ঢাকা: ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বর্তমানে ৩০ লাখ বিনিয়োগকারীকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারদের জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ মত দেন তারা।
তাদের দাবি এবারের বাজেটে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ কোনো প্রণোদনা না থাকার বিষয়টি তাদের সঙ্গে উপহাস করার মতো। যা বাজারে সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অবশ্য উত্থাপিত বাজেটে ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণ (ডিমিউচ্যুয়ালাইজড) পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জসমূহের ৫ বছরের কর অব্যাহতি এবং বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড আয়ের করমুক্ত সীমা ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও পুঁজিবাজারের প্রয়োজনের তুলনায় এটা খুবই নগন্য। কারণ করমুক্ত ডিভিডেন্ড আয়ের যে সীমা প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কোনো লাভ হবে না।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজেটে যে দু-একটি সুবিধা পুঁজিবাজারের জন্য দেওয়া হয়েছে তা সার্বিক বিবেচনায় অতি নগণ্য। এ সুবিধার আওতায় মুষ্টিমেয় বিনিয়োগকারী লাভবান হলেও অধিকাংশই হবেন সুবিধা বঞ্চিত। ’
বিনিয়োগকারীদের দাবি আমরা যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি তার সঙ্গে সমন্বয় রেখে এই সীমা ৫০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা মাত্র ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারদের জন্য কোনো বেশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ নাঈম বাংলানিউজকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারদের আকর্ষণ করতে পারেনি। এটা বিনিয়োগকারীদের জন্য পরিহাসের সামিল। প্রায় প্রতি খাতের জন্য বিশেষ প্রণোদনা থাকলে এ খাতে নেই। তাই গত তিন বছর ধরে যেসব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা এ বাজেট থেকে কিছুই পাবে না। বরং তাদের মুলধনী আয়ের ওপর কর চাপানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএ) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির মতো যদি তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর কমানো হতো তবে তা পুঁজিবাজারের জন্য ব্যালেন্স হতো। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার জায়গাটা আবারও সৃষ্টি হতো এবং বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পরতো।
এদিকে বাজেটকে স্বাগত জানালেও বাজার উন্নয়নে যথেষ্ঠ নয় বলে জানিয়েছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা জানান, এবারের বাজেট পুঁজিবাজারের জন্য কতটুক ইতিবাচক বা নেতিবাচক তা লেনদেন শুরু হলেই বুঝা যাবে। তবে আমরা আশা করি বাজেট পাস করার আগে পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট পূর্ণাঙ্গ পুঁজিবাজার বান্ধব হয়নি। এমনকি অর্থবিলের মাধ্যমে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স জুড়ে দেওয়ার মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গেইন ট্যাক্স সীমা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে আমারা সব সময় বলে এসেছি এটি ৫০ হাজার হলে ভালো হতো। আমরা অর্থবিল পাস হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাশা করবো এটি বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হবে। কারণ এটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
আব্দুল মজিদ ১৯৯৬ সালের পুঁজিবাজার ধসকে টাইফয়েড এবং ২০১০ সালের ধসকে জন্ডিসের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের জন্য ভালো পথ্য দরকার।
সিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির ট্যাক্স সাড়ে ৩৭ থেকে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ট্যাক্স ২৭ শতাংশ ছিল, তাই রয়েছে। এটি পুঁজিবাজারের জন্য নিরুৎসাহব্যঞ্জক। তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্যও ট্যাক্স একই হারে কমানো দরকার ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৪