ঢাকা : শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন দেওয়া নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
সম্প্রতি পাইপলইনে থাকা কয়েকটি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় এই উদ্বেগ প্রতিষ্ঠানটির।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছ, বর্তমানে ৪৫টি কোম্পানি আইপিওতে আসার জন্য অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সম্প্রতি প্রস্তাবিত ডিএসইর ব্রোকার হাউজগুলোর সংগঠনের এক সভায় কয়েকটি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন না দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসর কাছে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডিএসই মনে করছে, পাইপ লাইনে থাকা ৫/৭টি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে এবং তাদের আইপিও প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে। মূলত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং স্থিতিশীল বাজার প্রতিষ্ঠার জন্য ডিএসই এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ওই সভায় ব্রোকারেজ হাউজগুলো নিষ্ক্রিয় কোম্পানিগুলোর (ইস্যু) বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার হয়ে ওঠেছে। এমনকি তারা বিএসইসির আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয় ডিএসইর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ পাইপলাইনে থাকা নতুন কোম্পানির আইপিও প্রসপেক্টাস পর্যালোচনা করবে। এমনকি ডিএসইর পর্ষদ কিছু কোম্পানির মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রমাণ বিএসইসিকে অবহিত করবে বলে ডিএসইর এক পরিচালক বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ডিএসই পর্ষদ যেসব কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি মজবুত ও ভালো ব্যবস্থাপনা রয়েছে সেসব কোম্পানির আইপিও দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার জন্য ইতিবাচক সুপারিশ করবে।
ডিএসইর অন্য এক পরিচালক জানান, সভায় এক সদস্য বলেছেন প্রধান শেয়ারবাজার হিসেবে ডিএসইর পর্যালোচনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমলে নিক আর না নিক তাদের উচিত বিতর্কিত কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের বিরুদ্ধে কথা বলা। বিশেষ করে তিনি সম্প্রতি ফার কেমিক্যাল ও খুলনা প্রিন্টিং কোম্পানির আইপিও অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ওই সদস্য প্রশ্ন তোলেন, ফার কেমিক্যালের দুই পরিচালক আরএন স্পিনিং কোম্পানির রাইট শেয়ার জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এমনকি বিএসইসি ওই দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। কিন্তু কোম্পনিটি তাদের প্রসপেক্টাসে বিষয়টি উল্লেখ করেনি। তারপরও বিএসইসি এ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন করেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, ডিএসইর এ ধরনের সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। এটা করা গেলে বিনিয়োগকারীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, ডিমিউচ্যুয়ালাইজড ডিএসইতে স্বাধীন পরিচালকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সুতরাং তারা যদি ডিএসইর পর্ষদের অনুমোদন সাপক্ষে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে কোনো বিষয়ে সুপারিশ করে তবে বিএসইসি তাদের পর্যালোচনা আমলে নিতে বাধ্য হবে।
সভায় ডিএসইর কয়েকজন সদস্য আরও অভিযোগ করেন, সম্প্রতি বিএসইসি কয়েকটি কোম্পানি আইপিও অনুমোদন করেছে। যাদের অফার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। কিন্তু এ কোম্পানিগুলো শেয়ার প্রতি ৫ টাকা পাওয়ারও যোগ্য না।
এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা বলেন, আর্থিক প্রতিবেদন ভুল তথ্য পরিবেশন করায় ডিএসইর পর্ষদের মাধ্যমে কয়েকটি কোম্পানির বিষয়ে বিএসইসিতে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের প্রতি ডিএসই দায়বদ্ধতার দিক বিবেচনা করে কোম্পানির প্রসপেক্টাসে বিভিন্ন ফাঁক-ফোকর (লুপহোলস) প্রকাশ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই সভায়।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকে যেসব কোম্পানি আইপিওতে আসার জন্য প্রসপেক্টাস জমা দেবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া কোম্পানিগুলোর আদৌ কোনো অস্তিত্ব আছে কি-না তার প্রতিবেদন তৈরি করে ডিএসইর বোর্ডে জমা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৪