ঢাকা: একের পর এক অনিয়ম করেও বহাল তবিয়াতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) জিএম খন্দকার আসাদউল্লাহ।
১৯৯৬ সালে শেয়ারকেলাঙ্কাকারী ও আইসিবির চেক নিয়ে অনিয়ম, ১৯৯৮ সালে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বাজারে শেয়ারের দাম প্রভাবিত করার চেষ্ঠা এবং আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ শেয়ার ব্যবসার করার মতো অনিয়মের প্রমাণ পেয়েও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, খন্দকার আসাদউল্লাহর প্রথম অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৯৬ সালে ডিএসইর ক্লিয়ারিং হাউজে দায়িত্বে পালনের সময়। ওই বছর ডিএসই’র সাবেক সদস্য টি মাসফুকে শেয়ার ক্লিয়ারিং এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ করে দেন আসাদ। এর বিনিময়ে টি মাসফুর কাছ থেকে গ্রহণ করেন আর্থিক সুবিধা।
তবে প্রথম দফায় আর্থিক সুবিধা নেওয়ার পর আবার আর্থিক সুবিধা চাইলে তা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেন টি মাসফু।
এরপর আসাদের আর্থিক সুবিধা চাওয়ার অডিও রেকর্ডিংসহ ডিএসই বোর্ডের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন টি মাসফু। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয় আসাদউল্লাহকে।
এরপর ডিএসইর সদস্যদের প্রভাবশালী একটি গ্রুপের যোগসাজশে প্রায় ৬ মাস সাসপেন্ড থাকার পর আবার ক্লিয়ারিং হাউজের দায়িত্ব ফিরে পান ডিএসইর এই কর্মকর্তা। দায়িত্ব ফিরে পেয়ে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে আবার অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন আসাদউল্লাহ।
সে সময় আইসিবির লেনদেন ক্লিয়ারিং নিয়ে অনিয়ম করেন তিনি। লেনদেন ক্লিয়ারিংয়ের জন্য আইসিবির কাছ থেকে চেক নিয়েও তা অস্বীকার করেন আসাদ এবং আইসিবির কাছে আবার চেক চান। এ পরিস্থিতিতে আইসিবি থেকে একই লেনদেনের জন্য আরও একটি চেক দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আইসিবির অডিটে একই লেনদেনে দুটি চেক দেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর আইসিবি থেকে ডিএসইর কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলে ডিএসইর ম্যানেজমেন্ট অনিয়মের জন্য আসাদউল্লাহকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে।
এরপরও থেমে থাকেনি আসাদউল্লাহর অনিয়ম। ডিএসইতে অটোমেশন হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে অবৈধভাবে শেয়ারের দাম প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন তিনি। এজন্য অনৈতিকভাবে প্রবেশ করেন আইটিতে। সে সময় মার্কেটের চেয়ে কম দামে শেয়ার বিক্রয় এবং মার্কেটের চেয়ে বেশি দামে শেয়ার ক্রয়ের অভিযোগে আবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ডিএসই’র এই কর্মকর্তাকে। এ পর্যায়েও প্রায় ৬ মাসের মতো সাময়িক বরখাস্ত থাকার পর আবারও স্বপদে ফিরে আসেন আসাদউল্লাহ।
অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে আসাদউল্লাহর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ডিএসই’র একটি সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার আসাদউল্লাহকে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরেই অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসছেন ডিএসইর সদস্যদের প্রভাবশালী একটি গ্রুপ। ফলে একাধিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পরও ডিএসইর এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বরং এই গ্রুপের যোগাসাজশে ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল তাকে ডিজিএম থেকে জিএম পদে পদোন্নতি দিয়ে পুরুস্কৃত করা হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, জিএম পদে চাকরি করলেও বছরের বড় একটি অংশ দেশের বাইরে কাটান আসাদউল্লাহ। চলতি বছরে ইতিমধ্যে জানুয়ারি ও মে দুই মাস দেশের বাইরে কাটিয়ে এসেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, কে কার ছত্রছায়ায় আছে সেটি কোনো বিষয় না। অনিয়ম করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএসই এই পরিচালকের মতে, কোনো অনিয়মের জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করলে, পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি অথবা অন্য কেউ আবার অনিয়ম করার সাহস পাবে না।
এদিকে সম্প্রতি বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে খন্দকার আসাদউল্লাহ সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে নিজের ও স্ত্রীর নামে অবৈধ শেয়ার ব্যবসা করেছেন। অবৈধ শেয়ার ব্যবসার মাধ্যমে ডিএসইর এই কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজার থেকে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন।
বিএসইসি তদন্তে পেয়েছে খন্দকার আসাদউল্লাহ এবং তার স্ত্রী লাজুল লায়লার নামে তিনটি মার্চেন্ট ব্যাংকে শেয়ার ব্যবসা করেন। তার স্ত্রীর বিও হিসাব নম্বর ৪০০৫০০০১৫০২২৫।
আর খন্দকার আসাদ যে তিনটি মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে শেয়ার ব্যবসা পরিচালনা করেছেন তার মধ্যে এবি ইনভেস্টমেন্টে ৭২৭ নম্বর কোডে, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টে ১৫৯ নম্বর কোডে এবং এনসিসি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে ১৬০ নম্বর কোডের মাধ্যমে লেনদেন করেন।
খন্দকার আসাদউল্লাহর অবৈধ শেয়ার লেনদেনের বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা বাংলানিউজকে বলেন, বিএসইসি থেকে খন্দকার আসাদউল্লাহর অবৈধ শেয়ার ব্যবসার বিষয় ডিএসইকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। বিএসইসি থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবিষয়ে বিএসইসি যে ধরণের নির্দেশনা দিবে সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৪