ঢাকা: পুঞ্জীভূত লোকসান থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে ২০ কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা। তবে কোনো কোনো কোম্পানির লোকসান প্রতিবছর কমলেও অধিকাংশ কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান বাড়ছে।
কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০ কোম্পানির মোট পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ১ হাজার ৮৯৭ কোটি ২৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকার বেশি। তবে কোনো কোনো কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় অনেক বেশি।
পুঞ্জীভূত লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলো হলো- খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের জেমিনি সি ফুড, জিল-বাংলা সুগার, শ্যামপুর সুগার, রহিমা ফুড, মেঘনা পেট ও মেঘনা কনডেন্স মিল্ক; পাট খাতের জুট স্পিনার্স ও নর্দার্ন জুট; প্রকৌশল খাতের আজিজ পাইপস, বিডি অটোকারস, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ও কে অ্যান্ড কিউ; বস্ত্র খাতের দুলামিয়া কটন ও অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ; ওষুধ ও রসায়ন খাতের ওরিয়ন ইনফিউশন ও ইমাম বাটন; ব্যাংকিং খাতের আইসিবি ইসলামী ব্যাংক; সিমেন্ট খাতের লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট এবং বিবিধ খাতের বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।
বিনিয়োগকারীদের দাবি কোম্পানিগুলো বাজার থেকে টাকা নিয়ে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীকে ঠকাচ্ছে। বাজারে আসার আগে কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মুনাফা দেখিয়েছে। পরবর্তীতে তারা লোকসান দেখাতে শুরু করে। ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
এ বিষয়ে মো. রফিকুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সহায়তায় কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তালিকাভুক্তির আগে যদি এসব সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে তবে ফটকা কোম্পানি বাজারে আসতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ফটকা কোম্পানি বাজারে আসা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) আরও কঠোর হতে হবে। বিশেষ করে কোম্পানিগুলো আর্থিক প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য পরিবেশন করছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
অন্যদিকে, যেসব কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকাসান রয়েছে সেগুলোকে কঠিন পর্যবেক্ষণে আনার কথা জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি যদি কোনো কোম্পানি লোকসান কাটিয়ে মুনাফায় ফিরতে না পারে বা ফেরার সম্ভাবনা না থাকে তবে সেগুলোকে বাজার থেকে অবলুপ্ত করানো উচিত।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএ) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাধারণত কোম্পানিগুলোর ইক্যুইটি ঋণাত্বক থাকার কারণে পুঞ্জীভূত লোকসান বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের যেসব কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান কমছে না বা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের চলমান অবস্থা বিবেচনা করা উচিত। ভবিষ্যতে যদি ওই কোম্পানিগুলোর মুনাফা করার কোনো সম্ভাবনা বা সামর্থ্য না থাকে তবে সেগুলো বিলুপ্ত করা উচিত। ’
পুঞ্জীভূত লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে- আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৯৫২ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার, আজিজ পাইপের ৪৩ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার, বিডি অটোকারের ৩ কোটি ২০ লাখ ৩০ হাজার, রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার, আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৭০ হাজার, কে অ্যান্ড কিউ কোম্পানির ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮০ হাজার, জেমিনি সি ফুডের ২ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার, জিল-বাংলা সুগার মিলের ১৫৩ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার, শ্যামপুর সুগার মিলের ২৪৫ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
এছাড়াও পুঞ্জীভূত লোকসানে রয়েছে রহিমা ফুডের ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার, মেঘনা পেটের ১৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক কোম্পানির ১০৬ কোটি ৬৩ লাখ, জুট স্পিনার্স কোম্পানির ১৪ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার, নর্দার্ন জুট কোম্পানির ১২ কোটি ০৯ লাখ ১০ হাজার, দুলামিয়া কটন মিলের ৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৭ হাজার, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার, ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৭ কোটি ৮২ লাখ ২০ হাজার, ইমাম বাটনের ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কোম্পানির ৩১ কোটি ৬২ লাখ ১০ হাজার এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ১৯৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৪