ঢাকা: শেয়ারবাজারে যেন মন্দাভাব কাটছেই না। সাময়িকভাবে লেনদেন ভাল হলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না।
গত সাড়ে ৩ বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং এক্সচেঞ্জ সমূহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তাতেও স্থিতিশীল হয়নি বাজার। মূলত ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া, বিনিয়োগকারীর পোর্টফলিওতে ইক্যুইটি ঋণাত্বক হওয়া, বিনিয়োগকারদের লোকসান বৃদ্ধি পাওয়া, সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ না বাড়ায় লেনদেন বাড়ছে না। ফলে হাউজগুলোরও আয় কমে তলানিতে ঠেকেছে। আর এ কারণেই বন্ধ হচ্ছে শাখা অফিসগুলো।
জানা যায়, ২০১০-২০১১ সালে শেয়ারবাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী ছিল তখন হাউজগুলো বিভাগীয় শহর, জেলা এবং কেউ কেউ গ্রাম পর্যায়ে তাদের শাখা খোলে। কিন্তু বাজারে ধস নামার পর থেকে কমতে থাকে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর আয়। কর্মী ছাঁটাই করে ব্যয় কমিয়ে কিছুদিন চলতে পারলেI পরবর্তীতে আর সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে বন্ধ হতে থাকে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর শাখা। তবে হাতে গোনা কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ ব্যতীত অধিকাংশ হাউজের ব্যবসা এখন ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে যে শাখাগুলো ইতোমধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে সেখানের বিনিয়োগকারীদের ফোনে বা পার্শ্ববর্তী অন্য শাখায় শেয়ার কেনা-বেচার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
২০১০-২০১১ সালে পুঁজিবাজার ধসের ইব্রাহিম সিকিউরিটিজের মোট ১১টি শাখার মধ্যে ঢাকার বনানী এবং ইসলামপুরের দুটি শাখা বন্ধ করে দেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক ইব্রাহিম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দুটি শাখায় ক্রমাগত লোকসান হওয়ায় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বর্তমানে মূল অফিস সহ ১০টি অফিসে লেনদেন চলছে। বর্তমানে লেনদেনে মন্দা থাকলেও আগামীতে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছি।
এদিকে, এ পর্যন্ত কতটি সিকিউরিটিজ হাউজের শাখা বন্ধ হয়েছে তার কোনো তথ্য নেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ডিএসই’র এক পরিচালক বাংলানিউজকে বলেন, মূলত ব্যয় মেটাতে না পেরে এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মালিকরা। আর শাখা অফিস বন্ধ করে দিলেও তা স্টক এক্সচেঞ্জ বা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবহিত করা হয় না। তাই এর কোনো হিসাব আমাদের কাছে নেই।
তিনি আরও বলেন, শাখা অফিস বন্ধ করলে ডিএসইকে অবহিত করার নিয়ম থাকলেও তারা সেটা করছে না। আবার কোনো বিনিয়োগকারী বা কোনো প্রতিষ্ঠান হাউজের শাখা বন্ধের অভিযোগও করছে না। তাই আমরা জানতে পারছি না কে কে তাদের হাউজের শাখা বন্ধ করছে। অবশ্য এটা সাময়িক বন্ধও থাকতে পারে। বাজার পরিস্থিতি ভাল হলে তারা হয়তো আবারও অফিস চালু করবে।
ডিএসই’র তথ্য মতে, ২০১০-২০১১ সালে ডিএসই’র ২৩৮টি সদস্য ব্রোকারেজ হাউজের মোট ৭৫০টি বর্ধিত অফিস এবং শাখা অফিস ছিল। অবশ্য পরে আরও ১২টি ব্রোকারেজ হাউজের অনুমোদন দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে সেগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নতুন ব্রোকারেজ হাউজগুলোও কয়েকটি শাখা অফিস খুলছে।
সব মিলিয়ে ২৫০টি ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মূল অফিস, বর্ধিত অফিস এবং শাখা অফিস মিলিয়ে এক হাজারের বেশি অফিস ছিল। কিন্তু ব্যবসায় ধারাবাহিক ধস নামায় শতাধিক শাখা অফিসে ইতিমধ্যে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে বিভাগীয় বা জেলা পর্যায়ে যেসব শাখাগুলো খোলা হয়েছিল সেগুলো।
ডিএসই ও সিএসই’র সদস্য প্রথম সারির ৫/৬টি সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, বর্তমানে অনেক বিনিয়োগকারীর পোর্টফলিওতে ইক্যুইটি ঋণাত্বক হয়ে গেছে। ফলে তারা এখন আর লেনদেন করতে না পারায় হাউজগুলোর কমিশন সংগ্রহ হচ্ছে অনেক কম। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা লোকসানে থাকায় শেয়ারও বিক্রি করতে পারছেন না। আবার নিটিং করে লোকসান কমিয়ে আনার পুঁজিও নেই। ফলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আয় কমে লোকসানে পরেছে। তাই বাধ্য হয়েই শাখা বন্ধ করে দিচ্ছেন মালিকরা।
আরও জানা যায়, ২০১০ সারে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি যখন খুবই ভাল ছিল তখন ডিএসই’র দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। সে সময় গড়ে প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউজে প্রায় ৩০ কোটি টাকা লেন-দেন হওয়ায় তাদের আয়ও বেশি হতো। এ ধারাবাহিকতায় ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছিল। এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর শাখা খোলা হয়।
কিন্তু বর্তমানে ডিএসইতেই গড়ে লেনদেন ২শ থেকে ৪শ কোটি টাকা। আর গড়ে ব্রোকারেজ হাউজ প্রতি লেন-দেন মাত্র এক থেকে দেড় কোটি টাকা যা থেকে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আয়ও কমে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৬ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৪