ঢাকা: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হওয়ায় হতাশ ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।
মূলত ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩ সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ায় কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর হলো।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি যদি সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার লভ্যাংশ দেয়, তবে সে কোম্পানি ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত হবে। আর ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করলে সে কোম্পানির শেয়ার ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত হয়ে যাবে এবং কোনো লভ্যাংশ না দিলে সে কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সিম্মিলিত ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ হ ম আতাউল্লাহ নাঈম বাংলানিউজকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা অনেক আশা নিয়ে একটি কোম্পানির আইপিও শেয়ার কেনে। এমনকি তারা ভাবে তালিকাভুক্তির প্রথম বছরে অন্তত কোম্পানি তাদের ঠকাবে না। কিন্তু ফারইস্ট ফিন্যান্স প্রথম বছরেই নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করায় আমরা একটু হতাশ হয়েছি। ভবিষ্যতে কোম্পানিটি কেমন করবে সেটা নিয়েও আমাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম বছরেই যেহেতু নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে তাই ভাবতে হবে এ কোম্পানির পুঁজিবাজারে আসার কোনো যোগ্যতা ছিল না। কিন্তু ওপরের মহলের চাপে বা আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা তালিকাভুক্ত হয়ে এখন বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে আমি তাদের যথাযথ শাস্তি দাবি করছি।
কোম্পানির এ অবস্থার দায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) এড়াতে পারে না দাবি করে তিনি বলেন, কোম্পানিটি যখন তালিকাভুক্তির আবেদন করেছিল তখন তাদের খতিয়ে দেখা উচিত ছিল কোম্পানিটি আদৌ বাজারে আসার যোগ্য কি-না। কিন্তু তারা সেটা না করে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্ত করে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীকে হতাশ করেছে। এ জন্য কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বিএসইসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, সমাপ্ত অর্থবছরে তাদের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০ দশমিক ৫১ টাকা এবং শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৯ টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ-২০১৪) কোম্পানিটি আবার মুনাফায় ফিরেছে।
এ সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে মাত্র ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে মাত্র ০ দশমিক ০৩ টাকা। কোম্পানিটির পুঞ্চিভূত মোট লোকসানের পরিমাণ ৪ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে মূলত মানি মার্কেট গত দুই বছর ধরে নেতিবাচক থাকায় তাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে না। তাছাড়া শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থও কোম্পানিটি সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারনি। এ অর্থ সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারের দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে ভালো রিটার্ন (মুনাফা) পাওয়া যাবে। তখন বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব শেখ খালেদ জহির বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ২০১১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আবেদন করি। কিন্তু বাজারে আসতে আসতে আমাদের দুই বছরের বেশি সময় লেগে যায়। আর গত দুই আড়াই বছর ধরে মানি মার্কেটের অবস্থা খুব নাজুক রয়েছে। যার কারণে কোম্পানিটি ব্যবসায় তেমন সুবিধা করতে পারেনি। বিশেষ করে যেসব গ্রাহক তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন তারাও তা পরিশোধ করতে পারছেন না। তাই সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি লোকসানে ছিল। তবে এটা সাময়িক, আশাকরি ভবিষ্যতে আমরা আরও ভাল করবো।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তালিকাভুক্ত হওয়া বাধ্যতা মূলক। তাই আমরা তালিকাভুক্ত হয়েছি। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে সুবিধ হলো আমরা তাদের কাছ থেকে কোনো প্রিমিয়াম নেইনি। সুতরাং তাদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। নতুন অর্থবছরে আমরা আবার মুনাফায় এসেছি। আশা করি চলতি অর্থবছর শেষে বিনিয়োগকারীরা ভালো লভ্যাংশ পাবে।
শেয়ারবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের বিষয়ে তিনি বলেন, আইপিওতে আবেদনের পর থকে বাজারে আসতে আমাদের প্রায় দুই বছরের বেশি সময় লেগেছে। যে সময়টাতে মানি মার্কেটের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আবার আইপিওর টাকা কোম্পানি পেয়েছে গত নভেম্বর মাসে। যা এখনও সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। এ টাকা ব্যবহার করতে পারলে আগামী এক থেকে দেড় বছর পর ভালো রিটার্ন (মুনাফা) পাওয়া সম্ভব হবে। ফলে আগামীতে শেয়ারহোল্ডারা ভালো লভ্যাংশ পাবে।
ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির মোট ১৬ কোটি ৬১ হাজার ৭৮৬টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের কাছে রয়েছে ৭১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার।
বুধবার লেনদেনের শুরু থেকেই লক্ষ্য করা য়ায় এ কোম্পানির শেয়ার দর কমতে থাকে। এক পর্যায়ে শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে নেমে ৯ টাকায় লেনদেন হয়। তবে গত মঙ্গলবার ১২ টাকায় লেনদেন হয়েছিল এ শেয়ার।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানির প্রোফাইলে দেখা যায় গত ৫২ সম্পাহের মধ্যে এ কোম্পানির শেয়ার মূল্য ১১ থেকে ২৮ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। তবে গত এক বছরের গ্রাফ চিত্রে দেখা যায় এ কোম্পানির শেয়ার মূল্য সর্বোচ্চ ১৯ টাকায় লেনদেন হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৪