ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় করতে পারবে, সে বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। ফলে কোম্পানিগুলো আইপিওর টাকা তাদের ইচ্ছামতো ব্যয় করছে।
তবে ২০১২ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেও তা অঙ্কুরে নষ্ট হয়ে যায়। উদ্যোগ নেওয়ার দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির কথা জানাতে পারেনি বিএসইসি। এমনকি বিষয়টি ভুলে গেছে বিএসইসি।
উদ্যোগ নেওয়ার পর এটা নিয়ে কমিশনে আর কোনো আলোচনা হয়নি। ফলে চাপা পরে যায় আইপিওর অর্থ ব্যয়ের নীতিমালার উদ্যোগ। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসৎ কোম্পানি অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নিয়ে বাজার থেকে টাকা নিয়ে ঋণ পরিশোধ করেছে। যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোনো কাজে লাগেনি। বরং লোকসানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে কমিশন সভায় আইপিওর অর্থ খরচের নীতিমালা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। ওই সভায় দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বিষয়টি আজও আলোর মুখ দেখেনি। দুই বছর পার হওয়ার পর আইপিওর অর্থ ব্যয়ের নীতিমালার বিষয়টি খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থাই ভুলে গেছে।
বিএসইসির ওই সভার ‘ইস্যুয়ার কোম্পানিসমূহ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ কোন কোন খাতে ব্যবহার করতে পারবে তার নীতিমালা প্রণয়নের জন্য কমিশন সভায় দুই সদস্য বিশিষ্ট (ফরহাদ আহমেদ ও এটিএম তারিকুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালকদ্বয়ের সমন্বয়ে) একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি আদেশ জারির পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল।
তবে এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল কি-না বা এ বিষয় নিয়ে আদৌ আর কাজ করা হয়েছিল কি-না তা স্মরণ করতে পারছেন না কমিটির সদস্য ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাকে অনেক কমিটিতেই রাখা হয়। কিন্তু সবকিছু করা সম্ভব হয় না। কবে এ কমিটি করা হয়েছে তা আমার মনে নেই। তবে এ বিষয়ে কমিশন মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ’
এ বিষয়ে মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘অনেক আগে এ বিষয়ে একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছিল কি-না সেটা আমাদের খেয়াল নেই। এরপর থেকে এ বিষয় নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি। ’
তিনি আরও বলেন, আইপিওর অর্থ ব্যয়ের নীতিমালা করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ আমরা যদি আইপিওর অর্থ ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করে দেই, তবে কোনো কোম্পানি আর বাজারে আসবে না। তাই এটা নিয়ে আর কাজ করা হয়নি। ’
তবে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, আইপিওর অর্থ ব্যয়ের নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বিএসইসি প্রসপেক্টাসের ওপর নির্ভর করেই আইপিওর অনুমোদন দিচ্ছে। আর এ সুযোগে কোম্পানিগুলো আইপিওর অর্থ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে, কোম্পানিগুলো ব্যবসায়িক পরিধি না বাড়িয়ে শুধুমাত্র ঋণ পরিশোধ করছে। এতে কোম্পানির সাময়িক সুবিধা হলেও কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক পরিধি বাড়ছে না। ফলে কোম্পানির মুনাফা না বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক আবু আহমদ বলেন, ‘বিএসইসি আইপিওর অর্থ ব্যয় নিয়ে আলাদাভাবে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করেনি। বিএসইসি প্রসপেক্টাস অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে আইপিওর অনুমোদন দেয়। কিন্তু কোম্পানিগুলো আদৌ প্রসপেক্টাস অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করছে কি-না তা অনুসন্ধান করা হয় না। ’
তিনি বলেন, ‘আইপিওর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য এ নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। বিএসইসিকে এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৪