। এতে আমাদের কোনো ভুল থাকতে পারে না। কারণ, কারখানার ভেতরে প্রবেশের পর তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও আমাদের ভাবতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ডিএসই থেকে বলা হচ্ছে, সময় দিলে নাকি আমরা পণ্য সরিয়ে ফেলতাম বা মেশিন চালু করে কোম্পানি সচল দেখাতাম। কিন্তু আমরা তো মাত্র ২০/২৫ মিনিট সময় চেয়েছিলাম। এ সময়ের মধ্যে কি এগুলো সম্ভব হতো? তাই আমরা বুঝতে পারছি না, ডিএসই আসলে কি চাইছে।
নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে আমি অন্য একটি প্রকল্প সংযুক্ত হয়ে পড়েছি। তাছাড়া ডিএসই’র ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের পর কোম্পানির এ বিষয়গুলো দেখবে রেগুলেটর অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন (আরএডি)। কিন্তু এ বিভাগটি এখনো গঠন সম্পন্ন হয়নি। আশা করি, আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে এ বিভাগটির গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিষয়টি ওই বিভাগে স্থানান্তর হবে। তখন তারা তদন্ত করে বিষয়টি সুরাহা করবে।
তিনি আরও বলেন, কোম্পানি পরিদর্শনে ডিএসই’র প্রতিনিধি দলকে বাধা দেওয়ার জন্য তাদের শাস্তি পেতেই হবে। সেটা অর্থদণ্ডও হতে পারে আবার অন্য কোনো শাস্তিও হতে পারে।
খন্দকার হাসান রেজা বলেন, ১৯৮৮ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হয়। তালিকাভূক্তির ২৬ বছরের মধ্যে ডিএসই একবারও কারখানা পরিদর্শন করেনি। এখন এমন কি হলো যে কারখানা পরিবদর্শন করতেই হবে?
তিনি আরও বলেন, গত ৩১ বছর ধরে আমরা নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছি। হঠাৎ এমন কি হলো যে কোম্পানি পরিদর্শন করা প্রয়োজন? আর এ কার্যক্রমে সময়ের সামান্য হেরফের হওয়ায় কারখানা পরিদর্শন করতে না পারার অজুহাতে কোম্পানির শেয়ার ট্রেডিং বন্ধ করা হলো। ডিএসই’র এ ঘটনা রহস্যাবৃত।
এ সমান্য কারণে কোম্পানির শেয়ার ট্রেডিং বন্ধ করে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুন্ন না করে পুরোনো এ কোম্পানির জন্য বিকল্প চিন্তা করা যেত এবং এতে বর্তমানের জটিলতা এড়ানো যেত বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৪