ঢাকা: বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও তাদের প্লেসমেন্ট শেয়ার বরাদ্দে টালবাহানা করার অভিযোগ ওঠেছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্লেসমেন্ট শেয়ার না দিয়ে উল্টো ওইসব বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ পাওয়া শেয়ার ফেরত দিতে বলেছে কোম্পানিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে কয়েকজন বিনিয়োগকারী এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগকারীদের একজন মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি গত ১৯ জুন বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ করেন।
তিনি অভিযোগে বলেছেন, ২০১০ সালের ৮ আগস্ট সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে দুটি আবেদনের মাধ্যমে এক লাখ করে মোট দুই লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার বরাদ্দ চান। এর বিপরীতে কোম্পানির নামে প্রতিটি শেয়ার মূল্য ১০ টাকা হিসেবে মোট ২০ লাখ টাকা জমা দেন তিনি। দুটি চেকের মাধ্যমে ১০ লাখ করে মোট ২০ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়। ইস্টার্ন ব্যাংকের ওই চেক নম্বর দুটি হলো- এসবি ৭৪০৭৪২৯ এবং এসবি ৭৪০৭৪৩০। ইস্টার্ন ব্যাংক মতিঝিল শাখার মাধ্যমে ২০১০ সালের ১১ আগস্ট কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখায় পাঠানো হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, পরবর্তীতে কোম্পানি ডাকযোগে আবেদনকারীর নামে এসবি ৭৪০৭৪২৯ চেকের বিপরীতে মাত্র ১ লাখ শেয়ার ইস্যু করে এবং ২০১১ সালে লভ্যাংশ বাবদ আরও ১০ হাজার শেয়ার ইস্যু করে। তবে এসবি ৭৪০৭৪৩০ চেকের বিপরীতে আজ পর্যন্ত কোনো শেয়ার ইস্যু করা হয়নি। তাই তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন বিএসইসিকে।
মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্লেসমেন্ট শেয়ার নেওয়ার জন্য টাকা জমা দেওয়ার পর আমি নিজে কয়েকবার কোম্পানিতে গিয়েছি। এছাড়া ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর বাকি দশ লাখ টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার দেওয়ার আবেদন করেছিলাম। পরবর্তীতে কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহমুদুল হাসান দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু আজও তারা আমাকে প্লেসমেন্ট শেয়ার দেয়নি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও আইপিওর টাকা জমা নেওয়া শেষ হলে কোম্পানির পক্ষ থেকে নানা টালবাহান শুরু হয়। এমনকি আমাকে দেওয়া এক লাখ শেয়ার ফেরত দিয়ে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তা না হলে আমাকে বিপদে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ’
অভিযোগের ব্যাপারে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্ল্যাক মেইলিং, আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার জন্য কেউ এসব অভিযোগ করে থাকতে পারে। তবে কেউ যদি কোম্পানি বরাবর টাকা জমা দেওয়ার রশিদ (মানি রিসিট) দেখাতে পারেন তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
তিনি বলেন, যারা যে পরিমাণ শেয়ারের আবেদন করেছিল তাদের সেপরিমাণ শেয়ার দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের কাছে একই নামে ২ লাখ শেয়ারের কোনো আবেদন আসেনি। তাছাড়া আমরা যদি কাউকে তার আবেদন অনুযায়ী প্লেসমেন্ট বরাদ্দ না দিয়ে থাকি তবে তিনি গত তিনটি বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) কেন অভিযোগ করেননি?
তবে সুহৃদ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি বিনিয়োগকারীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
অন্যদিকে, মো. শাহ জামান নামের আরেক বিনিয়োগকারী ২০১০ সালের ৯ আগস্ট কোম্পানি বরাবর ১ লাখ ২০ হাজার প্লেসমেন্ট শেয়ার নেওযার আবেদন করলেও তাকে মাত্র ৬০ হাজার শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি উত্তরা ব্যাংকের ফুলবাড়িয়া শাখায় দুইটি চেকের মাধ্যমে মোট ১২ লাখ টাকা কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছিলেন।
শাহ জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখন কোম্পানির পক্ষ থেকে বিভিন্ন মারফত আমাকে বরাদ্দকৃত শেয়ার ফেরত দিয়ে টাকা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তা না হলে আমাকে বিভিন্নভাবে বিপদে ফেলা হবে ও হেনস্ত করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ’
এসব অভিযোগ সম্পর্কে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও কমিশন মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কখনও প্লেসমেন্ট বিক্রির অনুমোদন দেই না। তারপরও বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা মাহফুজুর রহমান ভুঁইয়াকে ডেকেছিলাম। সবকিছু শুনে কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগটি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে যদি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৪